শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরই সেদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ঢাকার বিখ্যাত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান সেদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। মন্দিরে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘুদের জন্য হেল্পলাইনও নম্বরও চালু করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে। প্রয়োজনে সেখানে ফোন করে অভিযোগ জানানো যেতে পারে। বলা হয়েছে মন্দির, গির্জা বা কোনও ধর্মীয় স্থানে হামলা হলে ০১৭৬৬-৮৪৩৮০৯ এই নম্বরে ফোন বা এসএমএস করে জানানো যাবে।
এদিকে হাসিনার সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫২টি জেলায় ২০৫টি এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকে লেখা খোলা চিঠিতে এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিশ্চান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। যদিও সেই চিঠিতে প্রাণহানির কোনও তথ্য নেই। নিরাপত্তা ও অত্যাচার বন্ধের দাবিতে গত শনিবার দ্বিতীয় দিন ঢাকার শাহবাগে জমায়েত করেছিলেন সংখ্যালঘুরা। সেখানে রোজারিও বলেন, "এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে প্রাথমিক যে তথ্য আছে সেই অনুযায়ী ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর ২০৫টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।"
এদিকে সামনেই হিন্দু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাদেশের হিন্দুরাও এই উৎসব ধুমধামের সঙ্গে পালন করেন। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এই আবহেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও মন্ত্রকে দুর্গাপুজোয় তিন দিনের ছুটি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। গত সোমবার সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে এ দাবি জানান হয়। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে বিগত ২৪ বছরে দেশে তাদের ওপর হামলার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক পলাশ কান্তি দে দাবি করে বলেন, বিগত সময়ে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গা পুজোর উৎসব করতে পারেননি। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত বলেন, ‘ছুটি দিতে কোনো বাধা নেই। তবে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি কোনো ডিসিশন মেকার নই।’
দুর্গাপুজোয় তিনদিনের ছুটি?
দুর্গাপুজোর ছুটি তিন দিন করতে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ চারিতায় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সাখাওয়াত বলেন, 'আমি মনে করি, দুর্গাপুজোয় দুই দিন কিংবা তিন দিন ছুটি দিতে অসুবিধা কী! এই ছুটিতে খালি ওনাদের জন্য না! যেহেতু আমি ডিসিশন মেকার না, আমি সচিবকে বলেছি এটা নোট করতে। যতগুলো দাবি দিয়েছেন, আমাদের ক্যাবিনেট মিটিং যখন হবে, আলোচনা করব। যা এখন করা যায়, তাই হবে। যেগুলো এখন করা যাবে না; সাংবিধানিক কিছু ব্যাপারে আছে—সংবিধান পরিবর্তন করার কোনো প্রভিশন আমাদের নেই। এটা আমাদের রেকমেন্ডেশন থাকবে কনস্টিটিউশনে যদি কখনো হাত লাগানো হয়, কারণ কনস্টিটিউশনে হাত লাগাতেই হবে অনেক বিষয়ে। আমরা ডিকটেটরশিপ চাই না। আমরা জবাবদিহিমূলক সরকার চাই।
উল্লেখ্য, জনসংখ্যার রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ১.৩৫ কোটি হিন্দু বাস করেন। সেখানের মোট বাসিন্দাদের প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু। ১৯৫১ সালে সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। এরপর থেকে কমতে থাকে হিন্দুদের সংখ্যা। তাদের অনেকেই ভারতে পালিয়ে এসেছেন বলেও জানা গিয়েছে।