মাওয়া ঘাট (Mawa Ferry Ghat)
দক্ষিণবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসাবে বরাবরই মাওয়া ঘাট দিয়ে যাত্রীরা চলাফেরা করতেন। তবে নবনির্মিত পদ্মা সেতুর কারণে কিছুদিন ধরে মাওয়া ঘাট পর্যটকদের আনা গোনা বাড়ছে । নিজস্ব গাড়ির পাশাপাশি ঢাকা থেকে বাসযোগে মাওয়ায় যাওয়া যায়। পদ্মার বুকে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের সেতু। মাওয়া ফেরি ঘাট পর্যটকদের জন্য নদী ভ্রমণ ও ইলিশ ভোজন এর জন্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা। দেশের বিভিন্ন স্থআন থেকে ইলিশ খাওয়ার জন্য অনেকেই মাওয়া ঘাটে আসেন। ঢাকার কাছে অবস্থান হওয়ায় চট করে পদ্ম পাড়ের এই মাওয়া ফেরি ঘাট এক দিনেই ঘুরে আসা যায়।
নিকলি হাওর
দ্বিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির বুকে নৌকার ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ পেতে চাইলে যেতে হবে নিকলী হাওরে (Nikli Haor)। নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ সদর থেে নিকলি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। জলের মাঝে দ্বীপের মত বেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা এই সব কিছুর অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে নিকলীর অপরূপ ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন। গ্যারেন্টি দিয়ে বলা যায়, আপনার জীবনে মনে রাখার মত একটি ভ্রমণ হিসাবে গেঁথে থাকবে।
বরিশালের শাপলা বিল
এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর। পুরো বিলজুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে 'শাপলা বিল'। সবাই এই নামে ডাকে উত্তর সাতলা গ্রামটিকে।বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে।সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
মৈনট ঘাট (Moinot Ghat)
ঢাকার কাছেই দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরের এ জায়গাটি পরিচিত পেয়েছে 'মিনি কক্সবাজার' হিসাবে। কারণ নদী তীরে বালুকাবেলা আর পদ্মা নদীর ঢেউ মিলে অনেকটা সমুদ্র তীরের আদল আসে। মৈনট ঘাট থেকে দূরে তাকালে সমুদ্রের বেলাভূমির খানিকটা আভাস মেলে। দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় দুলতে থাকা নৌকা, প্রায় ডুবুডুবু স্পিডবোটের ছুটে চলা, পাড়ে সারিবদ্ধ বাহারি রঙের ছাতার তলায় পেতে রাখা হেলান-চেয়ার। ঘাটের কাছাকাছি দুই পাশে হোটেলের সারি। সেগুলোর সাইনবোর্ডে ঘাটের পরিচিতি ‘মিনি কক্সবাজার’।
ঢাকা থেকে বাস বা সিএনজি যোগে মৈনট ঘাট যাওয়া যায়। মৈনট ঘাটের বয়স কত, তা কেউ সঠিক বলতে পারে না। তবে মিনি কক্সবাজার হিসেবে তার এই নয়া পরিচিতি বছর দুই হলো, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে।
চাঁদপুর ও চাঁদপুরের চর
ঢাকা থেকে আরামদায়ক লঞ্চে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সুযোগ থাকায় অনেকের কাছে ভ্রমণের আরেকটি পছন্দের জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছে চাঁদপুর। চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড থেকে কয়েক মিনিটের নদীপথ পদ্মার চর। বছরে ছয় মাস যেখানে চর জেগে থাকে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এবং গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত চরের সৌন্দর্য মন কাড়ে সবার। বিশেষ করে নতুন করে জেগে ওঠা পদ্মার চর। অনেকে এ চরকে আখ্যায়িত করেন ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে। বিশাল জলরাশির ছোট ছোট ঢেউ আর বালুকাময় বিস্তীর্ণ চরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই আসেন এখানে।
দেবতাখুম
বান্দরবানের অনেক জায়গা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও নতুন একটি আকর্ষণের নাম দেবতাখুম এলাকা। দেবতাকুম বা দেবতাখুম (Debotakhum) বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। বান্দরবানকে বলা যায় জলপ্রপাতের স্বর্গরাজ্য। এডভেঞ্চারপ্রেমীরা ঘুরতে পছন্দ করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের এই পাড় থেকে ওই পাড়ে। বছরজুড়ে ছুটে যান পাহাড়ের অলিত-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সৌন্দর্যের খোঁজে। বান্দরবানে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মনি মুক্তোর মধ্যে নতুন করে জনপ্রিয় হওয়া একটি ভ্রমণ গন্তব্য হলো এই দেবতাখুম। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২০ কিঃমিঃ দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। খুমের গভীরতা এখানে ৫০ থেকে ৭০ ফিট। আর দৈর্ঘে ৬০০ ফিট। এটি বান্দরবানের আরেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশি ওয়াইল্ড। পাহাড়ে ট্রেকিং বরাবরই রোমাঞ্চকর। এই রোমাঞ্চের হাতছানিতে আপনি যখন ট্রেকিং করে দেবতাখুম এসে পৌঁছাবেন, প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দুই পাশে উঁচু পাথুরে ঢাল, কলকল শব্দে বয়ে যাও পাহাড়ি নদী, আর শুনশান জলপ্রপাতের পাড়ে নিজেকে আবিষ্কার করবেন ভিন্ন এক স্বর্গীয় পরিবেশে! যে পরিবেশে নিজেকে বিলীন করে দিতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে।