বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের পর বিরোধী দল তিনদিনের দেশব্যাপী বনধ ডেকেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া পুলিশ বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থাকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং জাতীয় রাজধানী ঢাকায় শত শত আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য টহলে থাকবে। বিজিবির মুখপাত্র বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জাতীয় সড়ক রক্ষায় সারাদেশে বিপুল সংখ্যক বিজিবি প্লাটুন পাঠানো হয়েছে এবং শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে অ্যান্টি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছেন এবং পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। "বিরোধীদের ৭২ ঘন্টা অবরোধের সময় যেকোনও নাশকতা ও হিংসার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের," এমনটাই জানিয়েছেন একজন সামরিক কর্মকর্তা।
সোমবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর ও গাজীপুরে বিএনপি কর্মীরা দুটি খালি বাসে আগুন দিলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে কারো হতাহত হওয়ার খবর না থাকলেও বাস দুটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
বিরোধীরা কেন বনধ ডেকেছে?
গাজীপুর শিল্প জেলায় বাড়তি মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত দুই পোশাক শ্রমিক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার দিন থেকেই বিরোধীদের অবরোধ শুরু হয়। সরকার কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত মজুরি বোর্ড এখনো কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমঝোতায় না আসায় কয়েকদিন ধরে বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন কারখানার শ্রমিকরা। গত শনি ও রবিবার ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লিগ ও বিএনপির তিন কর্মীসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে শনিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মী সমাবেশ করেছে বিএনপি। ঢাকায় আওয়ামী লিগ শান্তি সমাবেশ করেছে। এত নিরাপত্তার পরও বিএনপি কর্মীরা পুলিশকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি পুলিশ বুথ এবং নগরীর অন্যান্য স্থানে বাসসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয় এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়। ফকরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর বনধের ডাক দেয় প্রধান বিরোধী দল। এসময় বিএনপি কর্মীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। হিংসায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দেশব্যাপী বনধ ডেকেছিল বিরোধীরা।