বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াইয়ের পর কেটে গেছে প্রায় ৬ মাস। বাংলার চলচ্চিত্র থেকে সাংস্কৃতিক জগৎ হারিয়েছে তাদের বটবৃক্ষকে। তবুও তিনি বেঁচে আছেন বাঙালি তথা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মননে। বন্ধুসম বাবাকে হারিয়ে নতুন করে হাল ধরার চেষ্টায় রয়েছেন সৌমিত্র তনয়া পৌলমী বসু (Poulami Bose)। বাবার পরে মা দীপা চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে গভীর শূণ্যতা তৈরি হয়েছে জীবনে। কিন্তু সকলের প্রিয় 'ফেলুদা' যে বলতেন "কাজ করে যাও...।" তাই সেই পথ অনুসরণ করেই পালিত হবে তাঁর নাটকের দল 'মুখোমুখি' (Mukhomukhi)-র ২৫ বছর। যদিও সেই উদযাপনে বাধ সেধেছে কোভিড অতিমারী (Covid Pandemic)। তাই ভার্চুয়াল মাধ্যমই ভরসা।
আগামী ৩ জুন, বৃহস্পতিবার 'মুখোমুখি'-র রজত জয়ন্তী (Silver Jubilee) পালিত হবে। ফেসবুক লাইভে বিশেষ আলোচনায় ডিজিটাল মাধ্যমেই উপস্থিত থাকবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, কৌশিক সেন, বিলু দত্ত, পৌলমী বসুর মতো নাট্য ব্যাক্তিত্বরা। এই বিশেষ দিনেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বিষয়বস্তু - 'নাট্যের সন্ধানে সৌমিত্র'!
দলের একাধিক নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নিজে সেই নাটকে পাঠ না করলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দর্শক আসনে কিংবা গ্রিন রুমে তাঁকে দেখতে পাওয়া যেত। সেই সঙ্গে সকল অভিনেতাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যেতেন চিরন্তন। আজও সেই স্মৃতি একেবারে তরতাজা পৌলমীর। আজতক বাংলার সঙ্গে সেই স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।
পৌলমী বসু জানালেন, "এবার আমাদের দলের ২৫ বছর হল। বাবা ১৯৯৭ সাল থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর আমি ২০০৩ সাল থেকে যুক্ত হয়েছি। বাবা সব সময়ে বলতেন যে কাজের মধ্যে থাকতে হবে এবং কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা খুব আশা করেছিলাম যে, এইবার বড় করে উদযাপন করবো। পুনে, রাজস্থান, চারিদিক থেকে আমাদের টিম আসার কথা ছিল। সমস্ত কিছু প্ল্যান করা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোভিড পরিস্থিতির জন্য বাতিল করতে বাধ্য হলাম সেই অনুষ্ঠান।"
তিনি আরও যোগ করলেন, "আপাতত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হবে। তবে আমাদের ইচ্ছে ছিল যে, সারা বছর ধরেই কোনও না কোনও ভাবে আমরা এই উদযাপন করবো, যেহেতু 'মুখোমুখি' একটা মাইলস্টোন পেরলো। কিন্তু এখন ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে কী হবে, যতক্ষণ না অবস্থার উন্নতি হয়। কারণ মানুষের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নয়। তবে আরও অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে..."
অন্যান্যবার 'মুখোমুখি'-র এই বিশেষ উৎসবের উদ্বোধন করতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক বছর পাঁচ-সাতদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রায় রোজই উপস্থিত থাকতেন প্রবীণ অভিনেতা। সকলের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি, দলের নবীন সদস্যদের উৎসাহ দিলেন। পৌলমীর কথায়, "বাপি খুব ফ্রেন্ডলি ছিলেন। কখনও 'তারকা সুলভ' আচরণ দেখিনি। যেহেতু সবার সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারতেন। তাই আমার বন্ধুদের সঙ্গেও আড্ডা মারতেন, মজা করতেন। ওঁর উপস্থিতিতে পুরো জায়গাটা ঝলমল করতো। প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু শিখতাম বাপির থেকে। কখনও বিরক্ত না হয়ে, উল্টে ধৈর্য ধরে সব উত্তর দিতেন। এই বছর কোনটাই আর হবে না... "