বাংলাদেশের পাঁচ জেলায় পথদুর্ঘটনায় একদিনে ২১ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে যশোরের লেবুতলায় বাসে পাচা পড়েবাইকের চালকসহ ৭ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সিলেটে বাস ও বাইকের সংঘর্ষে ৫ জন, গাইবান্ধায় ৩ জন, টাঙ্গাইলে আলাদা আলাদ ঘটনায় ৫ জন এবং রাজবাড়িতে ট্রাক চাপায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশে ইদের ছুটিতে কমপক্ষে ২৯৯ জনের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন।
শুক্রবার বিকেলে বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজার থেকে ইজিবাইকে করে চিকিৎসার জন্য যশোর যাচ্ছিলো সাত বছরের খাদিজা। সঙ্গে ছিলেন তার মা সোনিয়া, দিদিমা ফাহিমা খাতুন ও দুই বছরের যমজ ভাই হাসান-হোসেন। ইজিবাইকটি যশোর-মাগুরা হাইওয়ের লেবুতলা এলাকায় পৌঁছলে যশোর থেকে ছেড়ে আসা রয়েল এক্সপ্রেসের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান খাদিজাসহ তার দুই ভাই, ঠাকুমাসহ ইজিবাইক চালক ইমরান হোসেন।
আহত অবস্থায় খাদিজার মা সোনিয়াসহ ইজিবাইকে থাকা তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুইজন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে যশোর থেকে মাগুরার দিকে যাওয়া একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৮৭৬) বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকের চার যাত্রী মারা যান। বাসটি বাজেয়াপ্ত করা হলেও চালক ও সহকারী পলাতক আছেন। নিহত পরিবারের সবাইকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
পুলিশ সুপার জানান, অতি দ্রুতই আমরা বাসের চালক এবং হেলপারকে আটক করতে পারবো বলে আশা করছি। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, লেবুতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের দরবস্ত এলাকায় বাস ও ইজিবাইক সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা শ্যামল বনিক বলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নাইট কোচ ও ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৩ জন। আহত হয়েছেন ৬ জন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত একজনের নাম আব্দুর রাজ্জাক, তবে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ঈদের ছুটি শেষে ৩০-৪০ জন পোশাক শ্রমিক ট্রাকযোগে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছিলেন। পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রী বাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এছাড়া টাঙ্গাইলে আলাদা তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। আর রাজবাড়ীতে ট্রাক চাপায় বিজয় নামের ষোল বছর বয়সের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পুলিশ বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিকেলে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে নুরজাহান স্বামীর সঙ্গে একটি পিকআপে করে রওনা হন। পিকআপ ভ্যানটি রাবনা বাইপাস এলাকায় পৌঁছলে একই দিক থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যান তাদের গাড়িটির ওপরে পেছন থেকে তুলে দেয়। এতে পিকআপে ভ্যানে থাকা প্রায় ১৫ জন যাত্রী আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জনের মৃত্যু হয়। একই জাতীয়সড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় অজ্ঞাত বাস চাপায় এক নারী ও বাসাইলে মোটরসাইকেল চাপায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।