বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হচ্ছে। এক যুগের রেকর্ড ভেঙে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। এক বছরের ব্যবধানে মানুষের খরচ সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত তিন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। খরচ বাড়লেও আয় বাড়ছে না। এমন সময় কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। কিন্তু তারইমধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে লিপস্টিকের চাহিদা। লিপস্টিকের জোগান দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। অন্যদেশ থেকে বিপুল আমদানি করেও চাহিদা মতো জোগান দেওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি ভয় ধরাচ্ছে সেদেশের রাজনীতির কারবারিদের। মূলত পশ্চিমের ‘লিপস্টিক এফেক্ট’ তত্ত্বের কারণেও ওই ভয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সময় লিপস্টিক তত্ত্ব আলোচনায় আসে। মন্দায় সাধারণত জিনিসপত্রের বিক্রি কমে যায়। তবে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রসাধন কোম্পানি এস্টি লাউডারের চেয়ারম্যান লিওনার্দ লাউডার ঘোষণা দিলেন, এই মন্দায় লিপস্টিক বিক্রি আরও বেড়েছে। তিনি প্রথম ‘দ্য লিপস্টিক ইফেক্ট’ শব্দ ব্যবহার করেন। এই তত্ত্ব খুব জনপ্রিয় হয়। এর নেপথ্যে দুটি জোরালো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
যেমন মানুষের আয় কমলে বিলাসপণ্য কেনার চাহিদা কমে যায়। তবে কম বিলাসপণ্য কেনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে মানুষ। আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, আর্থিক কষ্টের সময় নিজেকে পরিপাটি রাখার মধ্য দিয়ে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে মানুষ। তাতে মন্দার সময় লিপস্টিকের চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে মন্দার আশঙ্কা বা পূর্বাভাস বোঝার জন্য লিপস্টিক বিক্রির ওপর চোখ রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশে পণ্যভিত্তিক খুচরা বিক্রির হিসাব পাওয়া যায় না। তবে আমদানি থেকে লিপস্টিক বিক্রির চাহিদা বাড়ল না কমল, সে সর্ম্পকে ধারণা পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ঠোঁটে ব্যবহারের উপকরণ বা লিপস্টিক-জাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৪০ হাজার ৭৭৫ কেজি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ২৬ হাজার ৮৫৩ কেজি। সরকারি হিসাবে, লিপস্টিক আমদানি ৫২ শতাংশ বেড়েছে। আবার আমদানিমূল্যের হিসাবেও লিপস্টিক আমদানি বেড়েছে। যেমন চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লিপস্টিক আমদানিতে শুল্কায়নমূল্য ছিল ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শুল্কায়নমূল্য ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আমদানিব্যয়ের হিসাবে লিপস্টিক আমদানি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। আমদানি বাড়ায় সরকার আড়াই কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পেয়েছে লিপস্টিক থেকে।
অন্যদিকে, দেশে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা বাড়লেও নিজের এলাকার (রংপুর) মানুষ কষ্টে নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাঁর কথায় এলাকার ‘নারীরা দিনে তিনবার লিপস্টিক লাগাচ্ছেন, চারবার স্যান্ডেল বদলাচ্ছেন।’