মাত্র ৫৪-তেই চলে গিয়েছেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপান, বা যাকে আমরা শ্রীদেবী বলেই চিনি। মাত্র ৪ বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসাবে তামিল ছবিতে অভিনয় শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে তামিলের গণ্ডি ছাড়িয়ে তেলুগু এবং হিন্দি সিনেমাতেও রীতিমতো সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। ১৯৭৫ সালে তৈরি জুলি তাঁর প্রথম হিন্দি সিনেমা। যদিও সেখানে তিনি পার্শ্ব চরিত্রেই ছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিনয় দাগ কেটে গিয়েছিল দর্শক মনে। এর পর একে একে ব্লকবাস্টার সিনেমা সদমা, নাগিনা, চান্দনি, চালবাজ, জুদাই-এ অভিনয় করেন তিনি। মাঝে বেশ কয়েক বছর রুপোলি পর্দা থেকে সরে ছিলেন। সন্তানদের বড় করার পর ফের একবার পা রাখেন তাঁর চেনা পরিচিত জগতে। ২০১৩ সালে কামব্যাক করেন ইংলিশ ভিংলিশ ছবিতে। এর পর ২০১৮ সালে মম। এটাই ছিল তাঁর শেষ ছবি।
তাঁর এত জমকালো কেরিয়ারে লমহে কিন্তু ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে। অন্তত দর্শকদের পছন্দের বিচারে তো বটেই। এখন কাল্ট হিসাবে গণ্য হলেও ১৯৯১ সালে এমন একটি সিনেমার জন্য বোধহয় ভারতীয় দর্শকরা তৈরি ছিলেন না। বিশেষত ছবির বিষয় যখন অসম বয়সের প্রেম। বরাবরই বিতর্কিত বিষয়। বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে। ৩০ বছর আগে একে ট্যাবুর চেয়ে কম কিছউ ভাবা হত না, বা যেত না। কিন্তু এই বিষয়কে বেছে নিয়েই সিনেমা বানিয়েছিলেন যশ চোপড়া। তৎকালীন অন্যতম হিট জুটি অনুল কাপুর এবং শ্রীদেবীকে নিয়ে এই সিনেমা বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে টাইমলেস ক্লাসিকের তকমা পেয়েছে সিনেমাটি। আজ শ্রীদেবীর তৃতীয় মৃত্যুদিনে আরও একবার ফিরে দেখা এই ছবিকে।
রাজস্থানের বড় জমিদার পরিবারের ছেলে বীরেন সদ্য লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁর জন্মের আগেই গোটা পরিবার লন্ডনে চলে যায়। পৈত্রিক ভিটেতে ফিরে পাশের বাড়ির পল্লবীকে ভালোবেসে ফেলেন বীরেন। পল্লবী তাঁর চেয়ে তখন বয়সে খানিকটা বড়। বীরেন কিছুতেই নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে পারেন না পল্লবীর কাছে। হঠাৎ পল্লবীর বাবা মারা যান এবং বহুদিনের প্রেমিক সিদ্ধার্থকে বিয়ে করেন পল্লবী। তাঁদের এক মেয়ে পূজা। তাঁর ভাগ্য খুব একটা প্রসন্ন ছিল না। পথ দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারায় সে। বীরেনের দাই মা তাকে বড় করে তোলেন। বীরেন ফিরে যায় লন্ডনে।
পূজা বড় হয়ে একেবারে তাঁর মায়ের মতো দেখতে হয়। বীরেনের হাভেলিতে বড় হয়ে ওঠার সময় ছবিতে দেখে বীরেনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠে পূজা। এর পর লন্ডনে গিয়ে বীরেনের সঙ্গে দেখা করে সে। সেখানেই প্রেম আরও গাঢ় হয়। অন্যদিকে অবিবাহিত বীরেন তাঁর প্রেমিকার মেয়ের মধ্যে নিজের হারানো প্রেম দেখলেও লোকচক্ষুর ভয়ে, সমাজের ভয়ে কিছু বলতে পারে না। বরং বারবার দূরে সরিয়ে রাখতে চায় তাঁকে। কিন্তু প্রেম তো বিধি নিষেধ মানে না। সিনেমার শেষে ঠিক তার পথ খুঁজেই নেয় ভালোবাসা।
সিনেমায় ডাবল রোলে অভিনয় করেন শ্রীদেবী। বীরেনের চরিত্রে ছিলেন অনিল কাপুর। এ ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রে ওয়াহিদা রহমান, অনুপম খেরে মতো অভিনেতারা সিনেমাকে আরও উপভোগ্য করে তোলেন। দর্শকদের ভালোবাসা না পেলেও অ্যাওয়ার্ড ফাঙ্কশনে কিন্তু বেশ সারা ফেলেছিল লমহে। শ্রীদেবী সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন। সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার পান অনুপম খের। এ ছাড়া সে বছরের সেরা ছবি, সেরা গল্প, সেরা কস্টিউম এবং সেরা সংলাপের পুরস্কার পায় লমহে।