বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলায় আসা মানুষদের কাছে আজও তাঁদের সোনার বাংলার প্রতি ভালোবাসা ম্লান হয়ে যায়নি। বয়স যত বাড়ে ওপার বাংলার ভিটেবাড়ির প্রতি অনুভূতি আরও যেন প্রবল হয়ে ওঠে। দেশভাগের সময় সব ছেড়ে এপারে চলে আসা মানুষগুলোর কাছে এখন সবটাই স্মৃতি। খোলা উঠোন, সন্ধ্যের শাঁখ, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, সবুজে ভরা এক দেশ। যা শুধু স্বপ্নেই এখন আসে। এপার বাংলাতে চলে আসা অনেকেই একবারের জন্য বাংলাদেশে তাঁদের পূর্বপুরুষের ভিটে দেখতে চান। যেতে চান ওপার বাংলায়। আর সেই তালিকাতে রয়েছেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্রের মা শুক্লা মিত্র রায়।
চলতি বছরের জুন থেকেই বাংলাদেশে অশান্তির এবহ সৃষ্টি হয়েছে। অগাস্টেই গোড়াতেই গোটা বাংলাদেশে আর্থিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে দেখা গিয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠন হয়েছে অন্তর্বতী সরকার। ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এরকম অবস্থায় কোনদিকে যাচ্ছে, তা নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। আর এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের এক পেজে ওপার বাংলায় যাওয়ার জন্য সহায়তা চেয়েছেন রূপাঞ্জনার মা শুক্লা রায় মিত্র।
শুক্লাদেবীর পূর্বপুরুষের ভিটে ওপার বাংলায়। ঢাকার আরমানিটোলায় অভিনেত্রীর দিদিমার বাড়ি। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ৯০০ বিঘার উপর জমি ছিল তাঁদের সে দেশে। কিন্তু দেশভাগের সময় ভিটে মাটি ছেড়ে এ পার বাংলায় চলে আসে পরিবার। আমৃত্যু অভিনেত্রীর দিদিমা তাঁর মায়ের কাছেই ছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। রূপাঞ্জনা এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তাঁর মা কয়েক বছর ধরেই ওপার বাংলায় যেতে চাইছিলেন। কিন্তু রূপাঞ্জনা সেভাবে সেগুলোকে আমল দেননি। তাই তাঁর মা নিজেই বঙ্গভিটে গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে পোস্ট করেছেন। আর সেখানেই বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। রূপাঞ্জনা জানিয়েছেন যে এই গ্রুপের পক্ষ থেকে সাড়া পেয়েছেন তাঁরা। যে বাড়িটার খোঁজ করছিলেন অভিনেত্রীর মা, তার বেশ কিছু ছবিও হাতে পাওয়া গেছে।
রূপাঞ্জনার মায়ের বয়স এখন ৭৪। তিনি ওই পোস্টেই জানিয়েছেন যে তাঁর খুব ইচ্ছে তাঁর মায়ের জন্মভূমি ছুঁয়ে দেখার। গ্রুপের অ্যাডমিন সইফুল ইসলাম। বছর ত্রিশের যুবক স্বেচ্ছায় সাহায্য করেন ভিটে মাটি ছেড়ে এ পারে চলে আসা মানুষগুলিকে পুরনো ভিটের স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে। চেষ্টা করেন ওই সম্পত্তি খুঁজে বার করে তার ছবি দেখাতে। তবে রূপাঞ্জনা জানিয়েছেন যে এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি তাঁদের সাহায্য করেন তাহলে ডিসেম্বরেই মাকে নিয়ে ওপার বাংলায় যেতে পারেন অভিনেত্রী। আর সেটা সম্ভব না হলে, সব পরিস্থিতি শান্ত হলে আগামী বছরেই যাবেন মাকে নিয়ে।