শিরোনামে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি। এই মুহূর্তে কার্যত দু'ভাগ টলিপাড়া। ফেডারেশনের (Federation of Cine Technicians & Workers of Eastern India) বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন পরিচালক- প্রযোজকরা। তাঁদের দাবি না মানলে, সঠিক সমঝোতা না হলে, সোমবার থেকে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাংলার পরিচালকেরা। শনিবার স্টুডিওপাড়ায় একসঙ্গে এই ঘোষণা করেন বড় পর্দা ও ছোট পর্দার পরিচালকেরা। মঙ্গলবার বহাল টলিউড ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক- প্রযোজকদের কর্মবিরতি। এরই মাঝে বড় খবর। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মধ্যস্থতায় সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে হাজির হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee), দেব (Dev) ও গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh)। এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও (Arup Biswas)। সূত্রের খবর এদিন ৪০- ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়। সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে বলেই আন্দাজ করা যাচ্ছে দেবের করা ট্যুইট থেকে।
অভিনেতা- প্রযোজক তথা সাংসদ দেব নবান্ন থেকে একটি ছবি ট্যুইট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, "ধন্যবাদ দিদি। আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে। আগামীকাল থেকে আবার শ্যুটিং শুরু হবে। ধন্যবাদ সকল টেকনিশিয়ান, প্রযোজক, পরিচালক এবং স্টেকহোল্ডারদের।" এখন টলিপাড়ার ভবিষ্যৎ ঠিক কী, তা সময়ই বলবে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনও স্তব্ধ ছিল টলিপাড়া , বন্ধ ছিল শ্যুটিং। সোমবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক, পালটা বৈঠকের পরও কাটেনি টলিপাড়ার অচলাবস্থা। ফেডারেশনের সঙ্গে এই সমস্যা মেটাতে সোমবার দুপুরে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এক দফার বৈঠক হয় পরিচালক ও প্রযোজকদের। এরপরই পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশন। যেখানে সংগঠনের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ষড়যন্ত্র করে শ্যুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকী ফেডারেশনের তরফে পরিচালকদেরই কাঠগড়ায় তোলা হয়। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, সিদ্ধান্তেই অনড় থাকবে ফেডারেশন।
এদিকে ফেডারেশনের এই বার্তা শুনে রাতে ফের সাংবাদিক বৈঠক করে ডিরেক্টর্স গিল্ড (Directors Association Of Eastern India)। তাঁরা 'নিরপেক্ষ' তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। বাংলার পরিচালকদের তরফ থেকে বার্তা আসে, তাঁরা কাজ বন্ধের পক্ষে নয় এবং কাজ বন্ধ করেননি। শুধু তাই নয়, টলিপাড়ায় এই অচলায়তন পরিস্থিতির জন্য নিয়মের বেড়াজালকেই দায়ী করেন তাঁরা। পরিচালকেরা সাফ জানান, এই গোটা বিষয়টা আর একজনের অপমানের উপর দাড়িয়ে নেই। এতদিনে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত হয়ে গিয়েছে। পরিচালকেরা বলেন, সিনে-ইন্ডাস্ট্রি একটা পরিবার এবং এই দ্বন্দ্বকে ‘টেকনিশিয়ান বনাম পরিচালক’ সংঘাতের তকমা দিতে যখন নারাজ তাঁরা। উল্টে একটা মধ্যস্থতায় আসার আবারও দাবি করেন তাঁরা।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এবং টেকনিশয়ানরা যে আলাদা, সেটা আজ প্রথম জানলাম। এখানে আমরা-ওরা এই তত্ত্ব নিয়ে নয়, সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে একজোট হয়েছি। সেখানে স্লোগান থাকবে না!" অঞ্জন দত্ত বলেন, "রাহুল মুখোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে যে সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছিল, সেটা আজকে ৪০০ জন পরিচালকের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।" রাজ চক্রবর্তী বলেন, "আমরা কাজ বন্ধ রাখছি না। আমরা কাজ বন্ধ করিনি। এখন মুখ্যমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে আমরা কাজ বন্ধ রাখছি বোঝানো হলে, তা সম্পূর্ণ ভুল হবে। আমাদের ফ্লোরে না ঢুকে কাজ বন্ধ করানো হয়েছে।" অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমি অ্যালিগোরিকালি বলছি, এতদিন আমাদের জ্বর হলে দোকান থেকে টপ করে ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলতাম। সেরকম বহুবার সমস্যার জন্যে তাৎক্ষণিক সমাধান হয়েছে। কিন্তু এখন এই জ্বর বারবার হচ্ছে। এবার আমরা একটা ডাক্তার চাইছি, প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিকের একটা লম্বা কোর্স করতে চাইছি।"
প্রসঙ্গত, সোমবার পরিচালক ও প্রযোজকদের পাশে দাঁড়ায় সিনে ভিডিও অ্যান্ড স্টেজ সাপ্লায়ারস ওয়েলফেয়ার অ্য়াসোসিয়েশন (Cine Video & Stage Suppliers Welfare Association)। সমস্যা মেটাতে মধ্যস্থতা করতে রাজি হয়েছে আর্টিস্ট ফোরাম (West Bengal Motion Picture Artist Forum)। এদিকে ইম্পার (Eastern India Motion Picture Association/ EIMPA) দাবি শ্যুটিং শুরু হোক।