আরজি কর-কাণ্ডের পর গোটা শহরের রূপটাই যেন বদলে গিয়েছে। সকলের চেনা কলকাতা এখন প্রতিবাদে মুখর। প্রতিদিনই কোনও না কোনও মিছিল-আন্দোলন হচ্ছে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে বেশ কয়েকজন। তারপরও আন্দোলন থামছে না। আর এরকম পরিস্থিতিতে গায়ক অনিন্দ্য বোস তুলে ধরলেন তাঁর জীবনের কিছু অতীত ঘটনার কথা।
সম্প্রতি শহরের গায়ক অনিন্দ্য বোস ফেসবুকে এমন কিছু কথা পোস্ট করেন, যা সকলকে অবাক করবে। তিনি লেখেন, 'আয়না, কি জানেন, এই গণপ্রতিবাদে অন্তর থেকে সামিল হতে গিয়ে একবার হঠাৎ নিজেকে আয়নায় দেখলাম...। দেখলাম এটাই যে আমিও ধোওয়া তুলসীপাতা নই! এরপরই অনিন্দ্য লেখেন, আমার কাছের নারীদের ওপর আমার তথাকথিত পৌরুষঃএর জোর কখনো না কখনো আমি ফলিয়েছি। দুর্ব্যবহার করেছি, গায়ে হাত তুলেছি...হ্যাঁ, স্বীকার করছি...করেছি। সে আমার মা থেকে শুরু করে বোন, দিদি, মাসি, পিসি, বান্ধবী, স্ত্রী, প্রেমিকা, কন্যা...সবার সঙ্গেই। আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের এই 'পুরুষ'- দের এই সমাজে বেড়ে ওঠাটাই সেরকম!'
অনিন্দ্য এরপর তুলে ধরেন পরিবারের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের মধ্যেকার বিভেদ নিয়ে। যেখানে খাওয়ার পাতে মাছের বড় পিস, গোটা ডিম সবটাই ছেলেদের পাতেই জুটত। অনিন্দ্য বলেন, 'একইসঙ্গে ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই যে প্রশ্ন উঠে আসে তা হল বৈষম্য। কিছু জিনিস কী ভাবে ইনজেকড করে দেওয়া হয় ভিতরে? ‘আমাদের মধ্যে ছোট থেকে ইনজেক্ট করে দেওয়া যে তুমি ছেলে, বহুগামিতা তুমি করতেই পারো। সারারাত বাইরে বেরিয়ে সকালে বাড়ি ঢুকলে একটু মার কিংবা বকুনি আর পাশাপাশি বোনের কোচিং থেকে ফিরতে দেরি হলেই বাপ মায়েদের রক্তচক্ষু, পাড়ার লোকে কী বলবে? এই বৈষম্য আমাদের মধ্যে ইনজেকটেড।'
এরপরই অনিন্দ্য এই পোস্টে নিজের কাছেই প্রশ্ন রেখে বলেন, 'কোনদিন কোন মেয়ের দিকে এক মুহূর্তের জন্যেও কামুক দৃষ্টিতে তাকাই নি? হ্যাঁ তাকিয়েছি তো। হ্যাঁ,পরমুহূর্তেই হয়তো সংযম দিয়ে,ভদ্রতা দিয়ে নিজের সেই প্রবৃত্তি কে প্রশমিত করেছি...কিন্তু তাকিয়েছি তো! মনে মনে কোন মহিলাকে কামনা করে স্বমেহনে লিপ্ত হই নি? অজস্রবার হয়েছি!কন্যাসন্তান হলে মুখভার, অথচ, পুত্র হলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার মতো মুহূর্তে সকলেরই নজর কেড়েছে বারবার। তারই মাঝে হেনস্থার শিকার হওয়ার মতো বহু ঘটনাও উঠে এসেছে।'
কিছুমাস আগেই অনিন্দ্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় তাঁর বন্ধু সিধু তাঁকে সুস্থ করে তোলেন। আসলে আরজি করের ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রেই যেন আত্মউপলব্ধি। শহর-এর অনিন্দ্যর কাছেও তাই। নিজের এই উপলব্ধির মাঝেই স্বীকার করলেন তাঁর করা ভুলগুলিও। আর তাই প্রকাশ্যেই ক্ষমা চাইলেন। শেষের দিকে অনিন্দ্য লেখেন, তাও নিজের সেই যন্ত্রণা বা ঘিনঘিনে অভিজ্ঞতা কে আমল না দিয়ে নিজের আজ পর্যন্ত আমার পরিচিত নারীদের সঙ্গে নানান মাতব্বরি এবং অসভ্যতা করার অপরাধগুলো মাথা পেতে স্বীকার করে নিলাম। আপনারা যদি এই মর্মে আমাকে তিরস্কার করেন, শাস্তি দেন,আমি মাথা পেতে নেবো।