‘ইলিশের বাড়ি’ নামে খ্যাত বাংলাদেশের চাঁদপুর। সেই চাঁদপুরেই এবার ইলিশের দাম কমছে না বলে অভিযোগ ছিল । ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানেও ইলিশের দাম আগুন। শোনা যাচ্ছিল ভরা মরশুমেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও মাছ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। জাল ফেলে তারা যে পরিমাণ মাছ পাচ্ছে, তাতে লাভ দূরে থাক, নৌকার জ্বালানি তেলের খরচই উঠে আসছে না। গত মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষে ১ মে থেকে জেলেরা নদীতে নামে। মরশুম শুরু হলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চাঁদপুরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন। এমনটাই জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
চাঁদপুরে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, , বিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রথম এবং শতভাগ ইলিশ উৎপাদনের মধ্যে বাংলাদেশে ৮৬ ভাগ ইলিশ উৎপাদন হয়। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের প্রতি সবার দৃষ্টি থাকে। তবে এবার ভরা মরশুমেও চাঁদপুরে ইলিশের দেখা নেই। বাংলাদেশের ইলিশ মাছের অন্যতম পাইকারি বাজার চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাট বাজার। এখানে গত বছরও প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে। কিন্তু এবার মাছঘাট বাজারে ইলিশের আকাল। প্রতিদিন এখানে এক থেকে দেড় হাজার মণের বেশি ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে না। তবে দামও অনেক বেশি। ইলিশের দাম কমানোর বিষয়ে সরকার বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন ক্রেতা-ভোক্তারা।
ভরা মরশুমেও চাঁদপুরে ইলিশের দেখা নেই
এদিকে বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গের বাডারেও আকাশছোঁয়া ইলিশের দাম। পদ্মার ইলিশ তো দূরের কথা, ভরা বর্ষার মরশুমে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলাগুলির বাজারে এখনও সেভাবে ইলিশের আমদানি দেখা যাচ্ছে না এবার। বাজারে যা মিলছে, তার বেশিরভাগ খোকা ইলিশ বা মায়ানমার থেকে আমদানি করা। চড়া দাম দিয়ে সেই ইলিশ কিনে হাত কামড়াতে হচ্ছে। কারণ, সেই স্বাদ উধাও! তাই বাজার-বাবুরা পদ্মার ইলিশের খোঁজ করছেন এবং বলা বাহুল্য, হতাশ হচ্ছেন। মাসখানেকের মধ্যে বা পুজোর আগে কি পদ্মার ইলিশ আসার সম্ভাবনা আছে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ইলিশপ্রেমীদের মনে। যদিও উত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। স্বপন নামে বারাসতের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ওপার বাংলার যা পরিস্থিতি, তাতে ইলিশ আসাটা চাপ। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, জানি না। মনে হচ্ছে, এবার পুজোর বাজার মাটি হয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত পদ্মার ইলিশ আমদানির কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।’ মধ্যমগ্রামের মাছ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘এখন যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, তার বেশিরভাগই মায়ানমারের। ওই মাছ অনেকে কিনতে চাইছে না। পদ্মার ইলিশের স্বাদ অন্য কোনও ইলিশে যে মেলে না, ক্রেতারা সেটা ভালোভাবেই জানেন। অনেকে মাছের কানকো উল্টে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন। বলছেন, পদ্মার ইলিশ এলে নেব।’
পুজোর আগে মিলবে তো পদ্মার ইলিশ?
ইলিশপ্রেমীদের দুঃখ, বাংলাদেশের ইলিশ এবার দেখা যাচ্ছে না। পুজোর আগে কি আসবে? সেই সম্ভাবনাও এবার কম। এ বিষয়ে পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শুল্ক দফতরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংস্থার সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইলিশ কবে আসবে, তা আমাদেরও জানা নেই। দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যত থমকে রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে লাগাতার অশান্তি চলছে। চলছে বিক্ষোভ ও মৃত্যু মিছিল। এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ইলিশ রফতানিতিও।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দক্ষিণ ২৪ পরগনায়
তবে নদীর ইলিশ না মিললেও ইলিশ প্রেমীদের জন্য সুখবর রয়েছে । প্রায় ১০ টন ইলিশ মাছ উঠেছে জালে। বুধবার ভোরে ট্রলার ভর্তি এই রূপালি শস্য নিয়ে নামখানা মৎস্য বন্দরে ঢুকেছে মৎস্যজীবীরা। চলতি মরশুমের শুরুতে এই মাছ সেভাবে ধরা না পড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। এবার ধীরে ধীরে হাসি ফুটতে শুরু করেছে তাঁদের মুখে। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ইলিশ ধরার জন্য যে আবহাওয়া লাগে তা এই মুহূর্তে খুবই অনুকূল। ফলে আগামীদিনে আরও ইলিশ ধরা পড়বে বলে তাঁদের আশা। আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে বাকি ট্রলারগুলিও ফিরে আসবে। আশা করা যাচ্ছে সেই ট্রলারগুলিও ভরা থাকবে ইলিশ মাছে। যার জন্য বাজারে এবার যেমন ইলিশের যোগান বাড়বে, তেমনই দামও আসবে ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।