Advertisement

Uttam Kumar: দিদির মৃত্যুর শোক কোনও দিন কাটাতে পারেননি মহানায়ক

জীবনে বহুবার শোক পেয়েছেন উত্তম কুমার (Uttam Kumar). কখনও সেই শোক ছিল পারিবারিক সম্পর্কের কারণে। কখনও ছিল প্রিয়জনের চলে যাওয়া। কখনও সিনেমা জগতের পরিচিত মহলের ব্যবহারে চূড়ান্ত আঘাত পেয়েছেন। উত্তমের ছোটবেলায় তাঁর পুতুলদি হঠাৎ করেই চলে যান। এই মৃত্যুর শোক সারাজীবন বয়ে বেরিয়েছিলেন মহানায়ক।

উত্তম কুমার
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 24 Jul 2022,
  • अपडेटेड 12:14 PM IST

জীবনে বহুবার শোক পেয়েছেন উত্তম কুমার (Uttam Kumar). কখনও সেই শোক ছিল পারিবারিক সম্পর্কের কারণে। কখনও ছিল প্রিয়জনের চলে যাওয়া। কখনও সিনেমা জগতের পরিচিত মহলের ব্যবহারে চূড়ান্ত আঘাত পেয়েছেন। উত্তমের ছোটবেলায় তাঁর পুতুলদি হঠাৎ করেই চলে যান। এই মৃত্যুর শোক সারাজীবন বয়ে বেরিয়েছিলেন মহানায়ক। দিদির মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কথা তিনি তাঁর আত্মজীবনী 'আমার আমি'তে বর্ণনা করেছেন। তাঁরই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। তিনি লিখেছেন-

"একটার পর একটা দিন কাটছিল। আমিও বাবা-মায়ের দৃষ্টি এড়িয়ে যাত্রার ক্লাবে যাচ্ছিলাম নিয়মিত। ঈশ্বরের খেয়াল বোঝা ভার। তিনি আমাদের যেমন চালান আমরা তেমন চলি। তাঁর বিধান এড়িয়ে চলবার ক্ষমতা কোথায় পাব! 

মৃত্যু মহান। মৃত্যু সুন্দর। আবার সেই মৃত্যুকে বড় ভয়ংকর বলতে ইচ্ছে করে। অবচেতন মনে হয়তো বলিও। অকালমৃত্যুকে ভয়ংকর ছাড়া আর কী বলবো?

সেই কৈশোরেই মৃত্যুর এক ভয়ংকর রূপ আমি দেখেছিলাম। সেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ছবি আমি আজও মাঝে মাঝেই স্পষ্ট দেখতে পাই। পুতুলদির আকস্মিক হারিয়ে যাওয়া আমার অন্তরের অন্তস্থলে একটা দগদগে ক্ষত রেখে গিয়েছে। একটা যন্ত্রণা! দিদিকে অকালে হারাবার যন্ত্রণা আজও মাঝে মাঝে আমাকে কাতর করে তোলে। একদিন ঘরে ফিরে এলে স্বাভাবিক স্বরে দিদিকে ডাকলাম, দিদি-দিদি-এই পুতুলদি---

অন্য দিনের মতো দিদি ডাক শুনলো না। চট করে ছুটে এল না সে। ভাবলাম দিদি হয়তো বাড়িতে নেই। বেড়াতে গিয়েছে বোধহয় কারও সঙ্গে। ভীষণ রাগ হ'ল। অভিমানী হয়ে উঠল মনটা। প্রতিজ্ঞা করলাম দিদি ফিরে আসার আগেই ঘুমিয়ে পড়ব। ডাকলেও কথা বলব না। 

দেখলাম মা নীচে আসছেন। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। ভয়ও পেলাম। গম্ভীর মুখ। 

Advertisement

এগিয়ে গেলাম মায়ের কাছে। আঁচলটা ধরে বললাম, দিদি কোথায় মা? 

কণ্ঠস্বর উঁচু করে কথাটা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। 

মা একটা আঙুলে ঠোঁট চাপা দিয়ে ইশারায় বললেন, চুপ কর। তোমার দিদি ওঘরে শুয়ে আছে, জ্বর। টাইফয়েড। 

আমার বুকের ভিতরটা সেই মুহূর্তে কেঁদে উঠল। আস্তে আস্তে দিদির ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। নিথর নিস্তব্ধ গোটা বাড়িটা। সবাই কেমন যেন ভারাক্রান্ত। ডাক্তারবাবু মুখ গম্ভীর করে আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। মনটা তখন অস্থির। দিদির কথাই তখন ভাবছিলাম। দিদি শুয়ে আছে, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম। একদিনের জ্বরেই ক্ষীণ হয়ে গেছে পুতুলদি। মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। নিস্তেজ দৃষ্টি। ফ্যাকাশে হয়ে গেছে মুখটা। ফর্সা শরীরটা ফ্যাকাশে বিবর্ণ হয়ে গেছে। যেন কত রক্তশূন্য। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দিদিকে দেখছিলাম। দেখছিলাম আর আমার কান্না পাচ্ছিল। ভাবছিলাম ওর কাছে যাই। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, এমন হ'ল কেন রে তোর?

দিদি আমাকে দুর্বল একখানা হাত তুলে ডাকল। কাছে গেলাম। দিদি আস্তে আস্তে বলল, কাউকে বলিনি তুই যাত্রা শিখছিস। যাত্রা শেখ, মজা হবে। আমি ভাল হয়ে হয়ে উঠলে কেমন শিখলি দেখাবি, কেমন?

আমার বুকের মধ্যে হু-হু করে উঠল! আমি ওর ঘরের বাইরে  এসে বসলাম। একরাশ ভাবনার মধ্যে ডুবে গেলাম। পুতুলদির জ্বর নিয়ে ভাবনা। পুতুলদি ভাল হয়ে উঠবে বলছে, কথাটা মনে পড়তে একটু সতেজ হলাম।

কিন্তু দিদি ভাল হ'ল না। সে চলে গেল। মানুষ চলে গেলে কোথায় যায় জানতাম। স্বর্গে যায়। স্বর্গে গিয়ে নারায়ণের ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ায়। ফুল তোলে। আবার যখন ইচ্ছা হয় ফিরে আসে। আমার দিদি কিন্তু ফিরে এল না। 

মায়ের সে কি কান্না। মা কাঁদছিলেন। বাবার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছিল। 

সবাই কাঁদছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য, ওদের কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না সেদিন, দিদি নারায়ণের ফুলের বাগানে ফুল তুলতে গেছে! আবার ফিরে আসবে। বোঝাতে না পেরে আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম। 

আজও মাঝে মাঝে দিদির জন্য মনটা কাঁদে। 

অবসর সময়ে আকাশের দিকে তাকাই। ঐ মুক্ত নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে দিদিকে দেখবার চেষ্টা করি। কতবার ভেবেছি ঐ তারার মধ্যে দিদির মুখটা বুঝি উঁকি দিচ্ছে। আর মাঝে মাঝে যেন শুনতে পাই পুতুলদি যেন বলছে, তুই এখনও খাসনি, আমি খাব কেন রে? 

আরও শুনতে পাই পুতুলদি যেন বলছে, যাত্রা শেখ, বেশ মজা হবে!" 

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement