বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের এক মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। মমতা শঙ্কর বর্তমানে মেয়েদের শাড়ি পরা নিয়ে মন্তব্য করেন এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে। আর তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই টলিউড এখন দ্বিধাবিভক্ত। টলি পাড়ার একাধিক অভিনেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে সরবও হয়েছেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়েছেন মমতা শঙ্করের পাশে আবার কারোর মতে শ্রদ্ধেয় শিল্পীর এমন মনোভাব মোটেও ঠিক নয়।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী
অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীও মমতা শঙ্করের মন্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখ খুলেছেন। তবে তাঁর পোস্ট শিল্পীকে সমর্থন করেই লেখা। সুদীপ্তা চক্রবর্তী কারোর নাম না নিলেও তাঁর লেখায় স্পষ্ট তিনি কী নিয়ে কাকে নিয়ে কথা বলেছেন। সুদীপ্তা লেখেন, ‘হেডলাইন দেখে পুরোটা বুঝে গেছি ভাবা টা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে আমাদের। ধৈর্য্য জিনিসটা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে!! কি বলছি, কাকে বলছি, কার সম্পর্কে বলছি, কিভাবে বলছি --- সেই মাত্রাবোধ ও বিলুপ্ত প্রায়!!’ সুদীপ্তার পোস্টে এটা স্পষ্ট ছিল যে মমতা শঙ্করের মন্তব্যকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। সুদীপ্তার পোস্টে কেউ কেউ সহমত পোষণ করলেও অনেকে বিরোধিতাও করেছেন।
রূপাঞ্জনা মিত্র
মমতা শঙ্করের শাড়ি পরা মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছেন আর এক অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্রও। তাঁর পোস্টে ক্ষোভের গন্ধ। তিনিও কারোর নাম না নিয়েই ফেসবুকে লিখেছেন, মেয়েরাই আসলে মেয়েদের শত্রু'। তিনি লেখেন, ল্যাম্পপোস্ট বা খুঁটিগুলো এই শহর বা পৃথিবী থেকে অনেক আগেই তুলে দেওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয় কারণ আবার প্রমাণিত হল যে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু।
শ্রীলেখা মিত্র
মমতা শঙ্করের পোস্ট নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত জানাতে ভোলেননি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। ফেসবুকে মমতা শঙ্করের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি ফেসবুকে লেখেন, মমতা শঙ্করকে ট্রোল করার আগে উনি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন সেটা বোঝা উচিত। একই সঙ্গে শ্রীলেখা লিখেছেন, আমি নিশ্চিত উনি লাইসেন্সড যৌনকর্মীদের অসম্মান করতে চাননি।
তসলিমা নাসরিন
মমতা শঙ্করের মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিয়া তসলিমা নাসরিন দীর্ঘ পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তসলিমা লেখেন, আমি কখনও শাড়ির আঁচল বুকের মাঝখান দিয়ে নিই না। বক্ষযুগলের ওপরেই থাকে আমার শাড়ির আঁচল। কিন্তু বক্ষযুগলকে আঁচল দিয়ে যারা আড়াল করতে না চায়, তাদের এই না-চাওয়াকে কেন অশালীন বলা হবে? কোন যুক্তিতে?’’ শাড়ি হোক বা বোরখা, তিনি যে মহিলাদের পোশাকের উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধী তা নিজের লেখায় স্পষ্ট করেছেন তসলিমা। মমতা শঙ্করের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘বাংলার নামী নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর মেয়েদের শালীনতা বজায় রাখতে বলেছেন, তা না হলে পুরুষেরা মেয়েদের খারাপ ভাববে— এই যুক্তি দিয়ে। যে পুরুষেরা মনে করে মেয়েদের শালীনতা নির্ভর করে মেয়েরা কাপড়চোপড় দিয়ে শরীর কতটা ঢাকল তার ওপর, সেই পুরুষদের তিরস্কার না করে মমতা শঙ্কর তিরস্কার করছেন মেয়েদের। তিরস্কার করে তিনি যে পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক— সেটাই প্রমাণ করলেন। শুনেছি তিনি সমকামিতাকে, এবং রূপান্তরকামিতাকেও তিরস্কার করেন।
মমতা শঙ্করের মন্তব্য
ঠিক কী বলেছিলেন মমতা শঙ্কর? সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মমতা শঙ্করের সামনে প্রশ্ন রাখা হয় নতুন প্রজন্মের নারীদের সাজ নিয়ে তাঁর কী ভাবনাচিন্তা? সেই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না! ঠিক বুঝতে পারি না। আগে যাঁদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যাঁরা ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা ওই ভাবে দাঁড়াতেন।’’ এরই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে মহিলাদের কাজ করতে গিয়ে হয়তো আঁচল সরে যেত। তাতে কোনও দোষ ছিল না। আর ওঁরা (যৌনকর্মী) তো পেশার তাগিদে পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য ও ভাবে শাড়ি পরে থাকেন। আর এই মন্তব্য ঘিরেই তোলপাড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়া সহ টেলি পাড়াতেও।