এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়ে কাজ শুরু করলেও ডামাডোল অব্যাহত। আর এর মাঝেই পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য খারাপ খবর এল পদ্মাপার থেকে। আসন্ন দুর্গাপুজোর আগে এবার এরাজ্যের মৎস্যপ্রিয় বাঙালিদের পাতে যে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ পড়বে না, তা মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
কী জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার?
দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রফতানি করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর রবিবার সচিবালয়ে নিজের দফতরে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফরিদা আখতার। ইলিশ রফতানি বন্ধ করা হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রফতানি হবে সেটা হতে পারে না।”
প্রসঙ্গত. প্রতিবছর পুজোর মরশুমে পশ্চিমবঙ্গের মাছ বাজারে পদ্মার ইলিশের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এবার চাহিদা থাকলেও আশা মিটবে কিনা, হাসিনা সরকারের পতনের পর তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল এপারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে এপার বাংলায় পদ্মার ইলিশ আশা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বছর ছয়েক আগে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পর বাংলাদেশ সরকার দুর্গা পুজোর আগে ইলিশ রফতানিতে অনুমতি দেয়। হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের চুক্তি হয় এবং প্রতি বছর সেই চুক্তি রিনিউ করার ব্যাপারে দুই দেশ সম্মত হয়। বিগত ৫ বছর ধরে অগাস্ট মাসের ১০ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে সেই চুক্তি নবীকরণ হয়ে আসছে। অগাস্ট মাসে এই দেশের আমদানীকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানিকারীদের এগ্রিমেন্ট হয়। দ্বিপাক্ষিক প্রস্তাবে সই হয়। তারপর সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দুর্গাপুজোর দশমী পর্যন্ত পদ্মার ইলিশ আসতে শুরু করে এই দেশে বা এই রাজ্যে। এই চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২৩ সালে অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশ ৪৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। তবে টেকনিক্যাল কারণে শেষ পর্যন্ত আমদানি করা গেছিল ১৩০০ মেট্রিক টন। একইভাবে ২০২২ সালে ৪০০০ মেট্রিক টন দেওয়ার ব্যাপারে হাসিনা সরকার সম্মত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেশে আনা সম্ভব হয়েছিল ২৬০০ মেট্রিক টন রুপোলি শস্য। এবার কী হবে তা নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল হিলশা ট্রেডার্স ফেডারেশন এর সভাপতি অতুল চন্দ্র দাস সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, চুক্তি রিনিউইয়ালের সময় প্রায় এসে গিয়েছে। হাসিনা সরকারের রফতানি বিভাগের আধিকারিকরা কেউ নেই। নতুন প্রশাসন এই ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন জানা নেই। ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ জানিয়েছিলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি লেখার কাজ শুরু করেছেন। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের বক্তব্যের পর এবার পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ মিলবে না তা মোটামুটি স্পষ্ট।
রবিবার তাঁর মন্ত্রকে বসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ওই সময়ে ফরিদাকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রফতানির কথা জিজ্ঞাসা করেন এক সাংবাদিক। ওই প্রশ্ন শুনে খানিকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে অত প্রেম কীসের? দেশবাসী ইলিশ পাবে না আর ইলিশ বিদেশ রফতানি হবে! এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরে রফতানি করা হবে। দেশের মানুষ কম দামে যাতে ইলিশ মাছ পায় তার ব্যবস্থা আগে করা হবে।
গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রফতানি করে আসছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সেদেশের মানুষের বক্তব্য, গত পুজোর সময়েও ভারতে ইলিশের প্রথম যে চালান গেছে, একই দিন তার চেয়ে বেশি দামে ইলিশ কিনতে হয়েছে বরিশালবাসীকে। এছাড়া পয়লা বৈশাখ আসার আগ দিয়েও এই মাছের দাম চলে যায় সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। চলতি বছর বৈশাখ চলে যাওয়ার পরও ইলিশ মাছের দাম কমেনি বাংলাদেশে। সরকার পতনের আগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে গুনতে হয়েছে হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। সরকার বিদায়ের পর সেই দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ‘সিন্ডিকেট চাঁদাবাজির’ কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে ফরিদা আখতার বলেছেন, “এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ালে দাম কমে আসবে। এজন্য সরবরাহ বাড়াতে হবে।” ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষা বিবেচনায় খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।