বৃষ্টি পড়ছে আর তার মধ্যে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে শিবু (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)। সেদিন যে কী কষ্ট পেয়েছিলাম। 'ব্যক্তিগত'-র সাক্ষাৎকারে অভিনেতা-পরিচালক শিবপ্রসাদের সেই 'দুর্দিন'-এর কথা শোনালেন অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। শিবপ্রসাদ ও সোহিনীর বন্ধুত্ব আজকের নয়। সেই কলেজ লাইফ থেকে তাঁরা একে অপরকে চেনেন। নান্দীকার-এ অভিনয়ও করতেন দুজনে। সেই সোহিনীকে নিজের পরিচালনায় প্রথম ছবি 'ইচ্ছে'-তে লিড চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শিবপ্রসাদ। সেই সিনেমাটি রিলিজ করার পর কী হয়েছিল ঠিক সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সোহিনী।
সোহিনী সেনগুপ্ত বলেন,'নান্দীকার-এ থাকার সময় বন্ধু শিবু প্রথম আমাকে তাঁর সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়। বলেছিল, আমি একটা ছবি বানাব। তোকেই করতে হবে। চল 'মোটা' পাঠ করবি। তবে আমাদের সম্পর্কটা এরকমই। ও আমাকে 'মোটা' বলে আমি ওকে 'নাটু' বলি। আমি প্রথমে না বললেও ও বলে তোকেই মানাবে। আমি শিবুর কথা প্রথমে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কারণ শিবু কলেজেও ওরকম ছিল, একটু তারকাটা টাইপের। তারপর ওদের বাড়ি গিয়ে নন্দিতা রায়-এর সঙ্গে আমার মিটিং হয়। আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল যে ইনিই সিনেমা বানাতে পারেন।'
সোহিনী ইচ্ছে সিনেমা তৈরির প্রেক্ষাপট নিয়ে বলেন, 'তখন দেখছিলাম শিবু রাত জেগে ডায়লগ লিখছে, দুর্দান্ত সব ডায়লগ। তারপর পরপর ওদের সঙ্গে আরও কিছু কাজ করি। তবে আমাকে নিয়ে শিবুর লিডে কাজ করতে খুব সমস্যা হয়েছিল। কারণ আমাকে কেউই চায়নি, সবাই বড় নাম চাইছিল। কিন্তু শিবু সেটা পেরেছিল। মনে আছে আমরা সিটি সেন্টারে হল পায়নি। আজও মনে আছে, ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর শিবু বাইরে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছে। ওকে দেখে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল।'
তবে প্রথমে হল না পেলেও পরে লাইন দিয়ে লোক সেই সিনেমা দেখেছিল, জানাতে ভোলেননি সোহিনী। বলেন, 'এই ডামাডোলের মধ্যে দাদুন দা প্রিয়া সিনেমাতে আমাদের সিনেমা রান করতে দেয়। তারপর একদিন শিবু আমাকে ফোন করে বলে তুই কোথায়? আমি কোথাও একটা ছিলাম। শিবু আমাকে বলে তুই তাড়াতাড়ি আয় ভাবতে পারবি না কী হয়েছে। আমি গিয়ে দেখি প্রিয়া সিনেমা থেকে মানুষের লাইন বহুদূর ছাড়িয়ে গেছে। দাদুন দা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলছে, অল ইয়রস।'
ইচ্ছের পর অলীক সুখ, বেলাশেষে, গোত্র, পোস্ত, হামির মতো একের পর এক ছবি নন্দিতা রায়ের সঙ্গে জোট বেঁধে পরিচালনা করেন শিবপ্রসাদ। 'ইচ্ছে'-র সেই শিবপ্রসাদ আর আজকের শিবপ্রসাদের মধ্যে কি কোনও পার্থক্য আছে? উত্তরে সোহিনী বলেন, 'আমার কাছে শিবু আজও আগের মতোই আছে। এখনও দেখা হলেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। ওটাই আমাদের সম্পর্কের কানেকশন। তখন আর দেখিনা আশপাশে কে আছে। এমনও হয় যে শিবু আমাকে ফোন করলে আমি ধরতে পারি না আর ওকে কল ব্যাকও করি না। আর এতেই ও রেগে যায়। তাই আমাকে যদি ও ফোনে না পায়, তাহলে সপ্তর্ষিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, আমি কোথায় গেছি। শিবু এখনও আমার খুবই ভালো বন্ধু, ভালোবাসার লোক।'