১৭৭৩ -তে সংঘটিত উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (Bankim Chandra Chatterjee) 'আনন্দমঠ' (Anandamath)। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত এই রাজনৈতিক উপন্যাসের, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। উপন্যাসটি ছাপার বিরুদ্ধে সেই সময় ব্রিটিশ সরকার আইন পাশ করে। তবে এর হাতে লেখা গুপ্ত সংস্করণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। 'আনন্দমঠ'-এ বঙ্কিমচন্দ্র 'বন্দে মাতরম' (Vande Matram) গানটি লেখেন। পরবর্তীতে ভারতীয় স্বদেশপ্রেমীরা 'বন্দে মাতরম' এই শব্দ দুটি জাতীয়তাবাদী শ্লোগান হিসাবে গ্রহণ করেন। সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের সেই কাহিনি এবার বড় পর্দায়।
৮ এপ্রিল ভারতের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১২৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই বিশেষ দিনটিতেই সামনে এলো এই বড় খবর। হিন্দি, তামিল ও তেলেগু ভাষায় তৈরি হবে নতুন মেগা বাজেট ছবি '১৭৭০ এক সংগ্রাম' (1770 Ek Sangram)। ছবির চিত্রনাট্য লিখছেন জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ (K V Vijayendra Prasad)।
'বাহুবলী', 'আরআরআর', 'মণিকর্ণিকা: দ্য ক্যুইন অফ ঝাঁসি', 'বজরঙ্গী ভাইজান'-র মতো একাধিক হিন্দি ও দক্ষিণী ছবির চিত্রনাট্য রয়েছে বিজয়েন্দ্রর কলমে। তাঁর আরেকটি পরিচয়ও আছে। দক্ষিণী চলচ্চিত্র নির্মাতা এসএস রাজামৌলির (S S Rajamouli) বাবা তিনি। যদিও এই ছবির পরিচালনা কে করবেন বা কাস্টিং কাদের নিয়ে হবে, এবিষয় নির্মাতারা এই মুহূর্তে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সুজয় কুট্টি, শৈলেন্দ্র কে কুমার, রাম কমল মুখোপাধ্যায় এবং সুরজ শর্মার প্রযোজনায় আসবে এই ছবি।
ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে '১৭৭০ এক সংগ্রাম'-র কাজ। বর্তমানে চিত্রনাট্যের প্রথম খসড়া নিয়ে ব্যস্ত নির্মাতারা। মে মাসের শেষের দিকে প্রকাশ্যে আসবে ছবির টিজার পোস্টার। সব ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর থেকেই শুরু হবে শ্যুটিং। হায়দরাবাদ, কলকাতা এবং লন্ডনে হবে ছবির শ্যুটিং। যার মধ্যে অনেকটাই হবে রামোজি ফিল্ম সিটিতে তৈরি সেটে। তবে ফ্লোরে যাওয়ার প্রায় ১২০ দিনের প্রি-প্রোডাকশন কাজ রয়েছে টিম '১৭৭০ এক সংগ্রাম'-র। বড় অঙ্কের বাজেট প্রয়োজন এই ছবির জন্য এবং ছবটি তৈরি করতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগবে, বলে জানাচ্ছেন নির্মাতারা।
বাংলা উপন্যাসের চিত্রনাট্য লিখবেন কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ। প্রবীণ লেখকের কথায়, "যখন সুজয় 'আনন্দমঠ'-র জন্য আমার কাছে আসে, আমি কিছুটা হতবাক হয়েছিলাম। বহু বছর আগে আমি উপন্যাসটি পড়েছিলাম এবং সত্যি কথা বলতে, আমি মনে করিনি যে, আজকের প্রজন্ম এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। উপন্যাসটি নিয়ে রাম কমলের একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ওঁর ভাবনা আমি শুনেছি। ছবিটি বাণিজ্যিক এবং মানবিক আবেগের মিশেলে তৈরি হবে। কয়েকবার বৈঠকের পর, এখন আমি সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে এই কাজ করতে আগ্রহী। 'আনন্দমঠ'-র সেই জাদু পুনরায় নিয়ে আসা আমার জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।"
লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা তথা প্রযোজক রাম কমল মুখোপাধ্যায় জানালেন, "এটি আমার স্বপ্নের প্রোজেক্ট। ভারতের বিখ্যাত ক্রিয়েটিভ টিমের সঙ্গে কাজ করব। দর্শকদের জন্য এটি যেন একটি ভিজ্যুয়াল ট্রিট হয়, সে দিকে আমরা নজর দেব। আমি মনে করি 'আনন্দমঠ'-র গল্প বলার এটাই সঠিক সময়। যে সন্ন্যাসীদের ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন, তাঁদের গল্প সকলকে বলব। আমার মনে হয়েছে যে, এই গল্পটি সেলুলয়েডে একটি ভিন্ন স্কেলে পুনরায় তৈরি করা যেতে পারে।"