বড় পর্দায় জুটি বাঁধতে চলেছেন অঙ্কুশ হাজরা (Ankush Hazra) ও প্রিয়াঙ্কা সরকার (Priyanka Sarkar)। এবার এক মুসলিম দম্পতির চরিত্রে দেখা যাবে তাঁদের। শৈবাল মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আসছে নতুন ছবি 'কুরবান' (Qurbaan)। জীবনের নানা রকম ওঠানামায় মানুষকে যে কী কী করতে হয়, সেই কথা বলবে এই ছবি। প্রকাশ্যে এল ছবির প্রথম চরিত্র লুক। একেবারে ভিন্ন লুকে দেখা গেল দুই অভিনেতাকে।
অঙ্কুশ- প্রিয়াঙ্কা ছাড়াও ছবিতে রয়েছে একঝাঁক টলিপাড়ার চেনা মুখ। অভিনয় করছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মৌ ভট্টাচার্য, সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়, সুব্রত গুহ রায়ের মতো শিল্পীরা। পরিচালনার পাশাপাশি 'কুরবান'-র গল্প লিখেছেন শৈবাল নিজেই। সঙ্গীত পরিচালনা করবেন রাজা নারায়ণ দেব। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্ব সামলাবেন রূপাঞ্জন পাল।
মনুষ্যত্বের গল্প বলবে 'কুরবান'। কথা বলবে হাসানের। কেমন হবে ছবির গল্প? সবুজ গ্রামের প্রেক্ষাপটে সহজ সরল হাসান ও হিজলের সংসার। অন্যদের থেকে একটু বেশিই যেন আবেগপ্রবণ হাসান। এর কারণ হয়তো, তার আব্বা -আম্মি ও আম্মির হিন্দু সই - তার মাসি। একনজরে হাসানের সংসার বড়ো সুখের মনে হয়। টলোমলো পায়ে দাওয়ায়, ঘরে, উঠোনে, ঘুরে বেড়ায় তাদের মিষ্টি ছেলে হাসু, মাসির আদরের গোপাল।
হাসান বাকি সকলের থেকে অনেকটা অন্যরকম। তার চিন্তা- ভাবনাও ভিন্ন। যেমন সে বিশ্বাস করে - ছিপ দিয়ে মাছ ধরা আসলে বিশ্বাসঘাতকতার অন্য নাম। কারণ নিমন্ত্রণ করে ডেকে তাদের মারা হয়। জীবনের শেষ লড়াই করার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। জীবন হাসানকে আলাদা ভাবে দেখে, সেও জীবনকে। হাসানের কথায়, ব্যবহারে কিসের যেন একটা ইঙ্গিত ধরেও ধরতে পারেনা হিজল। হাসান বিশ্বাস করে 'শুধু ভালোবাসাই মানুষের ধর্ম...!'কিন্তু এরপর ঠিক কোন দিকে এগোয় গল্প, সেই তথ্য ধীরে ধীরে আরও পাওয়া যাবে।
অঙ্কুশ জানালেন, "কুরবান-এ আমার হাসান চরিত্রটা অত্যন্ত গভীর। আমার কেরিয়ারে এরকম চরিত্রে অভিনয়, আমি কখনও করিনি। সাধারণভাবে আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিনোদনমূলক চরিত্রে অভিনয় করেছি। যেমন, নাচ- গান- ডায়লগবাজি। এগুলো আমি ভীষণ এনজয়ও করেছি। মানুষও পছন্দ করেছে। তবে সত্যি বলতে, এরকম খুব কম চরিত্রই করেছি যেটা পরে গিয়েও আমায় ভাবিয়েছে বা নিজে খুব ইমোশনালি চরিত্রটার সঙ্গে জড়িয়ে গেছি। আমার নিজেকে খুব এফেক্ট করেছে, সেরকম চরিত্রে অভিনয় আমি কোনও দিন করিনি। সেই অর্থে হাসান চরিত্রটা আমায় অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। এই চরিত্রের লুক, গভীরতা, আবেগ সবটাই আমার মধ্যে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। এই চরিত্রটা আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং সেই অর্থে। হোমওয়ার্ক লেগেছে, তবে খুব ভাল লেগেছে কাজটা করে।"
প্রিয়াঙ্কার কথায়, "কুরবান-র গল্প- চিত্রনাট্যের সংবেদনশীলতা প্রথমেই আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। ছবির বিষয়বস্তু, চরিত্রগুলোর গঠন, সবটাই এমন, যা সচরাচর দেখা যায় না। রামপুরহাটেরও অনেকটা ভিতরে রিয়েল লোকেশনে, সেই আমেজে শ্যুট করেছি বলেই আমার মনে হয় কাজটা আরও ভাল হয়েছে।"
তিনি যোগ করেন, "অঙ্কুশ আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেতা। 'বিবাহ অভিযান' ও 'আবার বিবাহ অভিযান'-এ আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। যেভাবে ও চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলে সেটা সত্যিই প্রশংসা করার মতো। তবে এত গভীর একটা চরিত্র, সেটা ও কীভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, সেটা দর্শকেরা দেখলেই বুঝতে পারবে।"
শৈবাল মুখোপাধ্যায় জানালেন, "সিনেমার জন্য গল্প লিখতে গিয়ে চরিত্র অনুযায়ী কিছু মুখ ভেসে ওঠে। হাসানের চরিত্র চিত্রণের যেমন প্রথমেই অঙ্কুশের সেনসিটিভ চোখ দুটো ভেসে উঠেছিল। দেখতে পেয়েছিলাম মাথায় বড় চুল, একগাল এলোমেলো দাড়ি নিয়ে স্নিগ্ধ, স্থির, গভীর হাসানকে। একইভাবে হিজলকে খুঁজে পাই প্রিয়াঙ্কার মধ্যে। গ্রামের একটি সুন্দর, অল্প বয়সী, প্রাণবন্ত, মুসলিম বৌ, যে তার নিজের কথা বলতে পারে। যার নিজের স্বপ্নের জগৎ আছে। ভাগ্যবশত গল্প শোনার পর ওরা দুজনেই ছবিটা করতে রাজি হয়ে যায়। এরপর শ্যুটিং-এ, চরিত্র চিত্রণে সেটা আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যখন হাসান, হিজল, তাদের চরিত্রের ইনভল্ভেমেন্টে এতটাই বাস্তব হয়ে ওঠে যে, ফ্লোরে অঙ্কুশ ও প্রিয়াঙ্কার জায়গায় আমরা হাসান ও হিজলের সঙ্গে শ্যুটিংয়ের দিনগুলোয় ছিলাম বলে মনে হয়।"
পরিচালক আরও বলেন, "হাসান হিজল ছাড়াও, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুভদ্রা মুখোপাধ্যায় সকলের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রেই আমরা একই অভিজ্ঞতাপূর্ণ হই। 'কুরবান'-র শ্যুটিংয়ে চরিত্রগুলো তাদের ব্যাক্তিসত্তার থেকে চরিত্রসত্তায় একাত্ত হয়। ব্যাক্তিগতভাবে ওঁদের সবার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক সমৃদ্ধ হই। আমার বিশ্বাস ছবিটা দেখতে গিয়ে তার প্রতিফলন আপনারা নিজেরাও পর্দায় দেখতে পাবেন।"