হাতে দুটো সুটকেস। পরনে শাড়ি। তাঁর সঙ্গে আর এক মহিলা। শাড়ি পরা সেই মহিল গাড়িতে উঠছেন। দৃশ্যটার কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। ৫ অগাস্ট। বাংলাদেশ থেকে এভাবেই পালিয়ে আসতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। ভারতে আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি। তারপর কেটে গেছে ১০০ টা দিন। ভারতে কড়া নিরাপত্তায় রয়েছেন এখনও। এদিকে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ভারতে চলে আসার পর বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসনে বিপুল রদবদল আসে। সেই দেশের ক্ষমতাভার এখন মহম্মদ ইউনুসের হাতে। তিনিই অন্তর্বতী সরকারের প্রধান।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ, হাসিনা ভারতে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রয়েছেন। তাঁর জন্য সব আঁটসাটো নিরাপত্তার আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যদিও হাসিনা এই প্রথমবার ভারতে আশ্রিত হয়ে রয়েছেন, এমনটা আদৌ নয়। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যকে খুন করা হয় তখনও হাসিনা এদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ভারতে বোন, নিজের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে সেবার ছিলেন তিনি। পরে বাংলাদেশে ফিরে যান ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা বারবার প্রকাশ করেছেন হাসিনা। তবে তখন একবারের জন্যও টের পাননি যে, ফের নিজের দেশছাড়া হয়ে তাঁকে ভারতে ফের আশ্রয় নিতে হবে।
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ নীতি তিনি নিয়েছিলেন। তাঁর একাধিক পদক্ষেপে বাংলাদেশের রপ্তানী বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে সেদেশে। সাধারণ মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে তুলে আনার তাঁর অবদান মনে রাখার মতো।
যদিও বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল বিরোধী দলগুলোর। কারণ, তাদের অভিযোগ ছিল হাসিনা প্রতিবারই দুর্নীতি করে ক্ষমতায় আসছেন, ভোটে জিতছেন। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ও পুলিশের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন তিনি। হাসিনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভকে কাজে লাগায় একটা বড় গোষ্ঠী। হাসিনার কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে একের পর এক আন্দোলন হয়। তবে সেই আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা পায় জুলাই মাস থেকে। কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে মুজিবুর রহমানের দেশে। হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠে। হাজার হাজার মানুষ পথে নামে। পুলিশ তাগের দমনে এগিয়ে এলে অনেকের মৃত্যু হয়। তারপর আন্দোলন আরও দানা বাঁধে। যদিও কূটনেতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাসিনা বিরোধী এই আন্দোলনে মদত দেয় আমেরিকা। তবে এই দাবির কোনও সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন হাসিনাকে নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে। সেখানে তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। তবে ভারত সরকার তাঁকে নিরাপত্তা দিতে কসুর করেনি। শোনা যাচ্ছে, হাসিনাকে ভারতে নিরাপত্তা দিচ্ছে এসপিজি।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর শোনা যায়, তিনি ব্রিটেন যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর আত্মীয় রয়েছে তাই। তবে ভারতে আসার পর থেকে এখানেই রয়েছেন বলে খবর। তবে তিনি কতদিন ভারতে থাকবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ভারতের কোথায় রয়েছেন হাসিনা, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম অসমর্থিত সূত্রকে সামনে রেখে দাবি করে, হাসিনা এমন জায়গাতে রয়েছেন যেখানে সাংসদ ও ভিআইপি-রা থাকেন। হাসিনাকে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। তাঁর নিরাপত্তাও বহু-স্তরীয়।
এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার পর বাংলাদেশে কিছুটা হলেও হাসিনা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের সমর্থনে পথে নেমেছেন অনেকে। আওয়ামি লিগের তরফে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে ট্রাম্পকে। বর্তমান সরকারের নিন্দা করেছে সংখ্যালঘুরা।
তবে হাসিনা কবে বাংলাদেশ ফিরবেন তা স্পষ্ট নয়। যদিও সূত্রের খবর, আওয়ামি লিগ তলায় তলায় ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। হয়তো সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা।