উত্তরপ্রদেশে ও বিহারে গঙ্গা থেকে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই তদন্তে নেমেছে দুই রাজ্যের প্রশাসন। একইসঙ্গে ওইগুলি স্থানীয় কারও দেহ নয় বলেও দাবি করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এই বিতর্কের মাঝে গোটা ঘটনা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
এই ঘটনার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই প্রসঙ্গে আইসিএমআর-এর চেয়ারম্যান বলরাম ভার্গব জানাচ্ছেন, ভাইরাসের বেঁচে থাকার জন্য জীবিত মানব শরীর চাই। যদি মানব শরীর মৃত থাকে, তাহলে তার মধ্যে ভাইরাসের বেঁচে থাকা বা বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা খুবই কমে যায়। তাঁর মতে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, তবে সতর্ক থাকা উচিত। আর গঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে জলের যা অবস্থা তা আছমন করার যোগ্যও নয়, সেক্ষেত্রে স্নান বা পান করা তো অনেক দূরের বিষয়।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে বলেন, এখনও পর্যন্ত করোনা নিয়ে যে সমস্ত গবেষণা হয়েছে তাতে জানা গিয়েছে রোগটি জলবাহিত হয়। আর যদি ভাইরাস জলে মিশেও থাকে তাহলেও কারও ওপর তার কোনও প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও বলেন, অনেক নালা নর্দমার জলও গঙ্গায় পড়ে। আর বিদেশে যেমন হয়, এখানেও সেই একই ভাবে প্রতি সপ্তাহে ও প্রতি মাসে জলের ভাইরাল লোড পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে যদি গঙ্গায় ভাইরাস প্রবাহিত হয়ও, তাতেও নদীর পাশে থাকা মানুষজন বা নদীতে আছমন করতে যাঁরা আসছেন তাঁদের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করেন অধ্যাপক চৌবে।
অন্যদিকে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়েরই গঙ্গা রিসার্চ সেক্টরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডিপি ত্রিপাঠী বলেন, কিছুদিন আগে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে গঙ্গায় মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। সেগুলি করোনায় মৃতদের দেহ বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। অনেক সময় অন্যান্য রোগে মৃতদের দেহও গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওযা হয়। এমনকী মৃত প্রাণীদের দেহও ভাসানও হয় গঙ্গায়। কিন্তু এতে গঙ্গার দল দূষিত হয়। এক্ষেত্রে করোনায় মৃতদের দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করেন তিনি। একইসঙ্গে মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, যে সমস্ত জায়গায় গঙ্গায় দেহ পাওয়া গিয়েছে সেই সব এলাকায় আপাতত নদীতে স্নান বন্ধ রাখা হোক। কারণ এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁর।
পাশাপাশি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের প্রাক্তন মেডিক্যাল সুপার ওপি উপাধ্যায় বলেন, করোনায় মৃতদের দেহ গঙ্গায় ভাসানো জঘন্য অপরাধ। তাঁর আবেদন এই ধরনের কাজ যেন না করা হয়। কারণ এতে পরিবেশ ও নদী দূষিত হচ্ছে। ছড়াতে পারে সংক্রমণও। এছাড়া যে সমস্ত প্রাণীরা গঙ্গার জল পান করে তাদেরও ক্ষতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, গঙ্গা সাফাই অভিযানে বিগত তিন-চার দশকে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
এদিকে ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজয় রাঘবন আজতককে জানান, স্রোতের জলে দেহ ভাসলে তাতে কোনও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তবে বদ্ধ জলে যদি লাশ দেখা যায় তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে এরই মাঝে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ট্যুইট করে জানান, 'গঙ্গা নদীতে দেহ ভাসার ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এবং তা বন্ধ করতে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'