সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনলেন এক মহিলা সাংবাদিক। রবিবার ফেসবুক লাইভে ওই মহিলা তাঁর সঙ্গে ঘটা হেনস্থার কথা জানান। ওই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সকালে তিনি তন্ময়ের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন, সেই সময় সিপিএম নেতা তাঁর কোলে বসে পড়েন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে খুব একটা সময় নেয়নি। শোরগোল পড়ে যায় সিপিএমের অন্দরেও। ইতিমধ্যেই তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি অজানা নয় অভিনেত্রী ও বাম সমর্থক শ্রীলেখা মিত্রের কাছেও। তাঁকে বহুবারই দলের একাধিক কর্মসূচিতে তন্ময় ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। গোটা ঘটনাটি নিয়ে bangla.aajtak.in-এর কাছে প্রতিক্রিয়া দিলেন অভিনেত্রী।
শ্রীলেখা বলেন, 'এটা না সম্পূর্ণ না পারছি গ্রহণ করতে আবার সম্পূর্ণ না পারছি এড়িয়ে যেতে। আমি দু'ভাবে দেখার চেষ্টা করছি, মেয়েটার দিক থেকে এবং তন্ময় দার (তন্ময় ভট্টাচার্য) দিক থেকে। আমি খুব সাধারণ উদাহরণ দিয়ে বলছি যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়, তখন মহিলা মনে করেন যে আমি যে কথাটা বললাম সেটা বুঝলো না, তাহলে আমি ঠিক আমার স্বামী ভুল। আবার স্বামী মনে করে যে এটা আবার এমন কী বিষয় আছে, আমি এটাই বলব যে এটাতে বোঝা না বোঝার কী বিষয় আছে। যে কোনও বিষয়ের আসলে দুটো দিক থাকে।' অভিনেত্রী আবার বলেন, 'এবার আসি আমার অভিজ্ঞতা, আমি দু'জনকেই চিনি। এই মেয়েটি আমার ইন্টারভিউ নিতে এসেছিল তারপর থেকে আমার সঙ্গে কথাবার্তা হয়, মেয়েটিকে আমার ভাল লেগেছিল। মেয়েটি যেটা বলেছে সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো কথা নয়। ঘটনাটা হল আমার সঙ্গে তন্ময়দার যে দারুণ সম্পর্ক বা রোজ কথা হচ্ছে এমনটা নয়, আমি তন্ময়দার প্রচারে গিয়েছি, ব্লাড ডোনেশনে গিয়েছি। আমি যতটা দেখেছি তন্ময়দা ভীষণভাবে হুল্লোড়বাজ, ইয়ার্কি করে, মজা করে, চিরতরুণ একটা হাবভাব, জেভিয়ার্সে পড়া একজন বরিষ্ঠ নেতা। আমি যদি সেটা তন্ময়দার দিক থেকে দেখি তাঁর কাছে হয়ত একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলাটা কোনও আহামরি বিষয় নয়।'
এরপর শ্রীলেখা বলেন, 'তন্ময় দা সকলের সামনে আমার সঙ্গে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করলেও কখনও কোলে বসার চেষ্টা করেননি। এবার আমি কোলে বসাটা জানি না বা দেখিনি। ফিল্ম লাইনে একজন অভিনেতার সঙ্গে একজন অভিনেত্রীর যখন অনেকদিন পর দেখা হয়, তখন খুব সাধারণভাবেই কেমন আছ বলে জড়িয়ে ধরে। আমাদের কাছে এটা কিন্তু জলভাত ব্যাপার। এটা আমাদের কাছে দৃষ্টিকটু, দৃষ্টিনন্দনের কোনও বিষয় নয়, এটাই স্বাভাবিক আমাদের কাছে। কিন্তু এটাই কেউ গ্রাম থেকে এসেছে, কিছুদিন হল কলকাতায় এসেছে, সে যদি এটা দেখে, ছেলে-মেয়েটার ইকুয়েশন সে না জেনেই তাঁরা যদি একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে, সেটা দেখে মেয়েটির চোখে তা খারাপ লাগতে পারে। সুতরাং তন্ময়দারও যেটা গণ্ডগোল হয়েছে তিনি বলেছেন ইয়ার্কি মারছি, তন্ময়দার ইয়ার্কির পাত্রী ওই মেয়েটি হতে পারে না। মেয়েটির কোলে বসেছে তন্ময় দা এটা আমি চাক্ষুষ দেখিনি তাই আমি বলতে পারব না।' অভিনেত্রী বলেন, 'তন্ময় দাকে যতটুকু দেখেছি তিনি খুব....কিন্তু একটা মেয়ের কথা আমাদের মানতে হবে। যদি মেয়েটি এটি বলে থাকে যে আমার সঙ্গে এটা করবেন না, তাহলে তো সেখানে ইয়েস মিনস ইয়েস আর নো মিনস নো চলে আসছে। কিন্তু জানি না তন্ময় দা কী করেছে, কিন্তু সাধারণভাবে আমার ওটাকে কোনওদিন ব্যাড টাচ মনে হয়নি। আমার অনুমতি ছাড়া তো কেউ আমার কেঁড়ে আঙুলটাও ধরতে পারেন না। তন্ময় দা আমাকে খুব ইয়ার-দোস্তের মতো করে জড়িয়ে ধরেছে, আমার খুব বাডি লাইক বলে মনে হয়েছে। আমার কাছে কিন্তু তন্ময় দা ফেলো কমরেড যে আর এক কমরেডকে জড়িয়ে ধরে কথা বলছে। এখন আমি জানি না যে মেয়েটার ক্ষেত্রে কী মাত্রাটা বেড়ে গিয়েছিল? শ্রীলেখা আক্ষেপের সুরেই বলেন, আসলে তন্ময়দার এই ধরনের ব্যবহার করার কথা নয়। একটা মেয়ের কথা মানে কথা, সেই হিসাবে দলের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মেয়েটির যে অস্বস্তি হচ্ছে সেটা সে বলেছে এবং দলের পক্ষ থেকে সেটার পরই তন্ময়দার বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়েছে। মেয়েটি যদি বলে থাকে যে এটা তাঁর পছন্দ নয় তাহলে তন্ময় দার এটা বোঝা উচিত ছিল। তবে আমার কাছে কিন্তু তন্ময়দার ছোঁয়াকে কখনই খারাপ লাগেনি, আমার কাঁধে একজন মেয়ে হাত দিলেও যেমন অনুভূতি হয়, তন্ময়দার স্পর্শেও সেই অনুভূতি হয়েছে।'
তন্ময় ছিলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি। ব্যক্তিগত ভাবে তন্ময় ছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারী। বেশ কয়েক বছর হল তিনি অবসর নিয়েছেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত উত্তর দমদমের বিধায়ক ছিলেন তন্ময়। পরাস্ত করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। তবে ২০২১ সালে চন্দ্রিমার কাছেই পরাজিত হন তন্ময়। সম্প্রতি বরানগর বিধানসভা উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েও তন্ময় হেরেছিলেন।