ফি বছর পুজোর মরশুমে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের পুজোর ‘উপহার’ হিসেবে ইলিশ রফতানিতে ঢালাও ছাড় দেয় বাংলাদেশ। এবারও পুজোর আগে ৪০ দিনের মেয়াদে রাজ্যে পদ্মার ইলিশ ঢোকার ছাড়পত্র হাতে এসেছিল। খাতায়-কলমে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৯৫০ টন ইলিশ এ দেশে রফতানির অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু বাস্তবে সেই মেয়াদ ১১ অক্টোবরই ফুরিয়ে যায়। ১২ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ফলে পুজো ও লক্ষ্মী পুজোয় বাংলাদেশ থেকে এদেশে ইলিশ রফতানি হয়নি। তবে এবার নতুন করে বাংলাদেশের ইলিশ রাজ্যে ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরতে জলে নেমেছেন বাংলাদেশের জেলেরা।
প্রসঙ্গত ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের সারা বাংলাদেশে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই ইলিশ ধরা শুরু হয় নদী-সাগরে। জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে ইলিশসহ অন্য মাছ শিকারে এখন ব্যস্ত। বাংলাদেশের মাছ ঘাটগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে ও আড়তদারেরা। এবার ইলিশ বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সেদেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের মৎস্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বছর ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার টন। গত ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হয়। যার ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ইলিশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার বড় ইলিশও ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিন পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল দেশটিতে। এবার নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর থেকেই বিপুল পরিমাণ ইলিশের জোগানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের বাজারগুলিতে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পাড়ের বিভিন্ন মাছের বাজার। দামও কম বলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে। পায়রা, বালেশ্বর ও বিষখালি নদীর মোহনায় জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশের ওজন ৯০০ গ্রামের উপর। ইলিশের বাড়ি নামে পরিচিত চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশ সরবরাহ।
ফের ভারতে ঢুকবে পদ্মার ইলিশ?
বাজারে প্রচুর ইলিশ ওঠায় বাংলাদেশে দাম কিছুটা কমেছে। এদিকে পুজোর আগেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার কথা ছিল প্রায় ৪ হাজার টন ইলিশের। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছিল মাত্র ৫৬০ টন ইলিশ। ফলে মাথায় হাত পড়ে যায় মাছ আমদানিকারকদের। এবার ইলিশের ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর যাতে বাকি পরিমাণ ইলিশ আনা যায় তার অনুরোধ জানিয়ে, ভারত-বাংলাদেশ হাই কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছে এরাজ্যের মাছ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের আশা মাছ আমদানিতে আবার অনুমতি দেবে বাংলাদেশ সরকার। আশা করা হচ্ছে কালীপুজোর আগেই ফের ভারতে ইলিশ আমদানী শুরু হবে।