৩.৫/ ৫
ছবি: আরআরআর
অভিনয়ে: রাম চরণ, জুনিয়র এনটিআর, আলিয়া ভাট
পরিচালক: এসএস রাজামৌলি
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর, রুপোলী পর্দায় নিজের জাদু নিয়ে ফিরলেন এসএস রাজামৌলি (SS Rajamouli)। 'বাহুবলী' (Bahubali)-র চূড়ান্ত সাফল্যর পর, দর্শকদের প্রত্যাশা পুরণ করা সত্যিই কঠিন ছিল। তা, পরবর্তী ছবির বাজেট যত বড়ই হোক না কেন। রাজামৌলি হয়তো সেটা বুঝেই 'আরআরআর' (RRR) নিয়ে এসেছেন। যেখানে অভিনয় করেছেন দুই প্রথম সারির অভিনেতা রাম চরণ (Ram Charan) এবং জুনিয়র এনটিআর (Jr NTR)।
'আরআরআর'-এর গল্প অন্যান্য যুদ্ধের ড্রামা (War Drama) থেকে আলাদা কিছু না। ব্রিটিশ দম্পতি মিস্টার এবং মিসেস স্কট (রে স্টিভেনসন এবং অ্যালিসন ডুডি) জোর করে একটি শিশুকে তার মায়ের থেকে আলাদা করে, যিনি আদিলাবাদের গোণ্ড উপজাতির অন্তর্গত। ভীম (জুনিয়র এনটিআর) সেই উপজাতির রক্ষক। তিনি, তার উপজাতির কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে, শিশুটিকে উদ্ধার করতে দিল্লি পৌঁছায়। রামারাজু (রাম চরণ) একজন পুলিশ অফিসার, যিনি ব্রিটিশদের হয়ে কাজ করছেন দিল্লিতে। নিজের পদোন্নতির কথা ভেবে, তিনি গোণ্ড উপজাতির সদস্যদের আটকে রাখার প্রস্তাব দেয়। সে কি তার লক্ষ্যে সফল হবে? রামারাজুর অতীত কী? ভীম কি শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারবে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলবে 'আরআরআর' দেখলে।
আরও পড়ুন: ১০ মিটার লম্বা ট্রেইল! নজরকাড়া মিরর ড্রেসে মেট গালার স্মরণ করালেন মনামী
এসএস রাজামৌলি আবারও প্রমাণ করেছেন যে, ছবির মূল গল্প কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনে বড় আকারে থাকার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। তিনি এবং তাঁর বাবা (লেখক) বিজয়েন্দ্র প্রসাদের হাতে একটি শক্তিশালী গল্প ছিল। অত্যাশ্চর্য সেট এবং গায়ে কাঁটা দেওয়া মানবিক দিক এমন ভাবে সাজানো হয়েছে, যা দেখে স্বাধীনতার প্রাগ যুগে ফিরে যেতে পারে দর্শকেরা।
ব্রিটিশরা বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শনের জন্য ভারতীয়দের প্রতি কতটা নির্মম ছিল, তা ফুটে ওঠে ছবিতে। যা সবচেয়ে বেশি আঘাত করে তা হল, আগুন বনাম জলের ধারণা। জুনিয়র এনটিআর - ভীম হল জলের রূপক। তার চরিত্রকে পরিস্থিতি অনুযায়ী 'প্রবাহিত' করতে হবে, যাতে সে শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারে। এদিকে রাম চরণ অর্থাৎ রামারাজুকে জ্বলন্ত শিখার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তার চোখে-মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে ওঠে। 'আরআরআর'-এর প্রথমার্ধে আগুন ও জল যে একেবারে বিপরীতধর্মী, সেই ধারণাকে ফিরে আসে। এই দৃশ্যগুলি অত্যন্ত চতুরভাবে এবং উদ্ভাবনী ভঙ্গিতে দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অভিষেক শেষ শ্যুট করেছিলেন স্ত্রীয়ের সঙ্গে! সোনালী মুহূর্তের সাক্ষী থাকবে 'ইসমার্ট জোড়ি'
রাজামৌলি সব সময় মহাকাব্য, বিশেষ করে রামায়ণ এবং মহাভারতের অনুরাগী ছিলেন। এমনকী 'আরআরআর'-ছবিতেও দেখা যায় কীভাবে তিনি রামায়ণকে মূল্যায়ন করেছেন। রাম চরণ এবং আলিয়া ভাটের চরিত্রগুলি দেখে ভগবান রাম এবং সীতার কথা মনে পড়ে।
রাম চরণ এবং জুনিয়র এনটিআর এই ছবিতে তাঁদের কেরিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স দিয়েছেন। চরণের চরিত্রে আর্ক একটি 'রোলারকোস্টার যাত্রায়' নিয়ে যায় এবং যখন তার আসল গল্প সামনে আসে, তখন তার চোখের রাগ দৃশ্যমান। অন্যদিকে জুনিয়র এনটিআরের চোখ কথা বলে। সে যখন শিশুটিকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা করে, তখন তার চোখ দেখে আপনার মনেও সেই ব্যাকুলতা অনুভব হতে পারে।
আরও পড়ুন: TRP: জোর টক্কর 'মিঠাই'- 'গাঁটছড়া-র'! এই সপ্তাহে বাজিমাত করল কে?
'আরআরআর' একটি নিখুঁত ছবি নয়। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি মাধ্যাকর্ষণ- প্রতিরোধকারী স্টান্ট সিকোয়েন্স রয়েছে যা খুব একটা উত্তেজনা তৈরি করে না। স্টান্ট সিকোয়েন্সের চেয়ে বেশি, আবেগের সংযোগ অনুপস্থিত, যা সবাইকে অস্থির করে তোলে। ছবিটি ৩ ঘন্টা দীর্ঘ এবং বেশ কিছু দারুণ মুহূর্ত রয়েছে, যা আপনাকে পর্দায় আটকে রাখে। তবে এটি একটি অনুমানযোগ্য গল্প যা, আমরা বেশ কয়েকটি যুদ্ধের ছবিতে দেখেছি।
সহ অভিনেত্রীর চেয়ে ক্যামেও চরিত্রে রয়েছেন আলিয়া ভাট, এটা বলা যায়। অন্যদিকে, অজয় দেবগন একটি শক্তিশালী চরিত্র পেয়েছেন। যদিও তার স্ক্রিন টাইম সীমিত, তবুও তা প্রভাব ফেলে।
'আরআরআর' হল জুনিয়র এনটিআর এবং রাম চরণের ছবি। তাঁরা আক্ষরিক অর্থে নিজেদের চরিত্রে দারুণ পাঠ করেছেন এবং ছবিতে সমস্ত উপাদান দিয়েছেন। তা নাচের সিকোয়েন্স হোক বা কঠোর লড়াইয়ের দৃশ্য, এই দুই অভিনেতা কতটা পরিশ্রম করেছেন তা পর্দায় ফুটে ওঠে।
আরও পড়ুন: এপ্রিলেই অনুষ্ঠিত হবে ২৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব!
এই ছবি প্রযুক্তিগতভাবে ভাল। এম এম কিরাভানির সঙ্গীত, সেন্থিল কুমারের সিনেমাটোগ্রাফি, শ্রীকর প্রসাদের সম্পাদনা এবং গ্রাফিক্স একে অপরের পরিপূরক। এই সবকটি একত্রিত হয়ে, পর্দায় আপনি যা দেখেন তা একটি চাক্ষুষ দর্শনের চেয়ে কম নয়। যদিও কিছু ঘাটতি রয়েছে, তবে সব শেষে বলা যায়, 'আরআরআর' হল এমন একটি ছবি, যা বড় পর্দায় দেখার যোগ্য।