রাখি বন্ধন উৎসবের কথা (Raksha Bandhan) মাথায় রেখে খিলাড়ি কুমার (Akshay Kumar) তার পর্দার ইমেজের বিপরীতে ভাই-বোনের ওপর ভিত্তি করে একটি ছবির উপহার নিয়ে এসেছেন। ভাই-বোনের বন্ধনকে কেন্দ্র করে এই ছবিতে বিরাট সংখ্যক দর্শকের কথা মাথায় রেখে কমেডি, মেলোড্রামা, আবেগের চূড়ান্ত ককটেল দেওয়া হয়েছে। তবে সিনেমাটি কি আদৌ উতরোতে পারল? দেখে নিন রিভিউ।
গল্প
লালা কেদারনাথ (অক্ষয় কুমার) দিল্লির চাঁদনি চকে গোলগাপ্পা ও চাটের দোকান চালান। গোটা দিল্লিতে খবর রটে যায় যে গর্ভবতী মহিলারা এখানকার ফুচকা খেযলেই ছেলের জন্ম দেন। এদিকে লালার চার বোন, যাদের বিয়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। লালার তাঁর মৃত মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে চার বোনের বিয়ে দেওয়ার পরই তিনি বিয়ে করবেন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে চার বোনের বিয়ে এবং তাদের যৌতুক নিয়ে ভাবতে ভাবতে লালা এবং তার বান্ধবী স্বপ্নার (ভূমি পেডনেকর) সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি করে। এদিকে লালার বড় বোন গায়ত্রীর (সাদিয়া খতিব) বিয়ের কথা পাকা হয়। বোনকে অনেক যৌতুক দিয়ে সে তাকে শুবশুরবাড়িতে পাঠায়। এদিকে লালা অন্য তিন বোনের বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু করে। বাকি বোনদের বিয়ে দিয়ে কি সে তার বান্ধবীকে বিয়ে করতে পারবে? এটা জানতে হলে থিয়েটারে আপনাকে যেতে হবে।
পরিচালনা
চলচ্চিত্রের পরিচালক আনন্দ এল রাই তার চলচ্চিত্রে নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের জন্য পরিচিত। তনু ওয়েডস মনুর তনু হোক বা রাঞ্ঝনার জোয়া বা গুডলাক জেরির জেরি, তার ছবিতে নারীদের সবসময়ই শক্তিশালী চরিত্রে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই ছবিতে নারী চরিত্রদের বাকি ছবির তুলনায় বিপরীত। এখানে না বোনেদের প্রভাব আছে না প্রেমিকা ভূমি কিছু জাদু তৈরি করতে পেরেছেন। ছবির প্রথমার্ধের প্লটটি একটি প্রাচীনপন্থী মানসিকতার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অক্ষয়কে পণের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি দিতে দেখা যায়। পাড়ায় সিটি মেরে ঘুরে বেড়ানো ছেলেকে বিয়ে করতে বলে, অমাবস্যার রাত, ডবল ডেকার ইত্যাদি শব্দ আজকের যুগে নিজের বোনদের বলতে দ্বিধা করেননি অক্ষয়। বডি শেমিং থেকে বর্ণ বিদ্বেষ, পণ প্রথা ইত্যাদিকে এখানে মহান হিসাবে প্রোজেক্ট করা হয়েছে। দর্শকদের মনে গেঁথে থাকা এই চিন্তাধারা দ্বিতীয়ার্ধে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পরিচালক এবং লেখক কণিকা ধিলোন এখানে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। এ কারণে দ্বিতীয়ার্ধ যথেষ্ট আবেগপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও দর্শকমনে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। কখনও কখনও গল্পটি এত মেলোড্রামাটিক মনে হয় যে আপনি এটিকে ডেইলি সোপের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। ভাইয়ের কিডনি বিক্রি করে যৌতুকের টাকা জোগাড় করাটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। আমাদের সমাজে, যৌতুকের বিষয়টি এতই সংবেদনশীল যে দর্শকদের একটা অংশ অবশ্যই রিলেট করতে পারবেন। গল্পটি একটি ভালো উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে পর্দায় শুধুমাত্র অক্ষয়ের উপস্থিতি বেশ বিরক্তিকর। ছবিতে বোনদের কাস্টিং এর শক্তিশালী দিক।
প্রযুক্তিতে মোটামোটি
চাঁদনি চকের সরু রাস্তা এবং দিল্লির ফ্লেভার ক্যামেরাবন্দি করেছেন চিত্রগ্রাহক কে ইউ মোহনন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘর রুপোলি পর্দায় স্পষ্ট দেখা যায়। ছবিটির সম্পাদনা করেছেন হেমল কোঠারি এবং প্রকাশ চন্দ্র সাহু, যারা তাদের কাজটি শালীনভাবে করেছেন। আর্ট ডিজাইনার রচনা মন্ডল তার সেটের মাধ্যমে দিল্লি দেখানোর ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল হয়েছেন। ছবির মিউজিক দিয়েছেন হিমেশ রেশামিয়া। হিমেশ ও অক্ষয় কুমারের জুগলবন্দি মিউজিকের দিক থেকে অসাধারণ। চলচ্চিত্রের মধ্যে গান নির্বাচন মোটামোটি, গল্পের আবেগগুলি গানের মাধ্যমে বর্ণনা করার চেষ্টা হয়েছে।
অভিনয়
পুরো ছবিতেই অক্ষয় কুমারকে দেখা গেছে। তার কমিক টাইমিং আপনাকে অনেক জায়গায় সুড়সুড়ি দেবে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি হতাশ বোধ করেন। অক্ষয়ের বোনেরা অসাধারণ কাজ করেছে। বড় বোন হওয়া সাদিয়া খতিব এই ছবির টার্নিং পয়েন্ট। ছবিতে তার অভিনয় খুব সাবলীল। অন্যদিকে, অন্য তিন বোন দীপিকা খান্না, সহেজমিন কৌর, স্মৃতি শ্রীকান্ত তাদের চরিত্রের সুর ধরেছেন এবং তাদের চরিত্রটি ভালোভাবে অভিনয় করেছেন। যখনই ভূমি পেডনেকার পর্দায় এসেছেন, তিনি তার অভিনয়ের ছাপ রেখে গিয়েছেন। ভূমির মতো অভিনেত্রীকে আরও বেশি জায়গা দেওয়ার অবসর ছিল।
কেন দেখবেন বা দেখবেন না
এই ছবিটি রক্ষাবন্ধন উপলক্ষে ভাই-বোনদের জন্য একটি ট্রিট হতে পারে। আপনি আপনার বোনকে উপহার হিসাবে এই ছবিটি দেখাতে নিতে পারেন। লেখক-পরিচালকের প্রচেষ্টায় এই ছবিতেও সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। বোনদের সঙ্গে অক্ষয় কুমারের বন্ধন পর্দায় তাজা, যা দর্শকদের জন্য একটি ট্রিট হতে পারে। ওয়ান টাইম ওয়াচ ফিল্ম। তবে এর জন্য আপনাকে ডাই-হার্ড অক্ষয়ের ফ্যান হতে হবে। না হলে এই ছবি দেখার বিশেষ কোনও কারণ নেই।