Advertisement

Kali Puja 2021: মানত করেন মুসলিম ভক্তরাও, একান্ন সতীপীঠের অন্যতম বাংলাদেশের এই কালী মন্দির

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনের সফরে গত মার্চে ঢাকায় গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সফরের দ্বিতীয় দিন মোদীর প্রথম গন্তব্য ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। এই মন্দির কিন্তু ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি হিন্দুদের এক গৌরবময় ইতিহাস। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক ওপার বাংলার যশোরোশ্বরী কালী মন্দিরের ইতিহাস ও পুরান কাহিনি।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির
সুমনা সরকার
  • ঢাকা,
  • 26 Oct 2021,
  • अपडेटेड 5:53 PM IST
  • হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির
  • যশোরেশ্বরী নামের অর্থ 'যশোরের দেবী'
  • যশোরেশ্বরী মাতা ভীষণদর্শন হলেও মায়ের শ্রীবদনে অপূর্ব দেবীভাব রয়েছে

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনের সফরে গত মার্চে ঢাকায় গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সফরের দ্বিতীয় দিন মোদীর প্রথম গন্তব্য ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। এই মন্দির কিন্তু ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি হিন্দুদের  এক গৌরবময় ইতিহাস। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক ওপার বাংলার যশোরোশ্বরী কালী মন্দিরের ইতিহাস ও পুরান কাহিনি।

একান্ন সতীপীঠের অন্যতম যশোরেশ্বরী
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ 'যশোরের দেবী'। পুরান অনুযায়ী বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে সতী মায়ের হাতের তালু পড়েছিল। বলা হয় বঙ্গদেশের হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্য মানুষের হাতের তালুর আকারের একখন্ড পাথর অলৌকিকভাবে পেয়েছিলেন। যারপর মায়ের পুজোর জন্য যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন প্রতাপাদিত্য।

 

 

যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের ইতিহাস
জানা যায়, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি এই যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের ১০০টি দরজা নির্মাণ করেন। কিন্তু মন্দিরটি কখন নির্মিত হয় তা জানা যায়নি। পরবর্তীকালে লক্ষ্মণ সেন ও প্রতাপাদিত্য কর্তৃক তাদের রাজত্বকালে এটির সংস্কার করা হয়েছিল।কথায় আছে যে মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি এখানকার জঙ্গল থেকে একটি আলৌকিক আলোর রেখা বের হয়ে মানুষের হাতুর তালুর আকারের একটি পাথরখণ্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপদিত্য কালীর পুজো করতে আরম্ভ করেন এবং এই কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন।যশোরেশ্বরী কালী দর্শনের নাম করে সেনাপতি মান সিংহ প্রতাপাদিত্যের দুর্গের নকশা নিয়ে যান। পরে আক্রমণ করে মোগলরা সেটি জয়লাভও করে। কালীর বিগ্রহের সঙ্গে প্রতাপাদিত্য এবং তার সেনাপতি ও পরামশর্দাতা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে বন্দি করেন মান সিংহ।

Advertisement

 

আরও পড়ুন: 'এখানে জন্মেছি, দেশ ছেড়ে যাব কেন?' হিংসা-ধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রশ্ন চঞ্চলের

ইতিহাসে অবহেলিত
মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি লক্ষ্মণ সেনা বা মহারাজা প্রতাপাদিত্য ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মূল মন্দির সংলগ্ন নাটমন্দির তৈরি করেছিলেন। তবে ১৯৭১ সালে সেই নাট মন্দির ভেঙে পড়ে। লম্বা-চাওড়া বিরাট নাটমন্দিরের আজ  কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। নাটমন্দিরের স্মৃতি বহন করে চলেছে শুধুমাত্র কয়েকটি স্তম্ভ। কয়েশো বছরের নীরব সাক্ষী হয়ে তারা আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূল মন্দিরটি ছাড়া আর সবকিছুই আজ কালের গর্ভে বিলীন। এখন ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে মন্দিরের নওবতখানা।  সেই সময়ে জমিদার বাড়ির মধ্যে অবস্থিত ছিল মন্দিরটি। তত্‍কালিন জমিদার  মায়ের নামে প্রায় ২০০ বিঘা জমি দান করেছিলেন।

আরও পড়ুন: মন্দিরে হামলার জের! ফের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার পথে বাংলাদেশ?

শক্তির দেবী ও ভৈরব
তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে-'যশোরে পানিপদ্ম দেবতা যশোরেশ্বরী,/চণ্ডশ্চ ভৈরব যত্র তত্র সিদ্ধ ন সংশয়।' অর্থাত্‍ যশোরে সতীর পাণিপদ্ম বা করকমল পড়েছে। দেবীর নাম যশোরেশ্বরী,আর তাঁর ভৈরব হলেন চণ্ড। এই সতীপীঠে কায়মনোবাক্যে পুজো করলে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে সর্বসাধারণের বিশ্বাস।

 

 

দেবী মূর্তির বিশেষত্ব
মন্দির-বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিত মাতৃমূর্তির শুধু মুখমণ্ডলই দৃষ্টিগোচর হয়। শ্রীযশোরেশ্বরীর কণ্ঠের নীচে তার শ্রীহস্ত ও শ্রীচরণ কিছুই নজরে পড়ে না। মূর্তির অবয়ব পুরোটাই মখমলে আবৃত। মায়ের মাথার ওপর টকটকে লাল রঙের চাঁদোয়া। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলঙ্কার। মাথায় সোনার মুকুট। লোলজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি। মালদার জাগ্রত জহুরা কালীমাতার মুখমণ্ডলের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে যশোরেশ্বরীর। যশোরেশ্বরী মাতা ভীষণদর্শন হলেও মায়ের শ্রীবদনে  অপূর্ব দেবীভাব রয়েছে। ভক্তের পরম আশ্রয়ের শেষ কথা যেন তিনিই। এই মন্দিরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার নিত্যপূজা হয়। 

পুজো হয় তন্ত্রমতে
শ্রীযশোরেশ্বরীর পুজো হয় মন্ত্রমতে। মায়ের পুজোয় সমবেত ভক্তগণ ফুল, ফল ও নানাধরনের মিষ্টি আনেন। মাতৃমূর্তির সামনে সুন্দর করে কাঁসার থালা ও মাটির পাত্রে থরে থরে নৈবেদ্য সাজানো হয়। প্রতিবছর মন্দিরে খুব ধুমধাম করে শ্যামাপুজো হয়। মা ভীষণ জাগ্রত। শ্যামাপুজোয় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত পুজো দেন। মানত করেন। বড় করে হোমযজ্ঞ হয়। মাকে নানা অলঙ্কারে সাজানো হয়। মন্দিরের সামনে তিনদিন মেলা বসে। ছাগবলি হয়। মন্দিরের বারান্দায় হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি মুসলমান ভক্তরাও  মানত করতে আসেন। মানত পূরণ হলে এক জোড়া পায়রা মন্দিরের বারান্দা থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়। 

 

 

স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এই মন্দিরে
মন্দিরটি তার প্রাচীন গরিমা হারালেও এক কণাও কমেনি মা যশোরেশ্বরীর মহিমা। বরং তা যেন উত্তরোত্তর বাড়ছে। মা যশোরেশ্বরীর মহিমার কথা শোনা যায় স্থানীয় মুসলিমদের মুখেও। অতীতে তাঁর মহিমার কথা যশোর থেকে পৌঁছেছিল দিল্লির মুঘল রাজ দরবারেও। অম্বররাজ মানসিংহ এক পুরোহিতের সাহায্যে মা যশোরেশ্বরীর বিগ্রহটি চুরি করে নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন। যশোরের মন্দির থেকে চুরি করা মা যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহটি রাজস্থানের অম্বর দুর্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।  কিন্তু বঙ্গবিজয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই স্বপ্নে রুষ্ট মা কালীর দর্শন পান। তারপরেই সূক্ষ্মীবতী নদীর তীরে মা কালীর নতুন একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এদিকে পরবর্তীকালে যশোরের মূলমন্দিরে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা  হয় মা যশোরেশ্বরীর বিগ্রহ। এই যার ইতিহাস, বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সেখানে পুজো দেওয়ার সুযোগ ছাড়েননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।  পুজোর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোদী বলেছিলেন, “আমি মা কালীর চরণে আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমি যখন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ এসেছিলাম তখন মা ঢাকেশ্বরীর চরণে মাথা নত করার সুযোগ হয়েছিল। আর এখন ৫১ শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম মা কালীর এই শক্তিপীঠে আসার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য।” পুজোর সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে হাতে মায়ের মাথায় মুকুট পরান। রুপোর তৈরী সেই মুকুটটি ছিল সোনার আস্তরণে মোড়া।

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement