মাত্র একমাস। আর সেই আন্দোলনে পতন হল শেখ হাসিনা সরকারের। পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। ছেড়ে দিলেন দেশও। বাংলাদেশে অন্তর্বতী সরকারও তৈরি হওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। কিন্তু মাত্র এক মাসে আন্দোলনে কীভাবে হাসিনা সরকারের পতন হল?
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ। কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নামে। প্রথমে তা অহিংস থাকলেও ক্রমাগত সহিংস হয়ে ওঠে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলন এতটাই তীব্র হয় যে, পুলিশ গুলি চালায়। জায়গায় জায়গায় সংঘর্ষ হয়। তাতে প্রায় ২০০ জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েকশো মানুষ। দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দেন শেখ হাসিনা। তবে সেই বার্তা কাজে দেয়নি। এরপরই দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশে আন্দোলন দানা বেঁধেছিল কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিরা সংরক্ষণ না পায় সেই দাবি তোলা হয়। সেই মামলা চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টও ২১ জুলাই কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেয়। সরকারও তা মেনে নেয়। তারপরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে তারপর আন্দোলন থেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
কিন্তু ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হয়েছে সেই অভিযোগে ফের আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে সেই আন্দোলন অহিংস থাকলেও সহিংস হয়ে পড়ে রবিবার থেকে।
রবিবার এই আন্দোলনের ফলে মারা যায় শতাধিক মানুষ। যদিও বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা ৩০০-এর বেশি। আহত ৫০০ জন প্রায়। মাত্র এক দিনে এত ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রবিবার রাত থেকে বাংলাদেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়। সরকার প্রাথমিকভাবে ঠিক করে পরপর তিনদিন কারফিউ চলবে।
তবে সোমবার সকাল থেকে আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। সকাল এগারোটা নাগাদ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। বিশেষ হেলিকপ্টারে করে বোনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে দেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে সে সময় নয় দফা দাবি তোলা হয়েছিল। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এক দফা দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছিল। দাবি ছিল হাসিনার পদত্যাগ। রবিবার অর্থাৎ ৪ অগাস্ট থেকে সেই আন্দোলনে হিংসা ছড়ায়। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সোমবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।
কোটা বিরোধী আন্দোলনও একইভাবে শুরু হয়েছিল। আন্দোলনের প্রভাব এতটাই বেশি পড়েছিল যে, কোথাও বাস বন্ধ হয়, কোথাও ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল সরকার। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তখনই বলেছিলেন, এই আন্দোলন আরও তীব্রতর হতে পারে। বাস্তবে হলও তাই।
যদিও এই কোটা বিরোধী আন্দোলন জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল এমন নয়। এই আন্দোলন বাংলাদেশে প্রথম শুরু হয় ২০১৮ সালে। সেই বছর কোটা সিস্টেম বাতিলের আবেদন করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ছিলেন তিনজন। তা খারিজ করে দেয় আদালত। তারপরই ফেসবুকে 'কোটা সংস্কার চাই’ নামে একটি পেজ খোলা হয় এবং শাহবাগকে কেন্দ্র করে পেজটি থেকে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই সময় বাংলাদেশে আন্দোলনও হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। আন্দোলনের তীব্রতা দেখে সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা করেন।
এদিকে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে যান। তাঁরা কোটা সিস্টেম চালু করার আবেদন জানান। হাইকোর্ট তাতে সম্মতি দেয়। অর্থাৎ ফের আগের কোটা সিস্টেম চালু হয়ে যায়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে সরকার। তবে গত ১ জুলাই থেকে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। এরইমধ্যে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয় বাংলাদেশে।
যদিও সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেওয়ার পর অনেকে মনে করেছিলেন, হয়তো আন্দোলন থেমে যাবে। তবে আন্দোলনকারীরা ফের রাস্তায নামেন। শহিদ মিনার চত্বরে তারা জমায়েত করে। তার প্রতিবাদে পাল্টা পথে নামে আওয়ামি লিগের সমর্থকরা। তারপরই শতাধিক মানুষ মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান হাসিনা।