এপার বাংলায় সবজি বাজারে দামের জেরে রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে আমজনতার। ছ্যাঁকা দিচ্ছে কাঁচা লঙ্কার দাম। বাজারে কাঁচা লঙ্কার প্রতি ১০০ গ্রামের দাম সাধারণত থাকে ১০ টাকা। কখনও কখনও ১৫০ গ্রামের দাম হয় ১০ টাকা। অর্থাৎ কেজি হিসেবে দাম থাকে ৭০-১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এবারে হিসেবে উলট-পালট। কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কাঁচা লঙ্কা। তবে কেবল পশ্চিমবঙ্গেই নয় ওপার বাংলাতেও কাঁচা লঙ্কার দাম আকাশ ছোঁয়া। বাংলাদেশে কোনও কোনও পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা, কোথাও ১২০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে কাঁচা লঙ্কা, জানা যাচ্ছে এমনটাই। অতীতে অস্থির বাজার সামলাতে বাংলাদেশ বারবার ভারতের মুখাপেক্ষী হয়েছে। এবারেও বাংলাদেশের চরম বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ালো ভারত। ইতিমধ্যে ভারত থেকে ৫৫ টন কাঁচা লঙ্কা বাংলাদেশে পাঠান হয়েছে বলেই খবর।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একাংশের কথায়, বর্ষার জন্য বহু লঙ্কা গাছ নষ্ট হয়েছে। প্রত্যেক বছর এই সময় লঙ্কার দাম বৃদ্ধি পায়। যদিও এই বছরের মতো লঙ্কার দাম বৃদ্ধি কোনও বছর দেখেননি তাঁরা। এদিকে ভারতের লঙ্কা বাংলাদেশে ঢুকতেই বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে দেশি কাঁচা লঙ্কার সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। আবার ভারত থেকেও কাঁচা লঙ্কা আমদানি শুরু হয়েছে। এতে সবজির পাইকারি বাজারগুলোতে কাঁচা লঙ্কার দাম আগের তুলনায় কমেছে। তবে খুচরো পর্যায়ে এখনো সেই দামের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত ইদের কয়েক দিন আগে থেকে বাংলাদেশের বাজারে কাঁচা লঙ্কার দাম বাড়তে থাকে। ঈদুল আজহার পরে তা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গত কয়েক দিনে পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এ সময় খুচরো বাজারে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকায় দাম ৭০০-৮০০ টাকাও ছুঁয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা দরে প্রতি কেজি কাঁচা লঙ্কা বিক্রি হয়। আর ঢাকার বিভিন্ন খুচরো বাজারে এই দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিছু বাজারে অবশ্য ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতেও দেখা গেছে। তবে মঙ্গলবার এক ধাক্কায় কাঁচা লঙ্কার দাম কেজিতে কমেছে ৩০০ টাকা। ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রায় ৬ ট্রাক কাঁচা লঙ্কা ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকতেই হুহু করে কমছে দাম।
প্রতিবছর বাংলাদেশে পিয়াঁজ আর কাঁচা লঙ্কার দাম কমা- বাড়া কিছুটা নির্ভর করে ভারতের উপর। ইদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে ৫৫ টন কাঁচা লঙ্কা বাংলাদেশে রফতানির খবর জানিয়েছে সেদেশের কৃষি মন্ত্রক। সম্প্রতি কাঁচা লঙ্কার অস্বাভাবিক দাম বাড়ায়,প্রথম দিন ৩০টি আইপিকে ১১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কাঁচা লঙ্কা, আর ৬৮ টি আইপিকে ৫৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন টমেটো আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। বাজারে সরবরাহ আর দাম স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় ভারত থেকে কাঁচা লঙ্কা আমদানি করা কিন্তু বাংলাাদেশে এই প্রথম নয়। ২০২০, ২১, ২২ সালেও একইভাবে বাংলাদেশ ভারত থেকে কাঁচা লঙ্কা আমদানি করেছে। বাংলাদেশ যতবার ভারত থেকে আমদানি করেছে, ততবারই কিন্তু দাম কমেছে। বাংলাদেশ পিয়াঁজ আর কাঁচা লঙ্কার দিক থেকে বেশিটাই নির্ভর করে শুধুমাত্র ভারতের উপর। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা লঙ্কা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।