আমেরিকার নিউ জার্সির আটলান্টাতে আয়োজিত হয়েছিল এবছরের বঙ্গ সম্মেলন অর্থাৎ নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (North- American Bengali Conference)। গত প্রায় চার দশক ধরে বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ (Cultural Association of Bengal) এই বার্ষিক কনফারেন্সের আয়োজন করে। ১৯৮১ সালে প্রথম আয়োজিত হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই কলকাতার বা বাংলাদেশের বাঙালি শিল্পীরা সেখানে পৌঁছায়। এবছর ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই আয়োজন করা হয়েছিল বঙ্গ সম্মেলন। তবে তিক্ত অভিজ্ঞতা হল শিল্পীদের। চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও হেনস্থার অভিযোগ তুললেন শিল্পীরা।
এবছরের বঙ্গ সম্মেলনের জন্য আটলান্টাতে পৌঁছেছিলেন একগুচ্ছ সঙ্গীতশিল্পী ও নাট্য ব্যক্তিত্বরা। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী (Pt. Ajay Chakraborty), পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, জয়তী চক্রবর্তী (Jayati Chakraborty), রাঘব চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন তরুণ শিল্পীরাও। অন্যদিকে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চক্রবর্তী, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সোহিনী সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, সৌমিত্র মিত্র, সুজন মুখোপাধ্যায়, সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরাও সেখানে হাজির হয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে আটলান্টাতে উড়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন। তবে প্রায় সকলকেই শিকার হতে হয় হেনস্থার।
মার্কিন মুলুকে যাওয়ার পর থেকেই পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয় শিল্পীদের। এমনকী থাকা- খাওয়ার নিয়েও বিপদে পড়েন তাঁরা। ছোট করে দেওয়া হয় অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, বহু শিল্পীদের পারিশ্রমিক পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও, তাদের ফোনে পায়নি শিল্পীরা। আয়োজকদের পাঠানো পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মেইল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। যেখানে তিনি লেখেন, "অসম্ভব ভুলভাল টাইমিং তো ছেড়েই দিলাম আমি ভাবিনি সেখানে আমাদের জন্য কোনও গাড়ির ব্যবস্থা থাকবে না, দুপুরের খাবার আসবে বিকেল ৪ টের সময়। তাও আমরা বাইরে থেকে খাবার কেনার পর। হোটেলের ঘরে পর্যন্ত ঢুকতে পারিনি আমরা। বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী আমায় এত সম্মান দেন, ভারতের সব থেকে প্রবীণ শিল্পী আমি সেখানে আমায় নিয়ে গিয়ে এমন অপমান! আমি আমার প্রাপ্য টাকাটুকু পাইনি। এবার বলুন আমার কী করণীয়?..."
ফেসবুক লাইভে এসে জয়তী চক্রবর্তী গোটা বিষয়টা বলে, ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি শেয়ার করেন, কীভাবে অসম্মানিত হতে হয় তাঁদের। তিনি বলেন, "আমাদের ৫ তারিখ পর্যন্ত হোটেল বুকিং আছে বলে জানানো হয়েছে কিন্তু আজ সকাল (৪ জুলাই) থেকে আমরা আমাদের ঘরে ঢুকতে পারিনি। বিকেল ৪ টে বেজে গেলেও আমাদের খেতে দেওয়া হয় না। এক পরিচিত খাবার এনে দেওয়ার পর ওঁরা খাবার দেন। আমাদের এক শিডিউল, টাইম বলে নিয়ে আসা হয়েছিল, এখানে এসে পুরোটাই চেঞ্জ করে দেওয়া হয়। আমরা অনেকেই আমাদের নিজেদের ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরে সৌগত দা এসে আমাদের কিছু শিল্পীকে উদ্ধার করেন এই পরিস্থিতি থেকে। আমি আজ নিজের চোখে গুরুজির যে অসম্মান দেখলাম সেটা মানতে পারছি না। আমাদের যে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রাখা হয়েছিল তার দায় কে নেবে?"
প্রসঙ্গত, চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে বহু শিল্পী বঙ্গ সম্মেলন বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। অনেকে জানাচ্ছেন, এর আগেও বিশৃঙ্খলতা হলেও, এবার সব কিছুর সীমা অতিক্রম হয়েছেন। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় বঙ্গ সম্মেলন ২০২৩ নিয়ে আলোচনা এই মুহূর্তে তুঙ্গে। নেটিজেনদের অনেকেই ধিক্কার জানাচ্ছেন গোটা বিষয়টা জেনে।