বাংলা জীবনমুখী গান মানেই যার কথা সবার আগে মাথায় আসে, তিনি হলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। নয়ের দশকের তাঁর সব গান আজও হিট। বয়স নির্বিশেষে নচিকেতার গান থাকে সব সময় বাঙালি শ্রোতাদের প্রিয় প্লে-লিস্টে। নচিকেতা, একাধারে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে মন জয় করেছেন অসংখ্য মানুষের। সঙ্গীত জগতের পাশাপাশি অভিনয় ও ছোট পর্দায় সঞ্চালনাও করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে আলোচনায় সঙ্গীতশিল্পী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর নাম। আসলে সম্প্রতি নচিকেতার মুকুটে যোগ হয়েছে নতুন পালক। আর তারপর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা চর্চা।
২৪ জুলাই ছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবস। এই বিশেষ দিনে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। এদিন বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মহানায়ক’ সম্মান প্রদান করা হয় শিল্পীদের। হাজির ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই। শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহানায়ক সম্মানে ভূষিত হন নচিকেতা চক্রবর্তী। শিল্পী এই সম্মান পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি অনুগামীরা। তবে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনদের একাংশ। নিন্দুকদের প্রশ্ন, 'একজন সঙ্গীতশিল্পী হয়ে কীভাবে মহানায়ক সম্মান পেলেন নচিকেতা? আবার অনেক বলছেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই, তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল।
এই প্রসঙ্গে, বাংলা ডট আজতক ডট ইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। শিল্পী প্রথমে জানান তিনি খুবই খুশি এই সম্মান পেয়ে। নচিকেতা বলেন, "যে কোনও সম্মান পেলেই তো ভাল লাগে, আমারও খুব ভাল লাগছে। প্রাপ্ত সম্মান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে, কিছুটা বিরক্ত হয়ে শিল্পী বলেন, "নোবেল পুরস্কার যে দেওয়া হয়, সেই নোবেল আসলে একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তাহলে অন্যরা পুরস্কার পেলেন কেন? শুধু তো বিজ্ঞানীদের দেওয়া উচিত ছিল।"
কোনও সঙ্গীতশিল্পী প্রথম মহানায়ক পুরস্কার পেলেন, বলেই কি এত বিতর্ক? প্রশ্নের উত্তরে নচিকেতা বলেন, "বব ডিলানও তো এই পুরস্কার পান, তিনিও তো একজন গীতিকার- সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। ট্রেন্ড সব সময় ভাঙা হয়। এক্ষেত্রেও ট্রেন্ড ভাঙা হল। পরের বার হয়তো একজন আর্ট ডিরেক্টর পাবেন মহানায়ক পুরস্কার। এরকমও তো হতে পারে।" এরপরই নিন্দুকদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন শিল্পী। তাঁর কথায়, "আমার কি বাংলা সংস্কৃতিতে কোনও অবদান নেই? কতগুলো ছাগল এখন চিৎকার করছে! আসলে নচিকেতা পেয়েছে, এটা বড় কথা না। আমার বদলে অন্য কেউ পেলেও এই জিনিসটাই হত। পুরস্কারটা দেওয়া হচ্ছে রাজ্য সরকারের থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন বলেই, সমস্যাটা হচ্ছে অনেকের। আর কোনও সমস্যা নেই।"
প্রসঙ্গত, ২৪ জুলাইয়ের মঞ্চে শিল্পীর সঙ্গে মজার কথোপকথন হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "শুধু একটা রিকোয়েস্ট থাকবে একটু খাওয়া-দাওয়া করতে বলুন তো। একদম খায়-দায় না, দেখুন চেহারাগুলো কী হয়েছে সব। খাওয়া-দাওয়াটা করতে হবে। আমি খাওয়া-দাওয়া করি ঠিক মতো, আমি তো ইচ্ছে করেই কমিয়েছিল। কিন্তু নচিকেতা কমাতে কমাতে এমন জায়গায় করেছে যে তার কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু ভাল থাকতে হবে একটু। আমি বলেছি তুমি যদি খাওয়া-দাওয়া না কর তাহলে তোমার বাড়িতে গিয়ে হানা দেব এবারে।"