অভিনেত্রী হিসাবে তাঁর কদর টলিউড ছাড়িয়ে বলিউডেও সুদূর প্রসারী। তাঁর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছুই থাকে না। সব ছবিতেই তাঁর চরিত্র নতুন করে দর্শকদের নজর কাড়ে। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় নিজের আলাদা স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চূর্ণী বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। বলিউডেও অভিষেক হয়ে গিয়েছে অভিনেত্রী। আর সেই চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় মারাত্মক এক অভিযোগ নিয়ে আসলেন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।
মিটু বিতর্ককে উস্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন চূর্ণী। অভিনেত্রী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে জানিয়েছেন যে তিনি শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। নারীর প্রতি যৌন নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটা ঘটনার কথা সকলের সামনে নিয়ে এলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’। এদিন চূর্ণী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লেখেন, 'আজ প্রায় ৬ বছর আগের একটি খুব ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মনে করছি। তাতে লেখা ছিল, আমি হয়তো ছোটো ছিলাম, কিন্তু আমি ভুলে যাইনি। #MeToo’ ….'।
এরপরই চূর্ণী তাঁর সঙ্গে ঘটা ছোটবেলার সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে লেখেন, 'আমার ভিতরে লম্বা সময় ধরে এই কান্না জমে আছে, শিশু নির্যাতনের শিকার আমি, নীরব থেকেছি। একজন তার বেড়ে ওঠা বছরগুলিতে চুপ থেকেছে কারণ সে প্রকাশ্যে এই সত্যিটা বলতে পারেনি। সেই অপরাধী স্বাভাবিকভাবেই শাস্তি পায়নি। তবে আমি আজ বিশ্বাস করতে চাই, কর্মফল সে ভুগবেই। কিন্তু আমি এখনও তার তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অন্তত এটা সে করতে পারে। আমাকে যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সারা জীবনের ক্ষত যা আমাকে সহ্য করতে হয়েছে তার জন্য ক্ষমা তো চাওয়াই উচিত। আমি তার নাম নিতে পারব না এই ভেবে সে হয়তো আরাম করছে। এবং ঠিক এটাই তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীর থেকে সুবিধা নিতে বাধ্য করেছে.. যে তাঁর সারাল্যের জেরে তখনও পৃথিবীটাকে চিনে উঠতে পারেনি।' অতীতের সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি হাতড়ে অভিনেত্রী আরও লেখেন, ‘আমার মনে আছে আমি বিভ্রান্ত ছিলাম, এবং পুরোপুরি অবিশ্বাসের মধ্যে ছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি পারতাম ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতাম… গলা শুকনো এবং একটি ভারী হৃদয় নিয়ে, সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি বিধ্বস্ত থাকতাম এবং ভয়ে কাঁপতাম কারণ আমার নিষ্পাপ মন তাঁকে বিশ্বাস করেছিল’।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই পোস্ট? কিছুদিন আগেই সুমন মুখোপাধ্যায়ের নতুন সিরিয়াল নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন দামিনী বেণী বসু। পরিচালকের টিনের তলোয়ার নাটকে সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়কে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। আর সেই কারণেই থিয়েটারে মেয়েদের নিরাপদ স্থান পাওয়া নিয়ে বেণী বসুর একটি পিটিশনে সই করতে গিয়ে চূর্ণী দেখেন যে তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। আর সেই কারণেই অভিনেত্রী সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁর সঙ্গে হওয়া এই ভয়ানক ঘটনার কথা তিনি প্রকাশ্যে আনবেন। তিনি লেখেন, ‘আজকের এই পোস্টটি আমার স্বাক্ষর হতে দিন। শুধু থিয়েটারে নিরাপদ স্থানের জন্য নয়, বরং সমাজে বড় আকারে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানের জন্য। পারলে আপনার গল্প শেয়ার করুন, যখন পারেন। তাহলেই এই ধরনের গুরুতর অপব্যবহারগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এটি নিরাময়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপও। আজ, আমি যেভাবে এই ঘটনা শেয়ার করে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ’।
তবে এই ঘটনা এখনও ভোলেননি চূর্ণী। এত বছর পরও সেই ক্ষতটা দগদগে রয়েছে। চূর্ণী অপেক্ষায় রয়েছেন অপরাধীর ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য। চূর্ণী তাঁর পোস্টেই জানিয়েছেন যে সেই অপরাধী এখনও বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিনেত্রী তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন যে হয়ত সেই অপরাধীর যৌন বিকৃত স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছে। তবে চূর্মীকে তার ভালোমানুষির অভিনয় আজও ক্রুদ্ধ করে তোলে। এই পোস্ট সেই সেই নির্যাতনকারীর কাছেও পৌঁছাবে বিশ্বাস তাঁর। চূর্ণীর আশা সেই মানুষ রূপী পশু নিশ্চয় বুঝবে, তিনি ছোট থাকতে পারেন, তবে কোনওকিছু ভোলেননি। চূর্ণী তাঁর পরিচালক-স্বামীর কৌশিকের কাছে কিছুই লুকিয়ে রাখেননি। কৌশিক স্ত্রীর এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।