Advertisement

Bangladesh Violence- Joler Gaan- Rahul: পুড়ে ছাই শতাধিক বাদ্যযন্ত্র-বাড়ি, স্বপ্ন ভাঙার গানে প্রতিবাদ রাহুলের 'জলের গান'-এর

Bangladesh Latest Update: হাসিনার পদত্যাগের পর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানেই থাকতেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত ব্যান্ড 'জলের গান'-র অন্যতম সদস্য রাহুল আনন্দ। সেসময় তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর হয় এবং আগুন লাগানো হয়। তছনছ হয়ে যায় শিল্পী বাড়ি, ভাঙে শতাধিক বাদ্যযন্ত্র।  

রাহুল আনন্দ (ছবি: আফজল তুহেল)
Aajtak Bangla
  • ঢাকা ,
  • 06 Aug 2024,
  • अपडेटेड 6:57 PM IST

অশান্ত বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশের হিংসার খবর মঙ্গলবারও আসছে। ওপার বাংলার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সকলে। সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশও ছাড়েন মুজিব কন্যা। হাসিনার পদত্যাগের পর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। সেখানেই থাকতেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত ব্যান্ড 'জলের গান'-র অন্যতম সদস্য রাহুল আনন্দ। সেসময় তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর হয় এবং আগুন লাগানো হয়। তছনছ হয়ে যায় শিল্পী বাড়ি, ভাঙে শতাধিক বাদ্যযন্ত্র।  

'এমন যদি হতো', 'বকুল ফুল', 'ঝরা পাতার গান', 'পিঠে পুলির গান', 'পরের জাগা পরের জমিন'-র মতো গানগুলির জনপ্রিয়তা শুধু বাংলাদেশে সীমাবন্ধ নেই, এপার বাংলার শ্রোতাদের মুখ মুখে ফেরে। পদ্মাপাড়ের শিল্পী রাহুলের বিপুল সংখ্যক অনুগামী আছেন বিশ্বজুড়ে। শিল্পীর বাড়ি তছনছ যাওয়ায় ধিক্কার জানাচ্ছেন তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এমনকী নেটমাধ্যমেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বহু মানুষ।  

মঙ্গলবার 'জলের গান'-র ফেসবুক থেকে একটি দীর্ঘ আবেগঘন পোস্ট করা হয়। সোশ্যাল পেজে একটি গান শেয়ার করে, সমগ্র চিত্রটি তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। ক্যাপশনে লিখেছেন, "স্বপ্নে তুমি দাগ দিও না। সরলরেখার স্বপ্নে কারো বাঁক দিওনা! বাঁক দিওনা!...জলের গানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসত বাড়ি ছিল না, ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনা প্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তাই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সঙ্গীতচর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক – রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হত। যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সব সময় খোলাই থাকত। তাতে তালা দেওয়া হত না। যে কেউ, যে কোনও দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যে কোনও প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সাথে খুব পরিচিত, তা হল- রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তাঁর নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন।" 

Advertisement

পোস্টে আরও লেখা হয়, "জলের গানের বাদ্যযন্ত্র। রাহুল আনন্দের বিরাট ভাবনা ও স্বপ্নের দিকে ধাবমান এক নিরন্তর প্রয়াস। আমাদের দেশীয় কাঠে তৈরি, আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুই কি আমাদের? এই দলের? জলের গানের? না!এই প্রয়াস সকল নবীন মিউজিশিয়ানদের জন্য, যারা বিশ্বাস করবে - আমরাও আমাদের বাপ দাদার মতো নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি! এই প্রয়াস সেই স্বকীয়তার; যার বলে এই দেশের মানুষ গর্বের সাথে বলতে পারে, এই আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা অনন্য শব্দতরঙ্গ যা কিনা পুরো পৃথিবীর বুকে কেবল এই বাংলাদেশের মাটিতেই ঝনঝন করে বাজে, সুর তোলে, স্বপ্ন দেখায়। যেই স্বপ্নের ঝিলিক সুদূর ফ্রান্স থেকে আরেকজন মিউজিশিয়ানকে আমাদের দেশে টেনে আনে। পুরো পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের চোখের আলো পড়ে আমাদের এই দেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে।" 

ব্যান্ডের তরফ থেকে আরও লেখা হয়, "তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন তারা সকলেই খবরটি জানেন। হ্যাঁ! -রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু, রাহুলদা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র ,গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও, দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব! সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তাঁর নিজ ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তাঁর সন্তানের মনে; যার বয়স কিনা মাত্র ১৩ বছর – ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সব কিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!" 

পোস্টে আরও লেখা, "এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারব। কিন্তু, এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সব কিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে... সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু, নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারো স্বপ্ন ভেঙে না দেই! এই গানটি আমাদের এই ঘরে রেকর্ড করা শেষ গান। ভিডিওতে যা দেখছেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। উত্তাল সময়ের সাথে আমরাও একাত্ম ছিলাম গানে গানে। এই শেষ কাজটিই তবে সকলের জন্য আনন্দ উপহার।" 

 

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই অবনতি হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির। সোমবার ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা। সোমবার বেলা আড়াইটে নাগাদ বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়েন শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। তাঁর হেলিকপ্টারের উদ্দেশ্য ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে হিংসার সূত্রপাত। সেই আন্দোলনই বৃহত্তর আকার ধারণ করে। রাজপথে নেমে আসে লাখো লাখো ছাত্রছাত্রী। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাধে সংঘর্ষ। নিরাপত্তা বাহিনী হিংস্র জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ।

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement