KIFF 2022: তাঁর সিনেমা মানেই নতুন কিছু। আর কলকাতার কাছে তিনি বড় কাছের। তাঁর সিনেমা দেখার জন্য উপচে পড়ে হল। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্য়াল (Kolkata International Film Festival বা KIFF 2022)-এ দেখানো হবে জঁ-লুক গদার (Jean-Luc Godard)-এর পিওরোখ লে ফু (Pierrot le Fou)।
এবারও তিনি থাকছেন
৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (Kolkata International Film Festival বা KIFF 2022)। চলবে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশ-বিদেশের অজস্র সিনেমা দেখানো হবে সেখানে। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতা বা বাঙালির বড় প্রিয় গদারের সিনেমাও থাকছে।
অটুট আবেদন
গদার (Jean-Luc Godard)-এর আবেদন কেন এখনও অটুটু? কেন এখনও তাঁর সিনেমা এলে পাগলপারা হয়ে ওঠেন কলকাতার মানুষ? সে কথাই ব্য়াখ্যা করছিলেন মুরলিধর গার্লস কলেজের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের প্রধান সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
নন-ন্যারেটিভ সিনেমার পথিকৃৎ
তিনি বলেন, "গদার (Jean-Luc Godard)-এর একটা চিরকালীন, দীর্ঘদিনের আবেদন আছে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে। যখন ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমা শুরু হল, পাঁচের দশকে, তখন থেকেই কলকাতায় গদার (Jean-Luc Godard) চর্চার সূত্রপাত হয় ফিল্ম সোসাইটির মাধ্যমে। তখন তো অন্য ভাবে ছবি দেখার সুযোগ ছিল না। গদারের ছবি দেখার সুযোগ ছিল ফিল্ম সোসাইটির মাধ্যমে। সত্যজিৎ রায় তাঁকে নন-ন্যারেটিভ সিনেমার পথিকৃৎ বললেন।"
ভারতীয়দের ওপর প্রভাব
ভারতীয় পরিচালকদের ওপর গদার (Jean-Luc Godard)-এর খুব প্রভাব ছিল। তিনি বলেন, "ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ সিনেমার প্রভাব পড়ল আমাদের পরিচালকদের ওপরে। বিশেষ করে গদারের প্রভাব আরও বেশি করে পড়ল। তার একটা কারণ নিঃসন্দেহে গদার (Jean-Luc Godard) কট্টর মার্কসবাদী। সমকালীন রাজনীতি তাঁর ছবিতে উঠে এল জোরালো ভাবে। তাঁর ছবিতে সমকালীন রাজনীতি খুব সোচ্চার ছিল।"
সব ছক ভেঙে
গদার (Jean-Luc Godard) বিষয়বস্তুতে রাজনীতি নিয়ে এলেন, তেমন ছবির আঙ্গিক ভেঙে ফেললেন। আঙ্গিকের মধ্যে যে পিছুটান ছিল, তা ভেঙেচুরে দিলেন। সুমন্তবাবু বলেন, "ফলে আঙ্গিক এবং তাঁর বক্তব্য, মানে ফর্ম আর কনটেন্ট আমাদের পরিচালকদের খুব প্রভাবিত করেছে। মৃণাল সেনের ওপর তাঁর প্রভাবের কথা অনেকেই বলেন। ভারতীয় নবতরঙ্গ সিনেমার ওপরও খুব বেশি। গদার নিয়ে চর্চাও চালু ছিল, আছে।"
কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্য়াল (Kolkata International Film Festival বা KIFF) শুরু হওয়ার পর তাঁর সিনেমা দেখানো হয়েছে। আর হল উপচে পড়েছে ভিড়ে। লোকজনকে জায়গা দেওয়া যায় না। সেখানে তাঁর সাম্প্রতিকতম সিনেমাও দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, "গদারের আবেদন কলকাতা এবং বাংলার দর্শকদের কাছে এখনও অটুট আছে। সারা পৃথিবীতে তিনটে লোক সিনেমা নিয়ে আলোচনা করলে গদারের নাম উঠবে। কলকাতার ক্ষেত্রেও তাই।"
নয়া নিয়ম!
এ ব্য়াপারে তিনি বলেন, "গদার পদ্ধতি, গল্প বলার কায়দা নস্যাৎ করলেন। যে রকম ভাবে গল্প দেখতে অভ্যস্ত, হলিউড থেকে, কন্টিনিউয়িটি এডিটিংয়ের ধারণা থেকে, তিনি তা সব রকম ভাবে ভাঙলেন। সময়কে দেখানোর যে নিয়ম, অর্ডার ভাঙলেন। স্পেস দেখানো যে নিয়ম, এডিটিংয়ের ১৮০ ডিগ্রি আইন আইন বা আইনলাইন ম্যাচ রক্ষা করার নিয়ম ভাঙলেন। তবে মনে রাখতে হবে, ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের বাকিরাও তা-ই করেছেন।"
সিনেমা তৈরির প্রকরণ প্রকাশ্যে করে দিলেন। যা রাখা থাকত অন্তরালে। সুমন্তবাবু বলেন, "সিনেমা তৈরির যে কায়দা পরিচালক গোপন রাখার চেষ্টা করেন, তিনি উল্টো করলেন। সব প্রকাশ্যে এনে দিলেন। মানুষ বুঝতে পারছেন ক্যামেরা নড়ছে। আলো কম বা নেই। যে রকম আলো, সে রকমই রাখলেন।"