উদাত্ত কণ্ঠ, মায়াভরা সুরের জাল, দশকের পর দশক ধরে যাঁর সেইসমস্ত মন চুরি করা গান আজও গেঁথে রয়েছে শ্রোতাদের অন্তরে, দেশের উত্তরপূর্বের এক রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের রত্ন, তিনি ভূপেন হাজারিকা (Bhupen Hazarika)।
১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অসমের সদিয়াতে (Assam Sadiya) জন্ম ভূপেন হাজারিকার। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকেই শিল্পচর্চার সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রাখেন তিনি।
যখন তাঁর বয়স ১০, তখনই গান লিখে তাতে সুরও দিয়ে ফেলেন ভূপেন হাজারিকা। ১২ বছর বয়সে অসমীয়া ছবি ইন্দুমালতীতে গানও করেন ছোট্ট ভূপেন। গানের পাশাপাশি শিশুশিল্পী হিসেবে যুক্ত হন অসমের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গেও। পরবর্তীকালে অসমীয়া চলচ্চিত্রের একজন প্রথম সারির পরিচালকও হয়ে ওঠেন তিনি।
জীবনে বহু গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন ভূপেন হাজারিকা। বিশেষত তাঁর গলায় লোকগান শ্রোতাদের কাছে আজও একইরকম জনপ্রিয়। তাঁর গানের কথায় একদিকে যেমন প্রায়শই ধ্বনিত হয়েছে মানবপ্রেম, অন্যদিকে তেমনই ঝরে পড়েছে সামাজিক শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
কখনও তিনি সুরের ভেলায় ভাসতে ভাসতে হয়ে উঠেছেন যাযাবর, কখনও আবার গানের মাধ্যমেই দিয়েছেন জীবনকে খুঁজে নেওয়ার বার্তা, মানুষকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা।
শুধু অসম নয়, পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ, এমনকী প্রতিবেশী বাংলাদেশেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাই তো গঙ্গার মতো পদ্মাকেও মা বলে ডেকেছেন শিল্পী ভূপেন হাজারিকা।
শিল্পী জীবনে শ্রোতাদের ভালবাসার পাশাপাশি পেয়েছেন বহু পুরস্কারও। যার মধ্যে অন্যতম পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। এছাড়া ২০১৯ সালে তাঁকে মরণোত্তর ভারত রত্নও প্রদান করে ভারত সরকার।