গান ছাড়া মানুষটি জীবনে আর কিছুই চাননি। প্রেমের কথা, ভালবাসার কথা, গ্রাম বাংলার মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা বা ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতার কথা বারেবরাই ঝড়ে পড়েছে যাঁর গানে তিনি বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম (Shah Abdul Karim)। ১৯১৬ সালে আজকের দিনে অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত তথা বর্তমান বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে জন্ম শাহ আবদুল করিমের। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর। সময় যত এগিয়েছে ততই সেই গানকেই জীবনের প্রধান সঙ্গী করে নিয়েছিলেন তিনি।
স্কুলে গিয়েছিলেন ৮ দিন
শাহ আবদুল করিমের জন্ম হয়েছিল হতদরিদ্র এক পরিবারে। ক্ষুধা ছিল সর্বক্ষণের সঙ্গী। আর্থিক কষ্ট থাকায় পড়াশোনাও বিশেষ করে উঠতে পারেননি। শোনা যায় ইংরেজ পরিচালিত এক নৈশ্য বিদ্যালয়ে মাত্র ৮ দিন পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। পরিবারের হাল ধরতে একসময় রাখাল বালকের কাজও করেছেন। কিন্তু পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন নিজের সঙ্গীত সাধনা। নদীর পাড়ে বসে লিখে গিয়েছেন একের পর এক গান, বেঁধেছেন সুরও। সবমিলিয়ে পাঁচশোরও বেশি গান রচনা করেছেন তিনি।
চিরদিন থেকেছেন নির্লোভ
চূড়ান্ত আর্থিক কষ্টের মধ্যেও চিরকাল নির্লোভ থেকেছেন শাহ আবদুল করিম। শোনা যায়, একবার নাকি তাঁর গানের অ্যালবাম থেকে প্রাপ্ত সোয়া তিন লক্ষ টাকা তাঁকে দিতে যাওয়া হলে তিনি নিতে চাননি। বলেছিলেন, এত টাকা তাঁর দরকার নেই। বরং তাঁকে যে সম্মান দেওয়া হচ্ছে তাতেই তিনি খুশি। নিজের গানের মধ্যে দিয়ে চিরদিন একটা আদর্শকে তুলে ধরতে চেয়েছেন শাহ আবদুল করিম। তাঁর সেই আদর্শ ছিল, একদিন এই পৃথিবীটা বাউলের পৃথিবী হবে।
এখনও পর্যন্ত শাহ আবদুল করিমের বেশ কয়েকটি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সঙ্গীতে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে একুশে পদক সম্মানেও ভূষিত করেছে বাংলাদেশ সরকার (Bangladesh Government)। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি থেকেছেন একইরকম বিনয়ী মাটির মানুষ, আর ভালবেসে গিয়েছেন বাউল গানকে। তাই তো তিনি বলে গিয়েছেন, 'যা দিয়েছ তুমি আমায় কী দেব তার প্রতিদান, মন মজালে ওরে বাউলা গান।'
আরও পড়ুন - ২২-এর এই যুবতীকে দেখলে মনে হবে ৮ বছরের শিশু, কেন জানেন?