Advertisement

Amitabh Bachchan: কেরিয়ারের সেই ৭ মোড় যা তাঁকে 'মহানায়ক' বানিয়েছে

অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ার গ্রাফে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কোনগুলি তা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হতে পারে। তবুও, আমাদের মতে, তার ক্যারিয়ারে এমন ৭টি মুহূর্ত রয়েছে, যার কারণে তিনি শতাব্দীর সেরা মেগাস্টারের উপমা পেয়েছেন। এক নজরে দেখে নিন অমিতাভ বচ্চনের অনস্ক্রিন যাত্রার টার্নিং পয়েন্ট যা তাকে মহানায়ক বানিয়েছে।

অমিতাভ বচ্চন
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 11 Oct 2022,
  • अपडेटेड 11:59 AM IST

অমিতাভ বচ্চনের নাম বলার দরকার নেই। শুধু ভারতীয় সিনেমার 'মহানায়ক' বলুন, সবাই বুঝবেন কার কথা বলা হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তারকা আছে, সুপারস্টার আছে, মেগাস্টারও আছে। কিন্তু একজনই সুপারহিরো, অমিতাভ বচ্চন। আর এখন ব্যাপারটা এমন যে একজন তারকা যখন নিখুঁত পারফরম্যান্স দেন, তখন লোকেরা একে 'বচ্চন টাইপ' কাজ বলেন।

বর্তমানে, বেশিরভাগ সিনেমা দর্শক যারা 'তরুণ' ক্যাটাগরিতে পড়েন, তারা হয়তো বচ্চন সাহেবের 'দিওয়ার' 'ডন' 'মুকদ্দর কা সিকন্দর'-এর মতো আইকনিক ফিল্ম থিয়েটারে দেখেননি। বা বচ্চনের জন্য থিয়েটারের বাইরে টিকিটের সারিতে পুলিশের লাঠি খাওয়া লোকের মতো অভিজ্ঞতা নেই।

এই উন্মাদনা এখনও কোনও না কোনও সময় অন্য অনেক তারকাদের জন্য জনসমক্ষে ছিল। তাহলে আমিতাভ বচ্চনকে স্পেশাল বানায় কী? উত্তরটি কেজিএফ-এর মধ্যে রয়েছে যা ট্রেডমার্ক অমিতাভ বচ্চন স্টাইলকে স্ক্রিনে ফিরিয়ে এনেছে - 'কে প্রথমে ধরাশায়ী সেটাই আসল ব্যাপার'! এবং ৫০ বছরেরও বেশি সময় ব্যাপ্ত কেরিয়ারে অমিতাভ বচ্চন কখনই ধরাশায়ী হননি। যখনই মনে হয়েছে যে তিনি অন্য তারকার আলোয় ম্লান হয়ে যাচ্ছেন, তখনই এমনভাবে জ্বলে উঠেছেন যে নজির সৃষ্টি করেছেন।

অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ার গ্রাফে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কোনগুলি তা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হতে পারে। তবুও, আমাদের মতে, তার ক্যারিয়ারে এমন ৭টি মুহূর্ত রয়েছে, যার কারণে তিনি শতাব্দীর সেরা মেগাস্টারের উপমা পেয়েছেন। এক নজরে দেখে নিন অমিতাভ বচ্চনের অনস্ক্রিন যাত্রার টার্নিং পয়েন্ট যা তাকে মহানায়ক বানিয়েছে।


১. আনন্দ

১৯৬৯ সালের নভেম্বরে, মানুষ অমিতাভ বচ্চনকে প্রথমবার পর্দায় দেখে খাজা আহমেদ আব্বাসের 'সাত হিন্দুস্তানি' ছবিতে। মে মাসের শুরুতে, কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেনের 'ভুবন শোম'-এ তার কন্ঠ একজন সহায়ক হিসাবে শোনা গিয়েছিল, কিন্তু পর্দায় তার প্রথম উপস্থিতি ছিল 'সাত হিন্দুস্তানি'তে। ছবিটি আসে এবং অমিতাভের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। কিন্তু একজন অভিনেতার 'ব্রেকআউট' মুহূর্ত দেখে দর্শকরা মোহিত হয়েছিলেন তা তখনও আসেনি।

Advertisement

আর সেই মুহূর্ত আসে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের 'আনন্দ' ছবিতে, ডক্টর ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রে। সেই যুগের সুপারস্টার রাজেশ খান্না এই ছবির প্রধান অভিনেতা ছিলেন এবং আনন্দ তাঁর সুপারহিট চলচ্চিত্র। কিন্তু নতুন অভিনেতা হিসাবে অমিতাভের কাজ দেখে জনসাধারণ বেশ মুগ্ধ হয়েছিলেন। একটি খুব বিখ্যাত উপাখ্যান আছে যে মুক্তির দিন, অমিতাভ যখন গাড়িতে পেট্রোল ভরতে পাম্পে পৌঁছেছিলেন, তখন কেউ তাকে চিনতে পারেনি। কিন্তু ছবিটি আসার কয়েকদিন পর তিনি আবার সেখানে পৌঁছালে লোকজন তাকে চিনতে শুরু করে।


২. জঞ্জির

সেলিম জাভেদ রচিত ও প্রকাশ মেহরা পরিচালিত এই ছবির আগে বহুবার পর্দায় অমিতাভকে দেখা গেলেও এই সিনেমায় তাঁর সম্পূর্ণ নতুন এক অবতার দেখা যায়। 'জঞ্জির' ছবির মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে জনসাধারণ একজন 'অ্যাংরি ইয়াংম্যান'কে নায়ক হিসাবে পান, যার ক্যারিশ্মা দেখে আসুদ্র হিমাচল পাগল হয়ে গিয়েছিল। এটি এমন একটি সিনেমা ছিল যা তাঁকে রাতারাতি জনতার চোখের মণিতে পরিণত করে। এরই আরও একধাপ এগিয়ে তাঁকে দেখা গেল 'দিওয়ার' ছবিতে। সেটাও বিরাট বড় হিট। তবে এই সময়ে তিনি 'বেনাম' এবং 'মজবুর'-এর মতো ছবিও করেছিলেন, যেগুলি তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম জনপ্রিয় হয়েছিল।


৩. শোলে

ভারতীয় সিনেমার অন্যতম আইকনিক ছবি 'শোলে' ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায়। এতেও সেই যুগের বড় তারকা ধর্মেন্দ্র ছিলেন অমিতাভের সঙ্গে। কিন্তু 'শোলে'-তে অমিতাভের 'মুদ্দে কি বাত করো' স্টাইল এবং কমিক টাইমিং তাকে পর্দায় অনন্য করে তুলেছিল। আর তারপর 'কভি কভি' 'অমর আকবর অ্যান্টনি' 'পরবরিশ' 'কালা পত্থর' 'নসিব' 'লাওয়ারিস' একের পর এক সুপার ডুপার হিট ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র যাত্রা পরের দশকে পৌঁছে যায়।


৪. কুলি

১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মনমোহন দেশাই-র বচ্চন চলচ্চিত্রটি অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। সেটে অমিতাভের ভয়াবহ দুর্ঘটনার গল্পটা নিশ্চয়ই সকলে জানেন। ১৯৮২ সালের জুলাই মাসে, সিনেমার এখটি দৃশ্য শ্যুট করার সময় তাঁর আঘাত লাগে। চোট ভীষণ গুরুতর ছিল। তিনি বেশ কিছু সময়ের জন্য কোমায় ছিলেন। লাখ লাখ মানুষ তাঁখে রক্ত দেওয়ার জন্য তাঁকে আবার সুস্থ দেখার জন্য হাসপাতালের বাইরে হত্যে দিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি মানুষের কাছে সুপারস্টার হয়ে উঠেছিলেন এবং মানুষের মধ্যে তাকে নিয়ে ভিন্ন মাত্রার ক্রেজ ছিল।

১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে, তিনি শুটিংয়ে ফিরে আসেন। মানুষের আবেগের অবস্থা এমন ছিল যে, ছবির শেষটাই পাল্টে গেল। প্রথম গল্পে অমিতাভের চরিত্রকে মরতে হয়েছিল, কিন্তু বাস্তব জীবনে অমিতাভ নিজেই যখন মাথা নত করার পরিকল্পনা বাতিল করে দেন, তখন পর্দায় তার চরিত্রকে আর পাবলিকের ভালোবাসায় ছবির শেষটা পাল্টাতে বাধ্য হন পরিচালক মনমোহন দেশাই। জনগণ সেই 'কুলি'কে বহন করেছিল যারা সারা বিশ্বের বোঝা তাদের কাঁধে নিয়ে চলেন। এবার অমিতাভের কেরিয়ারের গাড়ি আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে চলছিল। 'শরাবি' 'মর্দ' 'শাহেনশাহ' ফের হিটের বন্যা। কিন্তু যার উত্থান আছে তার পতনও আছে। এটাই ধর্ম। অমিতাভও পতনের দিন দেখেছেন।


৫. কৌন বনেগা ক্রোড়পতি

৯০-এর দশকে অমিতাভ বেশ কিছউ ফ্লপ সিনেমার অংশ হয়েছিলেন। ফ্লপ চলচ্চিত্রগুলির সংখ্যা কত তা নিয়ে অবশ্য চলচ্চিত্র পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একদিকে 'তুফান' 'অজুবা' 'ইন্দ্রজিৎ'-এর মতো ফ্লপ দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে 'শোলে' শান এবং 'শক্তি' পরিচালক রমেশ সিপ্পির ছবি 'অকেলা'ও মার খায় বক্স অফিসে। এই সময়ের মধ্যে সলমান, শাহরুখ, আমিরের খান ত্রয়ীর বড় পর্দায় জোরালো উপস্থিতি ছিল। অন্য দিকে অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমার এবং সুনীল শেঠির মতো অ্যাকশন তারকাও একের পর সিনেমার অংশ হচ্ছিলেন।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে অমিতাভের গর্বকে ছাপিয়ে বয়সের প্রভাব স্পষ্টভাবে পর্দায় দেখা গিয়েছে। এই সময় তিনি নতুনের চেষ্টা না করে তাঁর পুরনো অবতারকে বারবার উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছেন। 'বড়ে মিয়াঁ ছোট মিয়াঁ' এবং 'মেজর সাহাব' বক্স অফিসে সাফল্য পেলেও, তবে 'লাল বাদশা', 'সূর্যবংশম' এবং অন্যান্য ছবিগুলি ফের ফ্লপ করেছিল।

একই সময়ে, তিনি একটি ব্যবসায়িক ঝুঁকিও নিয়েছিলেন এবং অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড (ABCL) কোম্পানি গঠন করেছিলেন, যা 'মৃত্যুদাতা'এর ব্যর্থতা এবং মিস ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানের স্পনসর করার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে পারেনি। ক্ষতি এতটাই মারাত্মক ছিল যে ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত বম্বে হাইকোর্ট তাঁকে তাঁর বাংলো 'প্রতিক্ষা' এবং দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে নিষেধ করে। এসবের প্রভাবে কাজ পাওয়াও কমে গেল। এসবের মাঝেই অমিতাভ স্বাভাবিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছিলেন যাতে দেখা যায় তিনি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হন, যা নীরবে তার কাজ চালিয়ে গেছে এবং তখন তার ৭৫ শতাংশ লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অবশিষ্ট 25 শতাংশ নিভার এবং জীবনীশক্তি নিয়ে, অমিতাভ ২০০০ সালের জুলাই মাসে একটি ফ্রেঞ্চ দাড়ি রেখে টিভিতে উপস্থিত হন। এটি ছিল একটি খুব জনপ্রিয় ব্রিটিশ গেম শো-এর ভারতীয় সংস্করণ, যেখানে ৪টি বিকল্পের সঙ্গে প্রশ্ন করা হয় এবং সঠিক উত্তরটি পুরস্কার জিতবে। শীর্ষ পুরস্কার ছিল ১ কোটি টাকা এবং শোটির নাম ছিল 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি।' এই অনুষ্ঠান ফের তাঁর স্টারডম এবং তাঁর ক্যারিশ্মাকে প্রত্যেক বাড়ির ড্রইং রুমে পৌঁছে দিয়েছিল।


৬. ব্ল্যাক

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা সমস্যা আছে। মানুষ একজন অভিনেতাকে এক ধরনের চরিত্রেই ভাবতে শুরু করেন। 'মোহাব্বতেঁ'-র পর, 'কাঁটে', 'আঁখে' এবং 'খাকি'-এর মতো বাছাই করা সিনেমা বাদ দিয়ে, তাঁকে কমবেশি বাবা-ভাইয়ের ভূমিকায় দেখা গেছে। এখন তিনি সাপোর্টিং রোল, গল্প কথক ইত্যাদি আরও কাজ করছেন। সঞ্জয় লীলা ভান্সালি ২০০৫ সালে এই ধারণা ভেঙে দেন। এবার অমিতাভের কাজকে ভিন্ন মাত্রায় দেখালেন পরিচালক এবং মানুষ দেখলেন যে অভিনেতার ক্ষেত্রে প্রতিভা বয়সের ধার ধারে না।

অমিতাভ বচ্চন 'অগ্নিপথ'-এর জন্য ১৯৯০ সালে 'সেরা অভিনেতা'-এর জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন, ১৫ বছর পর তাঁর দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কার পান। এই ছবি থেকে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য জায়গা অধিকার করেন। এখান থেকে আবারও তাঁর জয়যাত্রা নতুন করে শুরু হয়।

 

৭. পিকু

'ব্ল্যাক' থেকে অমিতাভের গেম চেঞ্জের সুবিধা ছিল যে এখন তাকে মাথায় রেখে চরিত্রগুলি লেখা হতে শুরু করে। একদিকে যখন তিনি 'কভি আলবিদা না কেহনা' এবং 'ভূতনাথ'-এর মতো হিট ছবিতে ছিলেন, 'পা'-তে তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় তাঁকে 'সেরা অভিনেতা'-এর জন্য আরেকটি জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়। এর সঙ্গে 'আরক্ষণ', 'সত্যাগ্রহ'-এর মতো শক্তিশালী কাজও চলতে থাকে। এভাবেই কেটে গেল আরও এক দশক।

পরিচালক সুজিত সরকার আবার তার ভিতরের অভিনেতা এবং ইরফান খানকে চ্যালেঞ্জ করলেন, দীপিকাকে 'পিকু'-তে কাস্ট করা হল। এবার বচ্চন সাহেবের চরিত্রের নাম আবার সেই একই, যা ৪৬ বছর আগে 'আনন্দ'-এ পাওয়া গিয়েছিল- ভাস্কর ব্যানার্জি। ২০১৫ সালে 'পিকু' দেখে, সমালোচকরা আবার 'মহানায়ক'কে স্যালুট করেছিলেন এবং তিনি আবার 'সেরা অভিনেতা'-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার পান।

Advertisement

২০০০ সালে, যখন লোকেরা তার ক্যারিয়ার 'ওভার' হওয়ার কথা বলতে শুরু করেছিল, তখন থেকে ৩টি জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন অমিতাভ বচ্চন। 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'-র ১৪তম সিজনেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ২০২২ সালের সবচেয়ে বড় বলিউড ফিল্ম 'ব্রহ্মাস্ত্র'-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। বর্তমানে 'গুড বাই' ছবিতে থিয়েটারে তাঁকে দেখা যাচ্ছে, যা রশ্মিকা মান্দানার প্রথম বলিউড ছবি।

তার ছবি 'উঁচাই' বছরের শেষে মুক্তি পাবে। ২০২৩ সালে প্রভাস, দীপিকা পাদুকোনের সঙ্গে বড় ছবি 'প্রজেক্ট কে'-তেও তার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আজ যখন বচ্চন সাহেব ৮০ বছর পূর্ণ করছেন, তখন তাঁর সাফল্যের এই বাঁকগুলি অতিক্রম করে, তাঁর উচ্চতা এবং ওজনদার আওয়াজে বলেছেন – 'এমনি এমনি আমাকে সুপারহিরো বলা হয় না'!

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement