দেশের সিনেমা হলগুলো থেকে মোটা টাকা কামিয়েছে KGF সিরিজের দুটি ছবি। দেশের চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় 'সালাম রকি ভাই'! কন্নড় পরিচালক প্রশান্ত নীলের ছবি KGF সারা দেশেই বেশ সারা জাগিয়েছে। সুপারস্টার যশের ছবিটি কর্ণাটকের কোলারে অবস্থিত সোনার খনির উপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও এর গল্প ও চরিত্রগুলো সম্পূর্ণ কাল্পনিক। অনেকেই হয়ত KGF দেখেছেন, কিন্তু কোলার খনির আসল গল্পটা খুব কম লোকেই জানেন।
কবে, কীভাবে কর্ণাটকের কোলারে সোনার খনির আবিষ্কার হল? এখান থেকে কত সোনা তোলা হয়েছে? এখন কোলারে সোনার খনিটির কী অবস্থা? চলুন জেনে নেওয়া যাক আসল KGF (Kolar Gold Fields)-এর অজানা কাহিনি...
আরও পড়ুন: আজ বেশ কিছুটা সস্তা হল সোনা, রুপো
কর্ণাটকের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে কোলার জেলায় অবস্থিত এই সোনার খনিটি। কোলার বেঙ্গালুরুর থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত। কোলার গোল্ড ফিল্ড হল বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম সোনার খনি, প্রথমটি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের দক্ষিণ-পশ্চিমে পোনেং-এ অবস্থিত।
ব্রিটিশ সরকারের লেফটেন্যান্ট জন ওয়ারেন চোল রাজবংশের কিংবদন্তি কাহিনি শুনেছিলেন যে এখানকার লোকেরা খালি হাতেই সোনা খনন করত। এই কাহিনিতে মুগ্ধ হয়ে ওয়ারেন গ্রামবাসীদের বলেন, যে এই খনি থেকে যে সোনা তুলে দেখাবে, তাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
পুরস্কার পাওয়ার লোভে গ্রামবাসীরা লেফটেন্যান্ট ওয়ারেনের সামনে মাটি ভর্তি একটি গরুর গাড়ি নিয়ে আসে। ওই মাটি জলে ধুতেই বেশ কিছুটা সোনার হদিস পাওয়া যায়। এর পরই এখানে সোনার খোঁজ শুরু করেন ওয়ারেন। সেই সময় ওয়ারেন প্রায় ৫৬ কেজি সোনা বের করেছিলেন। ১৮০৪ সাল থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত সোনার জন্য এখানে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল, কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি।
১৮৭১ সালে কোলারে গবেষণা পুনরায় শুরু হয়। মাইকেল ফিটজেরাল্ড লেভালি, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সৈনিক যিনি ১৮০৪ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে ভারতে এসেছিলেন, 'এশিয়াটিক জার্নালে' প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ার পর কোলার গোল্ড ফিল্ড সম্পর্কে খুব কৌতুহলি হয়েছিলেন।
এর পর ভারতে এসে বেঙ্গালুরুতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন লেভেলি। ১৮৭১ সালে, লেভেলি গরুর গাড়িতে করে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। এই সময়, লেভেলি খনির স্থানগুলি চিহ্নিত করেন এবং সোনা খুঁজে পেতে সফল হন। দুই বছরের অনুসন্ধান শেষ করার পর লেভেলি ১৮৭৩ সালে মহীশূরের মহারাজার সরকারের কাছে কোলারে খনন পরিচালনার লাইসেন্স চেয়েছিলেন।
১৮৭৫ সালে লেওয়েলি খনির লাইসেন্স পান। কিন্তু মাইকেল লেভেলির কাছে খুব বেশি অর্থ ছিল না। তাই খনির কাজটি একটি বড় ব্রিটিশ কোম্পানি জন টেলর অ্যান্ড সন্সের হাতে চলে যায়। জন টেলর অ্যান্ড সন্স ১৮৮০ সালে খনির কার্যক্রমের দায়িত্ব নেন। 'স্টেট অফ দ্য আর্ট' মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট বসানো হয়। ১৮৯০ সালে জন টেলর অ্যান্ড সন্স দ্বারা স্থাপিত সরঞ্জামগুলি দিয়ে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোনা খোঁজা ও তোলার কাজ চলেছিল। অর্থাৎ, ১০০ বছর ধরে চালু ছিল।
১৯০২ সালে ভারতের ৯৫ শতাংশ সোনা পাওয়া যেত কেজিএফ থেকেই। কোলারের সোনার খনির হাত ধরেই ১৯০৫ সালে ভারত সোনা উৎপাদনে বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছে যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ১২০ বছরের সোনার খোঁজ আর খননে কোলারের সোনার খনিতে প্রায় ৬০০০ জনের মৃত্যু হয়। কোলার গোল্ড ফিল্ডে আলোর ঘাটতি মেটাতে, কোলার থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে কাবেরী ইলেকট্রিসিটি স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ছিল এশিয়ার দ্বিতীয় এবং ভারতে প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
১৯৩০ সালে, প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কোলার গোল্ড ফিল্ডে কাজ করত। কেজিএফ-এ সোনার মজুদ কমতে শুরু করলে শ্রমিকরাও কোলার ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। যদিও স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত কেজিএফ ব্রিটিশদের দখলে ছিল, কিন্তু ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকার তার হাতে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সময়ে, বেশিরভাগ খনির মালিকানা রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রচুর লোকসানের পর কোলার গোল্ড ফিল্ড ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। কেজিএফ বন্ধ হওয়ার পর থেকে ভারতের ওপর সোনার আমদানির বোঝা বেড়েছে।