প্রথমবার কোনও নন-ফিকশন শোতে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে হয়েছে 'দিদি নম্বর ১'-র বিশেষ পর্বের শ্যুট। মমতা অতিথি হয়ে নাকি প্রতিযোগী হয়ে হাজির থাকবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। সেই জল্পনার কিছুটা সমাধান হয়েছে। টলিপাড়ার সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, 'প্রতিযোগী' নয়, 'বিশেষ অতিথি' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিযোগী ছিলেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী ও শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী ৩ মার্চ, রবিবার রাত ৮টায় এই বিশেষ পর্বটি সম্প্রচারিত হবে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা রসিকতা - আড্ডার মেজাজে শ্যুট করেন তিনি। এই মুহূর্তে প্রায় গোটা রাজ্যবাসী মুখিয়ে আছে এই বিশেষ পর্বের দিকে। কী কী করলেন তিনি? রইল সবিস্তারে।
সম্প্রতি চ্যানেলের তরফে প্রকাশ্যে এসেছে প্রথম প্রোমো। একদম শুরুতে শোয়ের সঞ্চালিকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যাচ্ছে, "এই প্রথমবার 'দিদি নম্বর ১'-র অনুষ্ঠানে আসছেন বাংলার দিদি নম্বর ওয়ান, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।" এরপর তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নিতে গেলে রচনা। কিন্তু মমতা সেটা রচনার হাত দিয়ে নিয়ে উল্টে তাঁকেই পরিয়ে দিয়ে বলেন, "এটা তোমাকেই শোভা পায়। তুমিই আসলে দিদি নম্বর ১।" লাজুক হেসে রচনা প্রণাম করেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
মুখ্যমন্ত্রীকে রচনা জিজ্ঞেস করেন, "তোমার ছোটবেলা কেমন কেটেছিল...?" উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে শেয়ার করেন মেয়েবেলার গল্প। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এত ছোটবেলায় বাবা- মা মারা গেছে, তখন সংসারটা আমাকেই মেইনটেইন করতে হয়েছে। তখন আমার ১০-১১ বছর বয়স...। আমি রাত ৩টের সময় উঠে রান্নাবান্না করে, তারপর স্কুলে যেতাম। আমার ছোটবেলাটা হারিয়ে গেছে...।"
এদিন মঞ্চে ছিলেন আদিবাসী শিল্পীরা। সেখানে তাঁদের সঙ্গে ধামসা বাজালেন মমতা। শুধু তাই নয়, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত ধরে নাচতেও দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। ইন্ডাস্ট্রির সূত্র বলছে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শৈশব থেকে বর্তমান সময় তাঁর জীবনসংগ্রামের নানা গল্প শুনিয়েছেন সকলকে। এমনকী রাজ্যে মহিলাদের উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেন। এদিনের পর্বে পলাশ ফুলের ছবি আঁকেন মুখ্যমন্ত্রী। নাচের পাশাপাশি তিনি গান গেয়েছেন। এছাড়া, তাঁর লেখা এবং সুর-দেওয়া গান গেয়ে শোনান শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইন্ডাস্ট্রির সূত্র আরও বলছে, মমতা রচনাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি রুটি বেলা সংক্রান্ত কোনও খেলা খেলতে পারবেন না। তবে নাচ- গান-কবিতা নিয়ে পারফর্ম করতে পারবেন। রুটি বেলা সংক্রান্ত একটি রাউন্ড ছিল এদিন। যেখানে অংশ নিয়েছিলেন ডোনা-অরুন্ধতী ও শ্রীরাধা। শোনা যাচ্ছে, ডোনার বেলা রুটিই নাকি গোলাকৃতিতে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। তবে মমতা এই রাউন্ডে অংশ না নিলেও, রচনাকে বলেন রুটি বেলে দেখাতে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ ফেলেননি রচনার। যদিও এর পরে মমতাও রুটি বেলে দেখিয়েছেন।
হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে হয়েছে 'দিদি নম্বর ১'- শ্যুট। নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাতে জানে কোনও ফাঁক না থেকে তা নিয়ে সকলেই তৎপর ছিলেন। মুখ্য়মন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিটিং ডেকেছিল রাজ্যের ডিরেক্টর সিকিউরিটি। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বেষ্টনীতেই শ্যুটিং হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জি বাংলার নন-ফিকশন শো 'দিদি নম্বর ১' বাংলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে সকলের প্রিয়। জনপ্রিয় এই শোয়ের সিজন ৯ চলছে এখন। অন্যান্য সিজনের মতোই এবারও হিট শোয়ের সঞ্চালিকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগের ৮ টি সিজনের মধ্যে ৫ টি সিজনের সঞ্চালিকা ছিলেন রচনা। প্রথম সিজনে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়। এছাড়া সিজন ৩ -এ জুন মালিয়া এবং সিজন ৫-এ দেবশ্রী রায়কেও সঞ্চালিকা হিসাবে দেখা গেছে। শেষ সিজনটিতে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা প্রয়াত হওয়ার পর, তিনি কয়েকদিনের বিরতি নেন। সেই সময় সুদীপা চট্টোপাধ্যায় এবং সৌরভ দাস সেই দায়িত্ব সামলেছেন। তবে 'দিদি নম্বর ১' মানেই রচনাকে সবচেয়ে বেশি কাছের করে নিয়েছেন দর্শকেরা।