দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনা। আর পাল্লা দিয়ে সেই ইস্যুতে বাড়ছে রাজনীতিও। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের হেঁটেছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ঝাড়খন্ডের মতো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। এদিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে লকডাউনকে শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহারে আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন নিয়ে কার্যত মোদীর বিপরীত অবস্থান নিয়েছে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি।
মঙ্গলবারের ভাষণে মোদী বলেন, 'এই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশকে লকডাউন থেকে বাঁচাতে হবে। আমি রাজ্যগুলিকে আবেদন জানাচ্ছি যে তারা যেন লকডাউনকে অন্তিম বিকল্প হিসেবেই ব্যবহার করে। লকডাউন এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভীষণ চেষ্টা করতে হবে। মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনে গুরুত্ব দিতে হবে।' মোদী সাফ জানিয়েদেন দেশব্যাপী লকডাউন জারি করা হবে না।
দিল্লিতে এক সপ্তাহের লকডাউন
ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক রাজ্য লকডাউনের পথে হেঁটেছে। তারপরেই লকডাউন এড়ানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য দিল্লিতে সপ্তাহান্তের কারফিউয়ের পরেই শুরু হয়েছে লকডাউন। আর দিল্লির পর লকডাউন নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে আরও কয়েকটি রাজ্য সরকার।
রাজস্থানে ১৫ দিনের লকডাউন
রাজস্থানেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে ১৫ দিনের লকডাউন করেছে রাজ্য সরকার। ১৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাকি সবই বন্ধ থাকছে। রাজ্যের সীমানাগুলিতে কড়াকড়ি করা হয়েছ। একইসঙ্গে যাঁরা বাইরে থেকে আসবেন তাঁদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর রিপোর্ট দেখিয়ে রাজ্যে ঢুকতে হবে।
ঝাড়খন্ডে ১ সপ্তাহের লকডাউন
লকডাউনের পথে হেঁটেছে ঝাড়খন্ডও। সংক্রমণ ঠেকাতে ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধিন মহাগটবন্ধনের সরকার। মঙ্গলবার লকডাউন ঘোষণা করার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবই বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যে করোনা চেন ভাঙা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই রাজ্যে 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা সপ্তাহের' জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে খোলা থাকবে ধর্মীয় স্থান। কিন্তু ভিড় যেন না হয় এবং সমস্ত বিধি যেন পালন করা হয় সেই আবেদন জানানো হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে সম্পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ
মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতর দিকে নজর রেখে কড়া লকডাউনের সুপারিশ করেছে উদ্ধব ঠাকরের ক্যাবিনেট। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাবিনেট লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে ২১ এপ্রিল রাত ৮টা থেকে কড়া লকডাউন লাগু করা হবে। যদিও সেই ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করবেন। তিনি আরও বলেন, সমস্ত মন্ত্রীরাই লকডাউনের কথা বলেছেন। মন্ত্রী আসলম শেখ বলে, রাজ্যে মেডিক্যাল অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটা হয়েছে। এই বিষয়ে শীঘ্রই গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে।
লকডাউন এড়াচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্য
একদিকে যখন লকডাউনের পথে হাঁটছে অ-বিজেপি রাজ্যগুলি, তখন লকডাউন এড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। এক্ষেত্রে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা সরকারও জানিয়ে দিয়েছে যে লকডাউন করা হবে না। তবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের বেশকিছু শহরে কড়াকড়ি করা হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে করোনা কারফিউ।
মোদী বনাম বিপক্ষ
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী লকডাউনকে অন্তিম বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু একাধিক আদালত লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছে। নবাব মালিক আরও বলেন, মানুষ আশা করেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক, গরীব ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য কোনও ত্রাণের প্যাকেজ ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেসের কটাক্ষ, মোদীর 'জ্ঞানের' মানে এটাই যে তাঁর আর কিছুই করার নেই, মানুষ নিজের প্রাণ নিজেই বাঁচান। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার ট্যুইটে কটাক্ষ, 'রাত্রি ৮টা ৪৫ মিনিটে জ্ঞানের সারমর্ম, আমার আয়ত্বে আর কিছুই নেই যাত্রীরা নিজেদের জিনিসপত্র অর্থাৎ প্রাণ নিজেরাই রক্ষা করুন।' আরও এক কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সারমর্ম হল, 'মানুষকে নিজেদেরই নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি তাতে রক্ষা পান, তাহলে কোনও উৎসব বা মহোৎসবে নিশ্চয় দেখা হবে। ততক্ষণের জন্য শুভকামনা। ইশ্বর আপনাকে রক্ষা করুন।' এক্ষেত্রে লকডাউন নিয়ে মোদী ও বিরোধীদের মধ্যে রাজনীতি তীব্র হচ্ছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।