দেশে করোনা টিকারকরণ শুরু হয়েছে। আর এখন নয়া সমস্যা টিকার ঘাটতি। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম। আর তার প্রভাব পড়ছে সরবরাহে। বিভিন্ন রাজ্যে অভিযোগ উঠছে, তারা পর্যাপ্ত টিকা পাচ্ছে না। এর মাঝে সরকার পরিকল্পনা করছে, দু'টি ভিন্ন রকমের টিকা দেওয়ার।
ন্যাশনাল টেকনিক্য়াল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই)-এর চেয়ারম্যান ডাঃ এন কে অরোরা জানাান, ভারতে দু'টি ভিন্ন ধরনের টিকার ডোজ দেওয়া হতে পারে। দেখা যাক, এর ফলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে কিনা।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক, বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্য়ালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীদের জন্য টিকার একটি ডোজ যথেষ্ট।
সেখানকার প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে জানিয়েছেন, আমরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষ এবং আক্রান্ত হননি এমন মানুষের ওপর টিকার ফলাফল বিশ্লেষণ করেছি। করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের দেহে প্রথম সপ্তাহেই অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে। অন্যদিকে, করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ডোজের পরই তা তৈরি হচ্ছে। করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীদের সিঙ্গল ডোজ দিয়ে আমরা টিকা ঘাটতি মেটাতে পারি।
বিশিষ্ট চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, টিকার ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই সবাইকে সিঙ্গল ডোজ দিতে প্রাথমিক ভাবে নিরাপত্তা দিয়ে তারপর দ্বিতীয় ডোজের কথা ভাবা যেতে পারে।
তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রকমের করোনার টিকা রয়েছে। করোনার টিকার দু'টো ডোজ দিলে কার্যকারিতা বাড়ছে। তবে এখন যেহেতু সরবরাহ কম, উৎপাদন কম, তাই সিঙ্গল ডোজ হলেও দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা তলছে। দেশের সব মানুষকে সিঙ্গল ডোজ দেওয়া আর কিছু মানুষকে ডবল দেওয়া, এই দুটোর মধ্যো তুলনা করলে, সিঙ্গল ডোজ দেওয়ার দিকেই হাঁটা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যদি বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবি, একটা ডোজ দেওয়ার পর কোভিড হলেও হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যুর হার, আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। কয়েকটা গবেষণাতেও তা দেখা গিয়েছে। ব্যবধান আরও বাড়ালে, তা বাড়িয়ে ৯ মাস থেকে ১২ মাস করি, কার্যকারিতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সিঙ্গল ডোজ দিলে দিলে মোটামুটি কাজ হচ্ছে। তাই বেশি লোককে নিরাপত্তা দিয়ে তারপর সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে। আলাপ-আলোচনা চলছে। নতুন যে গবেষণা আসছে, সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কোভিশিল্ড ৩ মাসে ব্যবধানে দিলে বেশি উপকার পাওয়া যাচ্ছে, দেখা গিয়েছে গবেষণায়।
ভিন্ন মত দিয়েছেন অনেকে। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার মহামারী বিশেষজ্ঞ, কর্নাটক সরকারের কোভিড টাস্ক ফোর্সের পরামর্শদাতা অধ্যাপক গিরিধর বাবু বলেন, না, এটা মোটেই ভাল কোনও পথ নয়। সিঙ্গল ডোজে মৃত্যুর হার কমছে, গুরুতর অসুস্থতা কমছে এমন কোনও পরিসংখ্যান নেই।
একই কথা শুনিয়েছেন টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের অধিকর্তা সি এম প্রমেশ। তাঁর কথায়, এমন কোনও তথ্য নেই যাতে বলা যায় কোভিড থেকে কোভিশিল্ডের একটি ডোজ কার্যকর হচ্ছে।