দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তির অপেক্ষায় ছিল আমিরের লাল সিং চাড্ডা (Laal Singh Chddha). অবশেষে আজ মুক্তি পেল সিনেমাহলে। ছবি মুক্তির আগে কম বিতর্ক হয়নি। সোশাল মিডিয়ায় বার বার বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমির-করিনা (Aamir Khan Kareena Kapoor) সকলকেই বারবার ছবি দেখার আবেদন করতে হয়েছে। প্রমোশন, পেইড প্রমোশন, প্রপাগান্ডা - নানা ধরনের তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যার জন্য এত কিছু, সেই ছবিটি কেমন (Laal Singh Chddha First Review in Bengla) হল? দেখুন এখানে।
লাল সিং চাড্ডা হলিউড কাল্ট ফিল্ম ফরেস্ট গাম্পের হিন্দি রূপান্তর। ছবিটির স্বত্ব পেতে আমির খানের এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছিল, কিন্তু ছবিটির চিত্রনাট্য মাত্র ১৪ দিনেই প্রস্তুত হয়ে যায়। রিক্রিয়েটেড ছবিগুলিকে প্রায়শই আসল ছবির সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পষ্টতই, সমালোচকরা লাল সিং চাড্ডাকে ফরেস্ট গাম্পের সঙ্গে এবং আমিরকে টম হ্যাঙ্কসের সঙ্গে তুলনা করবেন। এই অর্থে, লাল সিং চাড্ডা এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা প্রচেষ্টা। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
গল্প
ছবিটির গল্প লাল সিং চাড্ডার (আমির খান), যিনি পাঠানকোট শহর থেকে দূরে একটি ছোট গ্রামে থাকেন, যিনি মানসিকভাবে ধীর এবং দুর্বল পায়ের কারণে ফিক্সেশনের সাহায্যে হাঁটেন। লালের মা (মোনা সিং) তাকে ছোটবেলা থেকেই শেখান যে সেও সাধারণ শিশুদের মতো এবং তার মধ্যে কোনও খামতি নেই। স্কুলে লাল সিংকে নানা ভাবে উত্যক্ত করে অন্যান্য ছেলেরা। সেই সময় লালের সঙ্গে রূপার (কারিনা কাপুর খান) দেখা হয়। যে তার শৈশব প্রেমে পরিণত হয়। এখানে লাল ও রূপার জীবনের সফর দেখানো হয়েছে ১৯৭৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত। এদিকে, লাল পঞ্জাব ছেড়ে দিল্লির একটি কলেজে যোগ দেয়, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু, জরুরি অবস্থা, কার্গিল যুদ্ধ, মুম্বইয়ের দাঙ্গা, কংগ্রেস সরকারের পরে বিজেপির আগমন, 26/11 সন্ত্রাসী হামলা, আন্না হাজারের অনশন, স্বচ্ছ ভারত অভিযান - এই সব চলমান সময়কে সাক্ষী রেখে এগিয়ে যায় ছবির গল্প।
পরিচালনা
সমালোচকদের প্রশংসিত চলচ্চিত্র সিক্রেট সুপারস্টার তৈরি করার পর, অদ্বৈত চন্দন ফরেস্ট গাম্পের মতো একটি আইকনিক ছবিতে হিন্দিতে রূপান্তর করার দায়িত্ব নিয়েছেন। ছবির গল্পে কিছু লুপ হোল চোখে পড়বে। প্রথম কারণ ছবিটি দৈর্ঘ্যে বেশ বড়, যার কারণে দ্বিতীয়ার্ধে দর্শকদের বাঁধা কঠিন বলে মনে হয়। দ্বিতীয় ঘাটতি হল ছবির চিত্রনাট্যে, যেটি লিখেছেন করেছেন অভিনেতা ও লেখক অতুল কুলকর্নি। গল্পে এতকিছউ দেখাতে গিয়ে কোথআও যেন খএই হারিয়ে গিয়েছে। আপনি গল্প বুঝতে এতটাই জড়িয়ে পড়েন যে চরিত্রগুলির সঙ্গে মানসিক সংযোগ তৈরি করতে অসুবিধা হয়। বালার (নাগা চৈতন্য) মৃত্যু, লালের দৌড়োদৌড়ি, রূপার সঙ্গে রোমান্স, দাঙ্গার সময় লালের চুল কেটে নিজের পরিচয় গোপন করার মতো কিছু দৃশ্যে আমির অনবদ্য। একই রকম সাবলীল করিনা। মোনা সিংয়ের সঙ্গে লালের ছোটবেলার ট্র্যাকটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মা-ছেলের মানসিক বন্ধন খুব ভালোভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বলা যায়ছবিটি দর্শকদের ভাবতে বাধ্য করবে এবং বড় হলেও তারা এটি উপভোগ করবেন।
অনবদ্য ক্যামেরার কাজ
ক্যামেরায় ছবিটি সুন্দর দেখায়। প্রতিটি ফ্রেম সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ছবিটির চিত্রগ্রাহক সত্যজিৎ পান্ডে তার কাজটি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে করেছেন। সিনেমাটিক দৃষ্টিকোণ থেকে বড় পর্দায় ছবিটি দেখলে ভালো লাগতে বাধ্য। মুম্বইয়ের সরু রাস্তা, পঞ্জাবের সরষের ক্ষেত, দিল্লির ক্যাম্পাস, লাদাখের পাহাড়-নীল আকাশ থেকে কেরালার সাগর পর্যন্ত এই ছবিটি দেশজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। ছবিটির সম্পাদনা ছিল এর ড্র ব্যাক। হেমন্তী সরকার চাইলে এডিট টেবিলে ২ ঘন্টা ৩৯ মিনিটের এই ফিল্মটি একটু ছোট করতে পারতেন। ছবিটি ৭০-এৎ দশক থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সেট করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চরিত্রটিকে বিভিন্ন বয়সের পর্যায়ে দেখাতে হয়েছে, সেখানে তার বার্ধক্য নিয়ে খুব ভালো কাজ করা হয়েছে।
অভিনয়
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র আমির খান তার পারফেকশনের জন্য পরিচিত, আমিরের এই অভিনয়ে তার পারফেকশন দেখা যায়। তবে আমিরের মতো শক্তিশালী অভিনেতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অভিনয়ের প্রচেষ্টা চোখে লাগতে পারে। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য যে গাম্ভীর্যের প্রয়োজন ছিল, তা আমিরের ক্ষেত্রে একটু কম মনে হয়েছে। মাই নেম ইজ খান-এ, শাহরুখ খানও একই রকম একটি চরিত্রের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি এটি অনায়াসে অভিনয় করেছিলেন। অনেক জায়গায় আমির পিকে-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। রূপার চরিত্রে করিনা কাপুর বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। বলা হচ্ছে যে তার চরিত্রটি মনিকা বেদীর জীবনের একটি রেফারেন্স। ছবিতে করিনাকে সুন্দর লাগছে। এই ছবির প্রাণ ছিলেন মোনা সিং, পুরো ছবিতেই তার অভিনয়ের গ্রাফ বাড়ছে। একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মা হিসেবে মোনার অভিনয় চরিত্রটিকে শক্তিশালী করেছে।
কেন দেখবেন
সুপারস্টার আমির খান দীর্ঘদিন পর রুপালি পর্দায় আসছেন, তাই তাকে রূপালি পর্দায় দেখতে যআন। ফরেস্ট গাম্পের প্রতি ট্রিবিউট হিসেবে ছবিটিকে অবশ্যই সুযোগ দেওয়া উচিত। বিনোদন উপভোগ করার জন্য দর্শকদের একটি দীর্ঘ সপ্তাহান্ত আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি যদি মনে করেন যে ছবিটি কিছু দিন পর OTT-তে আসবে, তাহলে আপনাকে এর জন্য ৬ মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে, তাই প্রেক্ষাগৃহে যান এবং উপভোগ করুন।