সিনেমার পর্দায় প্রথমবার অর্গাজমের দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। আবার সেই অভিনেত্রীই এমনই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন, যা আজকের Wifi-এর মূলে। এমনই সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী গুণের মানুষ ছিলেন হেডি লামার।
পর্দায় তাঁর সৌন্দর্যে দর্শকদের মোহিত করেছিলেন। সম্পূর্ণ নগ্নতা, যৌনতার দৃশ্য করে চমকে দিয়েছিলেন তখনকার দর্শকদের।
চেকস্লোভাকিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্ম। ছোট থেকেই সৌন্দর্য্যের জন্য তাঁর খ্যাতি ছিল। সেই কারণেই সিনেমাতেও অভিনয় শুরু।
১৯৩৩ সালে চেকস্লোভিয়ায় তাঁর সিনেমা 'এক্সটসি'-তেই প্রথমবার পর্দায় কোনও মহিলার অর্গাজম দেখানো হয়েছিল। আর তারপরেই সৌন্দর্য্য ও যৌনতার আইকন হয়ে ওঠেন হেডি লামার।
এরপর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই অস্ট্রিয়ার এক ধনকুবেরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সেই ব্যক্তিই আবার অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। হিটলার ও মুসোলিনিকে অস্ত্র বিক্রি করে বড়লোক হয়েছিলেন। যদিও সেই সংসারে অখুশি ছিলেন হেডি। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই বাড়ি থেকে পালিয়ে মার্কিন মুলুক পাড়ি দেন।
এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে অভিনয়ের কেরিয়ার শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সাফল্য পান। তবে শুধুমাত্র সুন্দরী, সাহসী অভিনেত্রীই নন। তাঁর আরও এক পরিচয় ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তখন নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেভাবে হোক মার্কিন পক্ষের পাশে দাঁড়াতে চাইছিলেন হেডি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে ব্যবহৃত গোপন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ধরে ফেলছিলেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। আর তাতে আঘাত হানার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত প্ল্যান ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল।
সুরকার জর্জ অ্যানথিলের সঙ্গে নিয়মিত পিয়ানো বাজাতেন হেডি। ছোটবেলায় ইঞ্জিনিয়ার বাবার কাছে প্রযুক্তির পাঠ নিয়েছিলেন। পিয়ানো বাজানো থেকেই তাঁর মাথায় আসে নতুন বুদ্ধি। তিনি দেখেন যদি ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার উভয়ই একইসঙ্গে এক ফ্রিকোয়েন্সি থেকে অন্য ফ্রিকোয়েন্সিতে জাম্প করে, এমনভাবে যদি ইনস্টল করা হয়, তাহলে হ্যাকার/জ্যামার সিগন্যালটি কোথায় তা জানতে পারবে না। হ্যাকার বা জ্যামার যদি সিগন্যাল জ্যাম করে তাহলে ততক্ষণ সিগন্যাল অন্য ফ্রিকোয়েন্সিতে চলে যাবে।
হেডি লামার তাঁর এই আবিষ্কারের নাম দেন 'ফ্রিকোয়েন্সি হপিং স্প্রেড স্পেকট্রাম'।
তবে হেডির এই আবিষ্কার যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়নি। একে অস্ট্রিয়া থেকে এসেছেন। তার উপর সিনেমার অভিনেত্রী। সেভাবে তাঁর আবিষ্কারকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।
তবে আজ Wi-Fi, GPS এবং ব্লুটুথের মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ভিত্তিই এই ফ্রিকোয়েন্সি হপিং প্রযুক্তি।
হেডি লামারের জীবনকাহিনী হলিউডের স্টিরিওটাইপকেই ভেঙে চুরমার করে দেয়। এটাই প্রমাণ করে যে যৌন আবেদন গ্ল্যামারের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল তাঁর দুর্দান্ত বিজ্ঞানীর মন। আমাদের অজান্তেই তাই সকলের মাঝে জড়িয়ে হেডি।