বছরভর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। আজ (৫ ডিসেম্বর) শুরু হল ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (29th Kolkata International Film Festival)। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষে মুখিয়ে থাকেন কিফের দিকে। মঙ্গলবার বিকালে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভ সূচনা হল কিফের। জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কার্যত চাঁদের হাট। এদিন রাজ্য সঙ্গীত 'বাংলার মাটি বাংলার জল গান' গেয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বিধানসভা মিউজিয়ামের উদ্বোধনে নির্দেশ দেন জাতীয় সঙ্গীতের মতো রাজ্য সঙ্গীতও উঠে দাঁড়াতে হবে। সেই কথা মতো কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনেও উঠে দাঁড়ালেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হাজির সকলে। মঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রাজ্য সঙ্গীত গাইলেন ইমন চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য, অদিতি মুন্সী, ইন্দ্রনীল সেন, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রূপঙ্কর বাগচীর মতো শিল্পীরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাংলার মানুষ সিনেমাকে ভালোবাসে, সিনেমার কদর করতে জানে। তাই সকলে এখানে উপস্থিত আছেন। এত সিনেমাপ্রেমী মানুষ আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। বাংলা ছবি আজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সকলকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলা, ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক রাজধানী। আমরা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়দের ভুলিনি আজও। ছবির ভাষা বিশ্বজনীন, সার্বজনীন ও সর্বকালীন। এই চলচ্চিত্র উৎসব সকলের জন্য। টলিউড থেকে বলিউড, বেঙ্গল বহু তারকা তৈরই করেছে। বহু বাংলার শিল্পী মুম্বইতে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের এখনকার মানুষ খুব প্রতিভাবান এবং সৃজনশীল"
এদিন সলমন খানের থেকে বিশেষ প্রতিশ্রুতি চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "তুমি আগেই বলেছো, কথা রাখো তুমি সব সময়। আমায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, এখানে আরও কাজ নিয়ে আসবে।" একথা শুনে হেসে ভাইজানের উত্তর, "এখানে এসে শ্যুটিং করার প্রতিশ্রুতি চাইছেন? তাহলে কথা দিলেন আসবো...।" এরপর মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, "বলিউড ও টলিউড, সব সময় একসঙ্গে যুক্ত। এজন্যে তোমায় এখানে আসতে হবে। ছবিতে কাজ করতে হবে এবং সকলের মন জিততে হবে। কখনও কোথাও প্রয়োজন পড়লে মনে রেখো, বাংলা- রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে। এই সব ধরণের সাহায্য বাংলা তোমাদের করতে পারবে, কারণ বাংলা তোমাদের ভালোবাসে।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরবর্তী কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ভাইফোঁটা ও রাখী বন্ধনের আগাম আমন্ত্রণ জানালেন সলমন খানকে। সমস্ত কিছুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য বলিউড ও টলিউডের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। তোমাদের প্রয়োজন হলে ডাকবে, আমরা যাবো। তোমারাও এসো আমাদের প্রয়োজনে। বাংলার মতো অতিথি পরায়ণ আর কেউ নেই। বাংলায় সিনেমা চলবে। ভাল করে দেখুন, আনন্দ করুন, মজা করুন, হাসি মুখে থাকুন এবং সব সময় মনটাকে ভাল রাখুন, দেহটাকে সুস্থ রাখুন। মনে রাখবেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমাদের অনেক আনন্দ দেয়। অনেক সত্যি ঘটনাও তুলে ধরে।"
এবারের উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি- স্পেন। সেই সঙ্গে স্পেশ্যাল ফোকাস কান্ট্রি- অস্ট্রেলিয়া। উৎসবে শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হবে মৃণাল সেন, দেব আনন্দ, মুকেশ ও শৈলেন্দ্রকে। 'হোমেজ' বিভাগে সৌমেন্দু রায়-সহ আরও ৪ ব্যক্তিত্বের ছবি দেখানো হবে। ৯ ডিসেম্বর 'সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা' দেওয়ার কথা লরেন্স কার্দিশের। উৎসবে থাকছে 'ইন সার্চ অফ আইডেন্টিটি' এবং পরিবেশ বিষয়ক ছবি নিয়ে দুটি বিশেষ বিভাগ। মৃণাল সেনকে নিয়ে 'দ্য ম্যাভেরিক' এবং গগনেন্দ্র প্রদর্শন শালায় দেব আনন্দকে নিয়ে এভার গ্রিন দেব আনন্দ শীর্ষক দুটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ভারতীয় খেলাভিত্তিক ছবি থাকছে চলচ্চিত্র উৎসবে। সে তালিকায় রয়েছে 'ঘুমের', 'জার্সি', 'সাব্বাস মিঠু'। এছাড়াও পুরনো দিনের মতো, ৩৫ এমএম প্রোজেক্টারে ছবি দেখানো হবে রাধা স্টুডিওতে।
মোট ২৩টি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে ২১৯টি ছবি। প্রথমবার শহরের কিছু মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে দেখা যাবে দেশ- বিদেশের ছবিগুলি। নন্দন (১,২,৩), রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন (রাধা স্টুডিও), নজরুল তীর্থ (১, ২), রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন (সল্টলেক), নবীনা, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম, স্টার থিয়েটার, প্রাচী, মিনার, বিজলী, মেনকা, অশোকা, অজন্তা, মানি স্ক্যোয়ার, মেট্রো, কোয়েস্ট মল, সাউথ সিটি মলের এবং নিউ এম্পায়ারে স্ক্রিনিং হবে ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিগুলি।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার দেওয়ার চল ছিল বহু বছর ধরে। তবে এই প্রথম উৎসবের 'বেঙ্গলি প্যানোরামা' বিভাগে দেওয়া হবে বিশেষ পুরস্কার। সাড়ে সাত লক্ষ টাকার পুরস্কারমূল্য এবং গোল্ডেন রয়্যাল বেঙ্গল ট্রফি পাবেন বিজয়ী।