অপুর সংসার (১৯৫৯) সত্যজিৎ রায়েই এই ছবি দিয়েই রূপোলি পর্দায় আত্মপ্রকাশ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। তারপর একসঙ্গে ১৪টি ছবি করেছিলেন সত্যজিৎ-সৌমিত্র জুটি। পরিচালকের চারুলতা (১৯৬৪) ছবিতে অমলের ভূমিকায় সাড়া ফেলেছিলেন সৌমিত্র।
কেবমাত্র সত্যজিৎ নয়, তরুণ মজুমদারের ছবিও সৌমিত্রর কেরিয়ারের মাইলস্টোন। ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১) ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ময়ূরবাহন-এর ভূমিকায় দর্শক এখনও মনে করে তাঁকে। তার পরেই বছরই অভিযান (১৯৬২)। নরসিংয়ের ভূমিকায় সৌমিত্র। বিপরীতে ওয়াহিদা রহমান ও রুমা গুহ ঠাকুরতা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আরও একটি কালজয়ী ছবি অপরিচিত (১৯৬৯)। ফিওদোর দস্তয়েভস্কির ছবি দ্য ইডিয়ট-এর কিছুটা ছাপ দেখা যায় সমরেশ বসুর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে। উত্তর-সুচিত্রা জুটির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই ছবিতে দর্শন মনে রেখেছিল সৌমিত্রকে। আতঙ্ক (১৯৮৬)- তপন সিনহার এই ছবিতেও অনবদ্য ছিলেন অভিনেতা। মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি...ছবির এই সংলাপ আজও সমান জনপ্রিয়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম তিন ভুবনের পারে(১৯৬৯)। তনুজার সঙ্গে জুটি বেঁধে সৌমিত্র নিজের সিরিয়াস ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। পাশাপাশি জীবনে কি পাবনা গানে তাঁর কেয়ার ফ্রি নাচ মন কেড়েছিল বাঙালির। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করেছিল তাঁর পার্সোনা।
কোনি (১৯৮৪), সরোজ দের পরিচালনায় কোনির ক্ষীরদাকে কে না চেনে। ওই পরিশ্রমি দুটো চোখ এখনও অনেকে অনুপ্রেরণা। মোতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল এই ছবি। ক্ষীরদা-র ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি নাকি দীর্ঘদিন কোনি অর্থাৎ শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাঁতারের কোচের ব্যবহার লক্ষ্য করতেন সুইমিং পুলে গিয়ে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি অসুখ (১৯৯৯)। নব্বইয়ের দশকে সৌমিত্রর সেরা ছবি বোধহয় এটিই। সৌমিত্র-দেবশ্রীর বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছিল এই ছবিকে।
১৯৪৩ সালে তৈরি সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত, এক ভীষণ অসহায় বাংলার চিত্রনাট্য। মহামারী কবলিত বাংলায় চিকিৎসক গঙ্গাচরণ আরও এক অন্য লড়াই লড়ছে। সৌমিত্রর মতে, গঙ্গাচরণ এক অসহায় মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চরিত্র।
গণশত্রু (১৯৮৯) নরওয়ের লেখক হেনরিক ইবসেনের অ্যান এনিমি অফ দ্য পিপল অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে প্রগতিশীল ডাক্তারের ভূমিকায় ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি ১৯৮৯ সালে কান চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে কথা বললে সেখানে ফেলুদা আসবেই। সৌমিত্রকে ভেবেই ফেলুদা-র জন্ম দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। মগজাস্ত্রের প্রয়োগে তিনিই তো পর্দায় প্রদোষ মিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। সোনার কেল্লা দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সিরিজের। পরে আসে জয় বাবা ফেলুনাথ।
তবে এখানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবির তালিকা শেষ করা সম্ভব নয়। বাক্স বদল, সংসার সীমান্তে, অরণ্যের দিন রাত্রি, বাঘিনী এবং সাম্প্রতিক কালে অতনু ঘোষের ময়ূরাক্ষী- তালিকা দীর্ঘ হতে থাকবে।