আরও অস্বস্তি বাড়ল কেন্দ্রের মোদী সরকারের। মাথাপিছু জিডিপি-র নিরিখে এবার ভারতকে পিছনে ফেলে দিতে চলেছে বাংলাদেশ। অন্তত এমনটাই পূর্বাভাস দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার বা আইএমএফ। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে হওয়া লকডাউনের জেরে এমনিতেই বেহাল দেশের অর্থনীতি। বন্ধ হয়েছে বহু সংস্থা। কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য চাকরি হারিয়েছেন দেশের বিশাল সংখ্যাক মানুষ। এমন সময় ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ দেখা যাচ্ছে।
আইএফএফের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতে মাথাপিছু জিডিপি ১০.৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে ১,৮৭৭ ডলারে দাঁড়াতে পারে৷ গত জুন মাসে আইএমএফ নিজেদের পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ভারতের জিডিপি ৪.৫ শতাংশ কমতে পারে৷ সেখানে চলতি আর্থিক বছরে বাংলাদেশের মাথা পিছু জিডিপি বেড়ে হতে পারে ১,৮৮৮ ডলার৷ অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার কিছু বেশি। ওয়ার্ল্ড আউলুক রিপোর্ট অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি-র ২৩.৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তা দেখেই এই সার্বিক হার এতটা বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের কথায়, আশঙ্কার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের গত ত্রৈমাসিক আর্থিক বৃদ্ধি। এর জন্য কার্যত লকডাউনকেই দায়ী করা হয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার সংকুচিত হলে ভারতে মাথা পিছু জিডিপি দাঁড়াবে ১৮৭৭ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার কিছু বেশি। এই অবস্থায় কেবল বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে টেক্কা দিতে পারে শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং মালদ্বীপের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিও। তবে পাকিস্তান এবং নেপালের থেকে ভারত অবস্থা ভাল থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই বছর মাথা পিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনার কথা আইএমএফ বলতেই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে । অর্থনীতির এই বেহাল দশার জন্য কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বিজেপিকেই দোষ দিয়েছেন। টুইটারে শ্লেষ মিশিয়ে রাহুল পোস্ট করেছেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে হিংসাত্মক জাতীয়তাবাদের ৬বছর পূর্তিতে বড় উপলব্ধি হয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশও ভারতকে পিছনে ফেলার জন্য প্রস্তুত।"
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের রিপোর্টটিও টুইটারে তুলে ধরেছেন। আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় সবচেয়ে গরিব দেশ হওয়ার পথে এগোচ্ছে ভারত। তবে শুধুমাত্র ভারত নয়, করোনার কারণে বিশ্বের অর্থনীতির তাবড় তাবড় শক্তিশগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। তবে এত মন্দার মধ্যেও আর্থিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে পেরেছে করোনার আতুরঘর। যদিও আশার খবরও শুনিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড। আগামী বছরেই ভারত অর্থনীতি ফের ঘুরে দাঁড়াবে এবং চিনের মতো দেশকে পিছনে ফেলে দেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২১ সালে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৮.৮ শতাংশ ছুঁতে পারে বলে মনে করছেন আইএমএফের বিশেষজ্ঞরা।