বিখ্যাত অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে হিসাবে নয়, বরং অভিনয়ে এসেছিলেন এই পেশার প্রতি ভালোবাসার টানেই। টলিউডের শীর্ষ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। যিনি নিজেকে বিভিন্ন চরিত্রের খাতিরে কখনও গড়েছেন আবার কখনও বা ভেঙেছেন। ভার্চুয়াল যুগে দাঁড়িয়েও শাশ্বত ব্যবহার করেন না কোনও মোবাইল ফোন। আর তাঁর পেশাগত দিকটির দেখাশোনার জন্য নেই কোনও ম্যানেজারও। বরং বহুবছর ধরে শাশ্বতর স্ত্রী অভিনেতার ব্যক্তিগত দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি পেশাগত দিকটিও সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করে চলেছেন। অনেকেই চেনেন আবার অনেকেই চেনেন না শাশ্বতর স্ত্রীকে। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর নাম মহুয়া চট্টোপাধ্যায়।
মহুয়ার সঙ্গে বিনোদন জগতের কোনও যোগাযোগই নেই। তিনি গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে একেবারে দূরে। তবে অভিনেতাদের স্ত্রীদের পার্টিতে বা চা-চক্রে মহুয়াকে অহরহ দেখা যায়। পেশায় মহুয়া একজন শিক্ষিকা। এখন তিনি কলকাতার নামী স্কুলের একজন সিনিয়র টিচার। এর পাশাপাশি তিনি ব্লগও করেন। শাশ্বতর সঙ্গে মহুয়ার আলাপ যদিও নাটকের সূত্রেই। চার্বাক গোষ্ঠীতে অভিনয় করার সময় আর এক নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রততী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির চা চক্রে আলাপ হল এক তরুণীর সঙ্গে। যিনি নাকি শিক্ষিকাদেরও শিক্ষিকা! কিন্তু আলাপে অপেক্ষা করে ছিল বিস্ময়। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর, কিন্তু কথাবার্তার মধ্যে নেই অনাবশ্যক ইংরেজি শব্দ। এটাই প্রথম আলাপে সবথেকে ভাল লেগেছিল।
যদিও মহুয়ার শাশ্বতকে প্রথম আলাপে মোটেও ভালো লাগেনি বলেই এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন অভিনেতার স্ত্রী। প্রথম আলাপে বন্ধুত্ব হয়, তারপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান। তারপর কফি শপ, নাটক পেরিয়ে একদিন সম্পর্ক পৌঁছেই গেল ছাদনাতলায়। মহুয়া জানান যে তিনি যেহেতু বরাবরই মোটাসোটা ছিলেন তা নিয়ে মজা করতে ছাড়তেন না শাশ্বত। যদিও অভিনেতা জানিয়েছেন যে পাত্রীকে দেখে নয় বরং মহুয়ার বাবাকে দেখে শাশ্বতর পছন্দ হয়েছিল বলেই এই বিয়েতে রাজি হন। কারণ শাশ্বতর শ্বশুরমশাই দারুণ মাই ডিয়ার মানুষ অভিনেতার মতে।
তবে বিয়ের পর মহুয়ার কোনও ধারনাই ছিল না যে একজন অভিনেতার জীবন বা কাজের ব্যস্ততা কেমন হয়। কারণ বিয়ের পর পরই শাশ্বতকে শ্যুটিংয়ের জন্য আউটডোরে যেতে হত তাই সেই সময়গুলো খুব মন খারাপের মধ্যে দিয়েই কাটতো তাঁর। অন্য দিকে নতুন বউকে বাড়িতে রেখে আর এক জনেরও খারাপ লাগত। পরে অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছে সবকিছুই। শাশ্বতর সঙ্গে প্রথম আলাপের সময় মহুয়া ছিলেন বিএড কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষিকা। এখন তিনি কলকাতার নামী স্কুলের একজন সিনিয়র টিচার। তবে জানালেন, তাঁর থেকে শাশ্বত অনেক বেশি অর্গানাইজড। তিনি অগোছালো, নির্দ্বিধায় জানান মহুয়া।
শ্বশুর এবং স্বামী দু’জনেই অভিনেতা। শাশ্বতর স্ত্রীর কি কখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ইচ্ছে হয়েছে? মহুয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে সেই ইচ্ছা তাঁর কোনওদিনই হয়নি। তাঁর বরং মনে হয়, দু’জনের একসঙ্গে অভিনয় পেশায় থাকলে সংসারের বাঁধন থাকে না। তাই তিনি খুশি নিজের জীবনেই। তবে স্বামীর সঙ্গে পেজ থ্রি পার্টি, ছবির প্রিমিয়ার, ঘরোয়া আড্ডাতে সমানভাবে অংশ নেন তিনি। কিছুদিন আগেই যিশু সেনগুপ্তের স্ত্রী নীলাঞ্জনা সহ আরও অভিনেতা-পরিচালকদের স্ত্রীদের সঙ্গে লাঞ্চে গিয়েছিলেন মহুয়া। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাও গিয়েছে। শাশ্বত-মহুয়ার একমাত্র মেয়ে হিয়া মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। নিজের একটা বুটিকও আছে তাঁর।