ছোটপর্দার অত্যন্ত চেনা মুখ দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়। শুধু বাংলা নয়, এখন তিনি কাজ করছেন হিন্দি সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র রূপে। এবার তিনি মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যা বালানদের মতো অভিনেত্রীদের জুতোয় পা গলালেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্পের নায়িকা দেবচন্দ্রিমা। ১৫ অগাস্ট থেকে হইচই-তে স্ট্রিমিং হবে 'পরিণীতা'। অদিতি রায় পরিচালিত এই সিরিজে ললিতা রূপে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে। মেগা সিরিয়ালের ব্যস্ততার মাঝে, মুম্বইয়ের শ্যুটিং ফ্লোর থেকে বাংলা ডট আজতক ডট ইন-এর সঙ্গে আড্ডার মাঝে ললিতা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন দেবচন্দ্রিমা।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
দেবচন্দ্রিমা: ভাল আছি।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে কলকাতা- মুম্বই মিলিয়ে আপনি তো খুবই ব্যস্ত। কাজ- কর্ম কেমন চলছে?
দেবচন্দ্রিমা: কাজ- কর্ম আপাতত খুবই ভাল চলছে। কলকাতাতেও 'পরিণীতা' রিলিজ করবে। এছাড়া একটা হিন্দি টেলিভিশন শো করছি। এই মুহূর্তে সবটা ভাল ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন: কলকাতাকে মিস করেন?
দেবচন্দ্রিমা: আমি কলকাতার খাওয়াদাওয়া প্রচণ্ড মিস করি। এখানে ওই ফ্লেবারটাই পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন: আপনি নিজে রান্নাবান্না করেন ওখানে?
দেবচন্দ্রিমা: না না, আমার কলকাতার কুক এখানে চলে এসেছেন। যার ফলে এখন তাও একটু বাংলার খাবার খেতে পারি। তিন মাস ধরে কিছু খেতেই পারছিলাম না।
প্রশ্ন: হিন্দি টেলিভিশনে আপনার কাজ বেশ প্রশংসিত। কেরিয়ারে শুরুতে ভেবেছিলেন জাতীয় স্তরে কাজ করবেন?
দেবচন্দ্রিমা: হ্যাঁ আমার প্ল্যানিং ছিল। এক- দেড় বছর ধরে আমি চেষ্টা করছিলাম বম্বেতে আসার, কাজ করার। এই জন্যেই বাংলা টেলিভিশন থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। যাতে এখানে আমি চেষ্টা করতে পারি। আগেও হিন্দিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু আমি একবার করতে পারিনি শরীর খারাপ থাকার জন্য, আরেকবার একটা প্রোজেক্ট চলার জন্যে। আমি তখনই ভেবে নিয়েছিলাম একটা বিরতি নেওয়া জরুরি। একটা বছর বাংলা টেলিভিশনের কাজ করিনি, হিন্দির কাজ করার জন্য।
প্রশ্ন: বাংলা টেলিভিশনে ফিরবেন এরপর?
দেবচন্দ্রিমা: বাংলা টেলিভিশনে ফেরার এই মুহূর্তে কোনও প্ল্যানিং নেই। যেহেতু, একটা হিন্দি শো করছি। তবে বাংলায় কাজ করার প্ল্যান আছে। ভাল ওয়েব সিরিজ বা সিনেমার অফার পেলে অবশ্যই করব। আমার কেরিয়ার যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেই জায়গাটার অগ্রাধিকার অবশ্যই আমার কাছে থাকবে। তবে গল্পটা যদি ভাল লাগে, তবেই করব।
প্রশ্ন: ছোট পর্দা, বড় পর্দা, ওটিটি- তিন মাধ্যমেই কাজ করছেন। কোনটায় কাজ করতে বেশি ভাল লাগছে?
দেবচন্দ্রিমা: ওটিটি-র কাজ বেশি ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: 'পরিণীতা'-র ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
দেবচন্দ্রিমা: 'পরিণীতা' আমার খুব কাছের একটা প্রোজেক্ট। এই কাজটার জন্যে আমি নিজে ভীষণ পরিশ্রম করেছি। আমাদের গোটা ইউনিট ভীষণ পরিশ্রম করেছে। এই মুহূর্তে খুব ভাল প্রতিক্রিয়া। সবার খুব লেগেছে। শুধু আমিই জানি, আমি 'পরিণীতা'-র জন্যে কতটা পরিশ্রম করেছি, কতটা খেটেছি। এমনকী অদিতিদিও (অদিতি রায়) বলেছে, চিন্তা না করতে, কাজটা ভাল হয়েছে। পরিচালকের থেকে এটা শুনতে পাওয়া মানে বড় ব্যাপার।
প্রশ্ন: আপনার লুকটাও অন্য রকম। এভাবে আগে দর্শক কখনও দেখেনি...
দেবচন্দ্রিমা: হ্যাঁ চেষ্টা করেছি। আমার হেয়ার, মেকআপ, লুক সবটাই এভাবেই রাখার চেষ্টা হয়েছে, যাতে আমাকে 'ললিতা' মনে হয়।
প্রশ্ন: ললিতা হয়ে ওঠার মতো এত বড় একটা দায়িত্ব। কী ভেবে এরকম সাহিত্য নির্ভর একটা কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন?
দেবচন্দ্রিমা: আমার কাছে দু'বার ভাবার কোনও অপশন ছিল না। কারণ 'পরিণীতা'-র মতো একটা প্রোজেক্ট করব, এটা কোথাও গিয়ে আমারও একটা স্বপ্ন ছিল। যখন শ্রীকান্ত স্যার (শ্রীকান্ত মোহতা) আমায় প্রস্তাব দেন, আমি উল্টে প্রশ্ন করি, এই চরিত্রের জন্যে আমি ঠিক চয়েজ তো? আমি কাজটা করতে চাই, কিন্তু এত বড় একটা দায়িত্ব তাই ভাবছিলাম। অদিতিদি সেই সময় বলেছিলেন, আমার মুখের সঙ্গে এই চরিত্রটা খুব মানাবে। তখন আমি ওদের বলি, তাহলে বাকিটা আমার দায়িত্ব আমি কীভাবে ললিতা হয়ে উঠব।
প্রশ্ন: ওজন বাড়াতে হয়েছিল?
দেবচন্দ্রিমা: হ্যাঁ। শ্রীকান্ত স্যার আমায় বলেন, একটু ওজন বাড়াতে হবে। আমি বলেছিলেন, এটা কোনও ব্যাপারই না। দু'দিন বিরিয়ানি খাবো, এমনিই হয়ে যাবে (হেসে)।
প্রশ্ন: আর কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ললিতা হয়ে ওঠার জন্য?
দেবচন্দ্রিমা: ওজন বাড়ানো ছাড়াও আরও একটা দাবি ছিল টিমের তরফে। আমাদের সংলাপ লিখেছেন শর্বরী ঘোষাল। শর্বরীদি আমায় বলেছিল স্ক্রিপ্ট একটুও পাল্টানো যাবে না। আমি প্রমিস করেছিলাম সেটাই হবে। আমি কুড়ি- পঁচিশ দিন সময় পেয়েছিলাম। এমনভাবে স্ক্রিপ্টটা মুখস্থ করেছিলাম যে, সবার লাইন বলে দিতাম। প্রতিটা পাতায় কোথায়- কী লেখা আছে আমার সবটা মুখস্থ ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্ক্রিপ্ট পড়তে বসতাম। এরপর দুপুরে শর্বরীদি'র কাছে গিয়ে পড়তে বসতাম। এছাড়া ওই অঙ্গভঙ্গি রপ্ত করার জন্য বাড়িতে শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াতাম একটা মাস।
প্রশ্ন: এই ধরণের কাজের কাটা- ছেঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনিও ভয় পান?
দেবচন্দ্রিমা: জানি না। এখনও অবধি সেই দিকটাতে মাথা লাগানোর মত সময়- সুযোগ পাইনি। শুধু এইটুকু বলতে পারি, আমি প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি। 'পরিণীতা'-র জন্য আমি যা খেটেছি, তা আর কোনও প্রোজেক্টের জন্য করিনি। সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, কেউ যদি সমালোচনা করে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমি জানি, নিজের সেরাটা দিয়েছি।
প্রশ্ন: এর আগে একাধিক অভিনেত্রীকে 'ললিতা' চরিত্রে দেখা গেছে। আপনি কারও থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন?
দেবচন্দ্রিমা: আমি ছবিটা দেখেছি, কিন্তু বারবার দেখিনি। কারণ বারবার কোনও কিছু দেখলে সেটা কপি করার একটা প্রবণতা এসে যায়। আমি বইটা অনেক বেশি পড়েছিলাম।
প্রশ্ন: 'পরিণীতা'-তে কাজ করার পর দেবচন্দ্রিমার জীবন কতটা পাল্টালো?
দেবচন্দ্রিমা: একটাই জিনিস আমার মনে হয়েছে 'পরিণীতা' করার পরে, তুমি চাইলে সব করতে পারো। যখন আমার কাছে প্রথম স্ক্রিপ্টটা এসেছিল, আমি ভাবছিলাম 'পরিণীতা' করতে পারব না। আমার ভয়ে হাত- পা কাঁপছিল। স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের সময় গৌরবদা'র (গৌরব চক্রবর্তী) গলা শুনে আমার মনে হচ্ছিল, এই লোকটার সামনে আমি দাঁড়াতেই পারব না। প্রত্যেকেটা দৃশ্যে আমায় খেয়ে বেড়িয়ে যাবে। এরকম অভিজ্ঞ- ভাল অভিনেতার সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে, আমায় যে পরিশ্রম করতে হবে আমি বুঝে গিয়েছিলাম এবং সেটাই করেছি। যখন কাজটা শেষ হল, আমার একটুও মনে হয়নি, আমি কাজটা খারাপ করেছি।
প্রশ্ন: দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
দেবচন্দ্রিমা: আমি সৎভাবে এতদিন অবধি সব কাজ করে এসেছি। এই কাজটাও সৎভাবে করেছি। 'পরিণীতা' দেখুন সবাই। আমি আরও যা যা কাজ করছি, দেখুন। আমায় অনেক অনেক আশীর্বাদ করুন, যাতে আরও অনেক কাজ করতে পারি।