রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে বাংলাংদেশ। শেখ হাসিনা সরকারের অপসারণের দাবিতে পথে নেমেছে যুব সমাজ। গোটা দেশ জ্বলছে ক্ষোভের আগুনে। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছে। এখনও পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশে কমপক্ষে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিজের দেশের মানুষকে এভাবে মরতে দেখে মর্মাহত বাংলাদেশের অভিনেতা-পরিচালকরা। তাঁরা এই সন্ত্রাস থামানোর আকুতি করেছেন সরকারের কাছে। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া পেজের প্রোফাইল লাল করেছেন একাধিক বাংলাদেশী তারকারা। ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা।
মোস্তাফা সারোয়ার ফারুকি
বাংলাদেশের পরিচালক ফারুকি তাঁর ফেসবুক পেজে প্রোফাইল পিকচারের জায়গা লাল করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'সন্ত্রাস থামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আপনাদের কাজ হল, যারাই সন্ত্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো! তা সে যে পক্ষেরই হোক। যার যা মত, তারা তা প্রকাশ করবে, সমাবেশ করবে, মিছিল করবে। কিন্তু পিস্তল দিয়ে, শট গান দিয়ে কোনও জনমত প্রকাশ করা হচ্ছে?' প্রশ্ন তুলে ফারুকী আরও লিখেছেন, 'কালকে লাখ লাখ লোক সমাবেশ করল। দেশাত্মবোধক গান গাইল। আমরা তো তাদের কারও হাতে পিস্তল দূরের কথা, একটা লাঠিও দেখলাম না। আজ কেন এই সন্ত্রাস? কেন ৪২টা (এখন পর্যন্ত হিসাব) লাশ পড়লো?' পোস্টের শেষে বাংলাদেশের পরিচালক বেশ উদ্বিগ্ন সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
জিয়ল ফারুক অপূর্ব
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্ব বাংলাদেশের এই ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন। তিনি প্রথম থেকেই ছাত্রদের সঙ্গে ছিলেন। আগেও অপূর্ব একাধিক পোস্ট করেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আন্দোলনকে তুলে ধরে ক্যাপশনে লিখেছেন স্যালুট বাংলাদেশ।
তৌসিফ মাহবুব
অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, 'যতবার শুনতেছি চোখ ভিজে যাচ্ছে, আমরা দেশটাকে কত ভালোবাসি। সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি…।' এছাড়াও অভিনেতা বিভিন্ন ধরনের সাহায্য করছেন, তাঁর ফেসবুক পেজে রক্তের দরকার আবার কখনও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার নম্বর দেওয়া রয়েছে।
জিয়াউল হক পলাশ
অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ তাঁর প্রোফাইলে বাংলাদেশের পতাকার ওপর একটি ছেলে লাল কাপড়ে চোখ বন্ধ করে আছে, সেরকম ছবি দিয়েছেন। অভিনেতা যে বাংলাদেশের ছাত্রদের সঙ্গেই রয়েছেন তা তাঁর প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যাবে।
নাজিফা তুশি
‘হাওয়া’ খ্যাত নায়িকা নাজিফা তুশির ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইল ছবিতে লালের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ‘ফুলগুলো সব লাল হল কেন?’
বিদ্যা সিনহা মিম
অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমও তাঁর প্রোফাইল লাল করে দিয়ে এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানান।
তানজিন তিশা
অভিনেত্রী তানজিন তিশা তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছে, 'আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা জুলুম করেছিল। সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৩।'
তাসনিয়া ফারিন
অভিনেত্রী তাসনিয়া তাঁর ফেসবুকে পড়ুয়াদের জমায়েত হওয়ার ছবি দিয়ে লিখেছেন, 'এতগুলো দিন পার হয়ে যাওয়ার পর আমার কিছু বলা বা না বলাতে কিছু আসা যায় না। তবু মনে হচ্ছে আমার চুপ থাকাটাকে নিজের কাছে নিজের সহ্য হচ্ছে না। আমি আমার নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নীরব ছিলাম। সাহসের অভাবে নীরব ছিলাম। নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ আমার। গা বাঁচিয়ে একটা দায়সারা বক্তব্য প্রদান করার চেয়ে আমার নীরব থাকাকে শ্রেয় মনে হয়েছে।' এরপর তিনি আরও বলেন, 'আজকে যখন হাজার হাজার মানুষ নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে শহিদ মিনারে জড়ো হল ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদে, তখন নিজের বাসায় বসে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবাটাই হাস্যকর। কারো কোনো সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া আপনারা সাধারণ মানুষ যারা এত সুন্দর করে দেশ সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছেন তারাই আসল সেলিব্রিটি। আমার মতো স্বার্থপর মানুষদের অনেক কিছু শেখার আছে আপনাদের থেকে। হয়ত একদিন আপনাদের মতো আমারও সাহস হবে, কোনো কিছু লিখতে বলতে গিয়ে দশ বার ভাবতে হবে না। এখনও অনেক কথা লিখতে গিয়ে বারবার মুছে ফেলছি। আপনাদের মনে কষ্ট দিয়েছি।আমি ক্ষমাপ্রার্থী।বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে চাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। কেউ পারলে আপনারাই পারবেন।'