বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন যে রূপ নিচ্ছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। ইতিমধ্যেই হিংসাত্মক আন্দোলনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আহত শতাধিক। বেসরকারি মতে, মৃতের সংখ্যা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা। এহেন পরিস্থিতিতে আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশজুড়ে 'কমপ্লিট শাটডাউন'-এর ডাক দিল আন্দোলনকারীরা। যার নির্যাস, দেশজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধ চলবে। আন্দোলনকারীদের শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ ঢাকায় বন্ধ রাখা হচ্ছে মার্কিন দূতাবাস। ইতিমধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও।
আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করার আবেদন হাসিনার
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশজুড়ে সব বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। শুধুমাত্র হাসপাতাল ও কিছু জরুরি পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা এই মুহূর্তে গোটা দেশে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্র সমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট চালিয়েছে, এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আমি আরও ঘোষণা করছি, হত্যাকাণ্ড সহ যেসকল অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সেসকল বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।' আন্দোনকারী পড়ুয়াদের প্রতি হাসিনার বক্তব্য, 'সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আদালতে শুনানির তারিখ রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের সুযোগ রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সকলকে অপেক্ষা করার অনরোধ করছি।'
জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব বন্ধ
কিন্তু শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবার তা আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। কমপ্লিট শাটডাউন প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করছি৷ শুধু হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সড়কে কোনও গাড়ি চলবে না৷
মুক্তিযোদ্ধার নাতিনাতনিরা সংরক্ষণের সুবিধা নিচ্ছেন
বস্তুত, ২০১৮ সালেও সংরক্ষণের বিরোধিতায় একই ভাবে উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সংরক্ষণ বাতিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীর জন্য মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। গত ৫ জুন সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। এরপরেই সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে শুধুমাত্র অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে, বাকি সকল কোটা বাতিল করার দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বাংলাদেশে কোটার বড় অংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। অথচ বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা গোটা জনসংখ্যার মাত্র ০.১৫ শতাংশ। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ। ফলে মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরাই কোটার সুবিধা নিচ্ছেন। ফলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।