সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জন মারা গেছেন বলে জানালেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্র, পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে। সরকারি ভাবে পাওয়া ১৪৭ জন মারা যাওয়ার তথ্যটি রবিবার পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখনো তাঁরা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর যদি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সংখ্যাটি বাড়তে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ১৪৭
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, হিংসা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সংবাদ মাধ্যম হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করলেও সরকারের তরফ থেকে এই প্রথম মৃতের সংখ্যা জানানো হলো। অবশ্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছেন।
সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক জানান না হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী বিক্ষোভ-সংঘর্ষে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের। নিহত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ। হাসপাতাল, স্বজন ও মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সূত্রে সংঘর্ষ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বয়স, পেশা ও আঘাতের ধরন এবং কোন এলাকায় আহত অথবা নিহত হয়েছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে ১৫০ জনের। এর মধ্যে ১১৩ জন শিশু, কিশোর ও তরুণ। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। ছররা গুলি বা প্যালেট, রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন এবং অন্যান্য আঘাত কম। মৃত্যুর কারণ ও গুলির ধরন নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত দরকার। অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়েছে, তবে প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া দেহ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা
কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। সরকার মূল দাবি মেনে নেওয়ায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। রবিবার (২৮ জুলাই) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে আলোচনা শেষে ডিবি কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সমন্বয়করা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগসহ নানা হিংসার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
রবিবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক একটি দীর্ঘ বিবৃতিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছে। প্রধাণত অন্য দেশের কূটনীতিকদের কাছে এই বিবৃতিটি বিলি করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভ ও নাশকতাকে বিএনপি এবং তাদের মৌলবাদী শরিক দল জামাত-ই-ইসলামির ‘সরকার পতনের অপচেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের নাশকতাকারী ও দুষ্কৃতীরা আন্দোলন হাইজ্যাক করে আগুন লাগানো, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করার পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পুলিশকে আক্রমণ ও খুনের একাধিক ঘটনা ঘটে। বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে দাবি করেছে, এই নাশকতার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের দফতর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা হয়। মেট্রোরেল ও কয়েকটি বাছাই করা সরকারি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এই ‘দুর্যোগের দিনে’ আন্তর্জাতিক মহল যে ভাবে বাংলাদেশে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।