কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জেলায় জেলায়- হাসপাতালে হাসপাতালে বিক্ষোভ চলছে। সুবিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে, প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কর্মবিরতি চলছে এখনও। শাস্তির দাবিতে মিছিল চলছে কলকাতা থেকে শুরু শহরতলির রাস্তায়। নৃশংসতার প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা, এমনকী রাজ্যে নেওয়া হয়েছে এক কর্মসূচী। এদিন মধ্যরাতে রাত দখলে পথে নামবেন মহিলারা। শত শত মেয়েদের দখলে থাকবে রাতের শহর।
৩১ বছর বয়সী মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুতে সরব সাধারণ মানুষ থেকে তারকারাও। তবে এখনও পর্যন্ত মুখে এঁটেছেন তৃণমূল- কংগ্রেসের সাংসদ- বিধায়কেরা। প্রতিবাদ করে বহু শিল্পীকে কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে। সে তালিকায় রয়েছে শ্রীজাত, অপর্ণা সেনের মতো শিল্পীদের নাম। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবার জানালেন নচিকেতা চক্রবর্তী।
ফেসবুকে নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করলেন সঙ্গীতশিল্পী। ক্যাপশনে লেখেন, 'আমার প্রতিবাদ...'। আরও একবার প্রতিবাদের আগুন ঝরল তাঁর কলমে। নচিকেতা পাঠ করেন, "মা তুমি এসো না, মা দুর্গা তুমি এসো না। এই পৃথিবী আমাদেরই বাসযোগ্য নেই, তোমার হবে কী করে? এখানে ধর্ষিত হয় মানবতা, মানুষ হারিয়ে গভীরতা, নারী সম্মান পথের ধুলোয়, প্রহসন নারী স্বাধীনতা!" শিল্পীর মুখে আরও শোনা যায়, "মা তুমি এসো না,মা তুমি এসো না… পারব না দিতে সম্মান। মেয়েকই দিতে পারিনি! মা এসো না। লক্ষ টাকা খরচ করে তোমায় সাজাই, আরও কত লক্ষ টাকার বসন-ভূষণ। এদিকে আমার মেয়ে বসনহীন হাসপাতালে, আকাশ-বাতাস কালো করে ঘৃণার দূষণ। মা তুমি এসো না…এই বিচারবিহীন পৃথিবীতে। তুমি এসোই না…।"
সোশ্যাল পেজে এভাবে প্রতিবাদ করার পরেই শিল্পীকে কটাক্ষ শুরু করেন নেটিজেনদের একাংশ। এরপর কমেন্ট বক্স সীমাবদ্ধ করেন শিল্পী। অর্থাৎ চাইলেই যে কোনও কেউ সেখানে মন্তব্য করতে পারবেন না। বোঝাই যাচ্ছে, ট্রোলিং এড়াতেই এই পদক্ষেপ নেন নচিকেতা ও তাঁর টিম।
গত মাসেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহানায়ক সম্মানে ভূষিত করেন নচিকেতা চক্রবর্তীকে। শিল্পী এই সম্মান পাওয়ায় প্রশ্ন তোলেন বহু মানুষ। নিন্দুকদের প্রশ্ন করেন, 'একজন সঙ্গীতশিল্পী হয়ে কীভাবে মহানায়ক সম্মান পেলেন নচিকেতা? আবার অনেক বলছেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই, তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল।
এই প্রসঙ্গে, বাংলা ডট আজতক ডট ইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। শিল্পী প্রথমে জানান তিনি খুবই খুশি এই সম্মান পেয়ে। নচিকেতা বলেন, "যে কোনও সম্মান পেলেই তো ভাল লাগে, আমারও খুব ভাল লাগছে। প্রাপ্ত সম্মান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে, কিছুটা বিরক্ত হয়ে শিল্পী বলেন, "নোবেল পুরস্কার যে দেওয়া হয়, সেই নোবেল আসলে একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তাহলে অন্যরা পুরস্কার পেলেন কেন? শুধু তো বিজ্ঞানীদের দেওয়া উচিত ছিল।"
কোনও সঙ্গীতশিল্পী প্রথম মহানায়ক পুরস্কার পেলেন, বলেই কি এত বিতর্ক? প্রশ্নের উত্তরে নচিকেতা বলেন, "বব ডিলানও তো এই পুরস্কার পান, তিনিও তো একজন গীতিকার- সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। ট্রেন্ড সব সময় ভাঙা হয়। এক্ষেত্রেও ট্রেন্ড ভাঙা হল। পরের বার হয়তো একজন আর্ট ডিরেক্টর পাবেন মহানায়ক পুরস্কার। এরকমও তো হতে পারে।" এরপরই নিন্দুকদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন শিল্পী। তাঁর কথায়, "আমার কি বাংলা সংস্কৃতিতে কোনও অবদান নেই? কতগুলো ছাগল এখন চিৎকার করছে! আসলে নচিকেতা পেয়েছে, এটা বড় কথা না। আমার বদলে অন্য কেউ পেলেও এই জিনিসটাই হত। পুরস্কারটা দেওয়া হচ্ছে রাজ্য সরকারের থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন বলেই, সমস্যাটা হচ্ছে অনেকের। আর কোনও সমস্যা নেই।"