মহালয়া পার হতেই দুর্গাপুজোর আমেজ শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। শহর কলকাতায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড়ও ইতিমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের মধ্যেও উদ্দীপনার কোনও খামতি নেই। বাংলাদেশে এবার ৩২ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো হচ্ছে। গতবারের তুলনায় সংখ্যাটা বেড়েছে বলে দাবি হাসিনা প্রশাসনের। যদিও পদ্মাপারে পুজো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেখানকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশে একাধিক জায়গায় প্রতিমা ভাঙার খবর অতীতে সামনে এসেছে। নষ্ট হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করেছে সেদেশের হিন্দু সংগঠনগুলি। তাঁদেরকে আশ্বাস দেওয়ার সঙ্গেই পুজা মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও এবার পুজোয় কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে 'আমাদের মা রক্ষা স্কোয়াড' গঠন করেছে 'সম্প্রীতি বাংলাদেশ' নামে সংগঠন।
প্রসঙ্গত ২০২১ সালে কুমিল্লায় পুজোমণ্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগ্নিকাণ্ডের পর বাংলাদেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করতে হয়েছিল। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল কমপক্ষে ১০ জেলায়। সেসব জেলা থেকে মন্দির, মণ্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য গতবছরই হাসিনা প্রশাসন পুজোর নিরাপাত্তায় কঠোর ব্যবস্থা করেছিল। গত বছরের মতো এবারও দুর্গোৎসবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে এমন ঘটনা ঘটতে না পারে তারজন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারি আশ্বাস সত্বেও সম্প্রীতি বাংলাদশের তরফে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতে দুর্গাপুজোয় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তারই অঙ্গ হিসেবে সাতক্ষীরায় এই বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠনের প্রধান পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, দু'বছর আগে দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। মণ্ডপে মণ্ডপে হামলার পাশাপাশি প্রচুর প্রতিমা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও বহু মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছিল। এরপরে গত বছর দুর্গাপুজোর নিরাপত্তায় মণ্ডপে মণ্ডপে বসানো হয়েছিল সিসিটিভি ও মোতায়েন করা হয়েছিল সেনাবাহিনী। এবারও নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকবেন না। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩২ হাজার ২০০ দুর্গাপুজো হচ্ছে এবার বাংলাদেশে। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩০টি বেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মতই দুর্গাপুজা বেড়েছে রাজধানী ঢাকা শহরেও। চলতি বছর ঢাকায় পুজোমণ্ডপের সংখ্যা ২৪৫টি। গত বছরের তুলনায় চারটি বেশি মণ্ডপ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী জানুয়ারিতে রয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। এই অবস্থায় আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংখ্যালঘুরা। সেই কারণে তাঁরা দুর্গাপুজোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, শেখ হাসিনার অন্যতম ভরসা হলে দেশে সংখ্যালঘুদের অর্থাৎ হিন্দুদের ভোট। সেই কারণে আরও নিরাপত্তা বাড়াতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিজেও। বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সম্প্রীতি দাবি করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দাবি, গত ১৫ বছরে হিন্দুসহ অন্য সংখ্যালঘুদের জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাঁর সরকার।